দক্ষিণ কোরিয়ায় ডাক্তারদের ধর্মঘটের কারণে এক নারীর মৃত্যু নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। ডাক্তারদের চলমান ধর্মঘটের কারণে ওই নারীকে বহন করা অ্যাম্বুল্যান্সটি বেশ কয়েকটি হাসপাতালে জায়গা পায়নি। এটিকে ডাক্তার ধর্মঘটের সঙ্গে যুক্ত প্রথম মৃত্যু বলে ধরা হচ্ছে। জরুরি বিভাগে কর্মী কম থাকায় চাপের মধ্যে রয়েছে হাসপাতালগুলো। অপারেশন স্থগিত এবং রোগীদের অন্য হাসপাতালে স্থানান্তর করতে হচ্ছে বলে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
গত শুক্রবার ডেজন শহরের প্যারামেডিকরা ওই নারীকে নিয়ে সাতটি হাসপাতাল ঘুরেছিল, কিন্তু কর্মী ও শয্যার অভাবের কারণে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। অবশেষে তাঁকে একটি পাবলিক ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, কিন্তু ৬৭ মিনিট পরেই তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। জানা গেছে, কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে আক্রান্ত হয়ে অ্যাম্বুল্যান্সের মধ্যেই তিনি মৃত্যুবরণ করেছিলেন। এর পরেই সরকারি কর্মকর্তারা ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দেন। খবরটি দক্ষিণ কোরিয়ার সংবাদমাধ্যমেও ব্যাপকভাবে প্রকাশিত হয়েছে। সরকার মেডিক্যাল স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ানোর ঘোষণার প্রতিবাদে দুই-তৃতীয়াংশ আবাসিক ও ইন্টার্ন চিকিৎসক প্রতিবাদে পথে নামে। সরকার বলছে, ইন্টার্ন ও আবাসিক ডাক্তারদের কর্মবিরতির ফলে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে।
তাই তাদের ফেব্রুয়ারির শেষ নাগাদ কাজে যোগদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মেডিক্যাল স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্তের পেছনে যুক্তি ছিল- দেশে বয়স্ক লোকের সংখ্যা বাড়ছে, এ কারণে বেশি ডাক্তারের প্রয়োজন পড়বে। এদিকে বিক্ষোভরত তরুণ ডাক্তারদের ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাজে ফেরার আলটিমেটাম দিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার। অন্যথায় এর গুরুতর ফল ভোগ করতে হবে তাদের। নিরাপত্তামন্ত্রী লি সাং-মিন পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হয়ে পড়ছে বলে মনে করেন। তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতির গভীরতা বিবেচনা করে সরকার তাদের কাছে শেষ আবেদন করছে। যদি ২৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাজে ফেরেন, তাহলে এখন পর্যন্ত যে পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে তার জন্য আপনাদের দায়ী করা হবে না।’ তিনি বলেন, ‘রোগীদের পাশে থাকলে, আন্দোলনকারীদের কথা শোনা হবে। অন্যথায় মেডিক্যাল লাইসেন্স তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হতে পারে বলে জানা গেছে।’ এদিকে সিনিয়র ডাক্তার ও প্রাইভেট প্র্যাকটিশনাররা বিক্ষোভে যোগ না দিলেও, তারা সরকারের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে সমাবেশ করেছে। তবে দক্ষিণ কোরিয়ার জনগণের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এই উদ্যোগকে সমর্থন করেছে। একটি সাম্প্রতিক জরিপে এই ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। রাষ্ট্রপতি ইউন সুক ইওল এই প্রস্তাবের নেতৃত্ব দেন। এর লক্ষ্য চিকিৎসা শিক্ষার প্রসার, পরিষেবা উন্নত করা এবং ডাক্তারদের উদ্বুদ্ধ করা। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সমালোচকদের যুক্তি হলো, সরকারের উদ্দেশ্য রাজনৈতিক। বিশেষ করে সাধারণ নির্বাচন সামনে রেখে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে চিকিৎসাব্যবস্থায়।