নিজেস্ব প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা পরেও নতুন করে তৈরি হচ্ছে জঙ্গিবাদি। সদ্য সমাপ্ত জাতীয় সংসদের নির্বাচনে পাকিস্তানের দালালরা পর্যদুস্ত হলেও নতুন করে দানা বাঁধবার স্বপ্ন দেখছে তারা। ইতিপূর্বে একাধিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের তার পেছনে রয়েছে পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই। বিএনপি ও জামায়াত তাদেরই এজেন্ট হিসাবে কাজ করছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক সংস্থা অতীতেও মন্তব্য করেছে।
বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান আইএসআইয়ের এজেন্ট হিসাবেই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। তার ছেলে তারেক রহমানও এখন বিদেশে বসে পাকিস্তানিদের সাহায্যে বাংলাদেশকে ফের অশান্ত করার চেষ্টা করছে।
বাংলাদেশকে অশান্ত করার চেষ্টা অবশ্য বহুদিনের। বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলে তা প্রকট চেহারা নেয়। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকেও হত্যার ষড়যন্ত্র হয়েছিল সেই সময়ে। গ্রেনেড হামলার ঘটনা ছিল তারেক জিয়ার কীর্তি। ২০০৫ সালে জেএমবির ৬১টি জেলায় একযোগে বোমা বিস্ফোরণের মাধ্যমে গোটা দেশে নতুন করে জঙ্গিবাদের আত্মপ্রকাশ ঘটে। ২০১৬ সালের ১ জুলাইয়ে গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারি রেস্তোরাঁয় ৫ জঙ্গিসহ ২৯ জনের প্রাণহানি ঘটনায় ধরা পড়ে জঙ্গিবাদের বিষদাঁত কতটা ভয়ঙ্কর। তবে দেশনেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সরকার প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর জঙ্গিবাদকে কড়া হাতে দমন করা শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গোটা দেশে প্রায় ২ হাজার মামলা দায়ের হয়েছে জঙ্গিবাদীদের বিরুদ্ধে। নয় হাজারেরও বেশি জঙ্গি ধরা পড়েছে। জেএমপি, নব্য জেএমবি, আনসার আল ইসলাম, হরকত-উল প্রভৃতি সংগঠনের বিষ দাঁত উপড়ে ফেলা হয়েছে। শাস্তি পাচ্ছে জঙ্গিবাদী ও তাদের মদদদাতারা। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর রীতিমতো পরিকল্পনা করে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হয়। সন্ত্রাসবিরোধী আইন প্রণয়ন ও সংশ্লিষ্ট আইনের সংশোধনের মাধ্যমে জঙ্গিবাদীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে থাকে আওয়ামী লীগ সরকার। কিন্তু বিএনপি ও জামায়াত তাদের সমানে মদদ জুগিয়ে চলেছে। কিছু বিদেশি শক্তিও মদদ দিচ্ছে। মৌলবাদীদের মাধ্যমে ফের সক্রিয় হওয়ার গোপন চেষ্টা চালাচ্ছে জঙ্গিবাদীরা। জনগণ থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে তারা ফের আঘাত হানতে চাইছে দেশের শান্তির পরিবেশে।
বিভিন্ন গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, মাদ্রাসাগুলো হয়ে উঠছে জঙ্গিবাদ তৈরির কারখানা। তাই মাদ্রাসাগুলোতে সরকারকে আরও কঠোর নজরদার চালাতে হবে। এছাড়াও বাইরে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদেরও অনলাইনে জঙ্গিবাদে উৎসাহিত করা হচ্ছে। বিদেশ থেকে বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাল প্রচারণার মাধ্যমে যুবকদের বিভ্রান্ত করতে একটি চক্র বেশ সক্রিয়। তাই অবিলম্বে নজরদারি বাড়াতে হবে। পাকিস্তানে বসে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকেও বিকৃত করার চেষ্টা চলছে। তাই ডিজিটাল মাধ্যমে অপপ্রচার রোধেও সরকারকে নিতে হবে কড়া ব্যবস্থা। অশুভ শক্তিকে পরাস্ত করে ফের ক্ষমতায় ফিরে আত্মতুষ্টির কোনও জায়গা নেই আওয়ামী লীগের জন্য। কারণ একাত্তরে পরাজয়ের পর পাকিস্তানের যেমন প্রতিশোধ স্পৃহা বিন্দুমাত্র কমেনি, তেমনি বিএনপি-জামায়াত জনগণ থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়েও ফের অশান্তি বাধানোর চেষ্টা জিইয়ে রয়েছে। অর্থ পাচার, মানব পাচার ইত্যাদির সঙ্গে যুক্তরাও জঙ্গিদের গোপনে অর্থের জোগান দিয়ে চলেছে। নিষিদ্ধ জঙ্গি গোষ্ঠীগুলি তাদের পুরনো পরিচয়কে কাজে লাগিয়ে মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে নতুন নতুন সংস্থার নামে অর্থ ও প্রশিক্ষণ আদায় করছে। আবার কিছু কিছু জঙ্গিগোষ্ঠী জাকাত ফান্ডের মাধ্যমেও তাদের অর্থের জোগান ঠিক রাখতে সক্ষম রয়েছে। তাই সরকারকে প্রতিনিয়ত নজর রাখতে হবে সন্দেহভাজনদের কাজকর্মের ওপর। বিএনপির জ্বালাও পোড়াও রাজনীতি সাধারণ মানুষ বাতিল করে দিলেও বিদেশি অর্থের জোগান পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। সেই অর্থের বিনিময়েই চলছে বাংলাদেশকে অস্থির করার চেষ্টা।
হিযবুত তাহারীর, খেলাফত আন্দোলন, খেলাফত মজলিসসহ বিভিন্ন জঙ্গিবাদী সংগঠন সম্পর্ক জামায়াত দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত। যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, জেএমবি বা হরকাতুল জিহাদের মতো সংগঠনগুলো আসলে জামায়াতের পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত হয়। আর জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির সখ্যতাই তারেক জিয়াদের জঙ্গিবাদের সঙ্গে সুসম্পর্কের বড় প্রমাণ। অনেকেই মনে করেন, বাংলাদেশে প্রগতিশীল এবং মুক্ত গণতান্ত্রিক চর্চার পক্ষে একটি বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে জামায়াত এবং মৌলবাদী সংগঠনগুলো। এদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। জঙ্গিবাদীদের মদদ জোগাচ্ছে বিভিন্ন মৌলবাদী সংগঠন। ইসলামের অপব্যাখ্যার মাধ্যমে তারা বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে চায়। সাম্প্রদায়িক অশান্তির আগুনে নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করতেই বিএনপির নেতারা তাদের মদদ জুগিয়ে চলেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বহুবার বলেছেন, ‘বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ’। তার বাবা, জাতিরপিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও বিশ্বাস করতেন অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে। তার আদর্শেই পরিচালিত হয় আওয়ামী লীগ। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভও এসেছে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় ভর করে। কিন্তু বিএনপি মৌলবাদীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার মূল ভিত্তিতেই আঘাত করতে চায়। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ কিছুতেই তা মেনে নিতে নারাজ। তাই শত প্ররোচনাতেও মানুষ অশান্তি চাইছেন না।
সম্প্রতি নির্বিঘ্নে পালিত হয়েছে হিন্দুদের সরস্বতী পূজা। কোথাও কোনও অপ্রীতিকর ঘটনার খবর নেই। শেখ হাসিনা বিশ্বাস করেন, ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’। সেটাই ফুটে উঠেছে গোটা বাংলাদেশে। ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে সক্রিয় রয়েছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা। তাই কোথাও কোনও অপ্রীতিকর ঘটনার আগাম আভাস পেলেই তারা ঝাঁপিয়ে পড়ছেন। সংখ্যালঘুরা আজ নিশ্চিন্তে বসবাস করতে পারছেন আওয়ামী লীগের শাসনামলে।
ক্ষমতায় এসেই জননেত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছিলেন, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি নেবেন। তিনি কথা রেখেছেন। দেশীয় বা আন্তর্জাতিক কোনো জঙ্গিগোষ্ঠীই আজ আর বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করে নিজেদের জাল বিস্তৃত করতে পারে না। নিরাপত্তা বাহিনীর কড়া নজরদারি এবং জিরো টলারেন্স নীতির হাত ধরে শান্তি বিরাজ করছে গোটা বাংলাদেশে। তবে ষড়যন্ত্র বন্ধ হয়নি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষ স্থিতিশীলতার পক্ষে রায় দিলেও পাকিস্তানের দোসররা চাইছেন অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে। ধর্মীয় মৌলবাদীদের কাজে লাগিয়ে চলছে জঙ্গিবাদকে জাগিয়ে তোলার ষড়যন্ত্র। এর বিরুদ্ধে লড়াই কিন্তু জারি রাখতেই হবে। তবেই সার্থক হবে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন।