স্বাধীনভাবে বিচারকাজ পরিচালনা করতে হলে বিচারককে মন-মননে স্বাধীন হতে হবে। স্বতন্ত্র বজায় রাখতে হবে। দেড় দশকের বিচারিক জীবনের শেষ কর্মদিবসের বিদায় অনুষ্ঠানে এ উপলব্ধি তুলে ধরেন আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি বোরহান উদ্দিন। সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে ৬৭ বছরের বেশি বিচারক পদে থাকার সুযোগ নেই। সে হিসাবে মঙ্গলবারই ছিল বিচারপতি বোরহান উদ্দিনের শেষ কর্মদিবস। সে উপলক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে তাঁকে বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হয়। আপিল বিভাগের এক নম্বর বিচারকক্ষে কক্ষে অনুষ্ঠিত সংবর্ধনায় অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির এ বিচারপতির ব্যক্তিগত ও পারিবারিক পরিচিতি তুলে ধরেন। সেই সঙ্গে বিচারক হিসেবে তাঁর নিষ্ঠা, দক্ষতাসহ বিচারিক জীবনের বিভিন্ন দিকও তুলে ধরেন তাঁরা। সংবর্ধনায় বিচারপতি বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘বাংলাদেশের সংবিধান দেশের সর্বোচ্চ আইন। নির্বাহী বিভাগ, আইনসভা এবং বিচার বিভাগ একে অপরের পরিপূরক হলেও বিচার বিভাগের দায়িত্ব সংবিধানের অভিভাবক হিসাবে অনন্য।’
তিনি বলেন, ‘কোনো আইন সংবিধানের সাথে অসামঞ্জস্য কিনা তা দেখার অধিকার বিচার বিভাগের আছে। সেই সঙ্গে নির্বাহী বিভাগের কোনো কার্যকলাপ সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হলে তা দেখার ক্ষমতাও বিচার বিভাগকে দেওয়া হয়েছে। এই কারণেই বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অপরিহার্য।’ নিজের উপলব্ধি তুলে ধরে বিচারপতি বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘সুশাসন এবং আইনের শাসন সমার্থক। সুশাসন তথা আইনের শাসন নিশ্চিত করে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা। স্বাধীনভাবে বিচারকাজ পরিচালনার জন্য বিচারককে মন-মননে স্বাধীন হতে হবে। এই কারণে বিচারককে নিজেদের স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে হবে। দেশের খেটে খাওয়া দরিদ্র মানুষকে নিজের স্বজন উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘তাদের প্রত্যেকের জীবনে সুখ আসুক, স্বাচ্ছন্দ আসুক। দেশের প্রতিটি ছেলে-মেয়ে শিক্ষার আলো পাক, প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উঠুক, জ্ঞান বিজ্ঞানে আলোকিত মানুষ হোক এ আমার সারা জীবনের চাওয়া। দেশের সম্পদ লুণ্ঠনকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নিলে খেটে খাওয়া মানুষ বাঁচার পথ করে নিতে পারে।’ বিচারপতি বোরহান উদ্দিনের জন্ম ১৯৫৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি করার পর ১৯৮৫ সালের ৩ মার্চ অধস্তন আদালতের আইনজীবী হন। এররপর ১৯৮৮ সালের ১৬ জুন হাইকোর্ট বিভাগ এবং ২০০২ সালের ২৭ নভেম্বর আপিল বিভাগে আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। ২০০৮ সালের ১৬ নভেম্বর বোরহান উদ্দিন হাইকোর্ট অতিরিক্তি বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান । দুই বছর পর ২০১০ সালের ১১ নভেম্বর তা স্থায়ী হয়। ২০২২ সালের ৯ জানুয়ারি বিচারপতি বোরহান উদ্দিনকে আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।