গভীর সাগরে নোঙর করা মাদার ভেসেল (বড় জাহাজ) থেকে লাইটারেজে (ছোট জাহাজ) করে না নিয়ে পাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল খালাসের জন্য সরকার সাত হাজার ১২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। এ প্রকল্পের অংশ হিসেবে কক্সবাজারের কুতুবদিয়ার অদূরে গভীর সমুদ্রে নির্মাণ করা হয় ভাসমান জেটি। প্রকল্পটি ছয় মাস আগে উদ্বোধন করা হলেও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে জ্বালানি তেল পরিবহন সম্ভব হয়নি। ‘ইনস্টলেশন অব সিঙ্গল পয়েন্ট মুরিং উইথ ডাবল পাইপলাইন’ শীর্ষক এ প্রকল্পের অংশ হিসেবে নির্মাণ করা হয়েছিল ভাসমান জেটি ‘সিঙ্গল পয়েন্ট মুরিং’। আগামীকাল বৃহস্পতিবার এই সিঙ্গল পয়েন্ট মুরিং থেকে পতেঙ্গায় ইস্টার্ন রিফাইনারিতে প্রথমবারের মতো সমুদ্রের তলদেশে স্থাপন করা পাইপলাইনের মাধ্যমে ডিজেল পাঠানো হবে। প্রায় ১১০ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইনে ৬০ হাজার টন ডিজেল পাঠাবে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। ফলে এ খাতে বছরে ৮০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে বলে জানিয়েছেন বিপিসির কর্মকর্তারা। জানা গেছে, জার্মানির একটি বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে চায়না পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কম্পানি এই প্রকল্পের কাজ করে। গত বছরের জুলাই মাসে এভাবে তেল খালাসের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু ক্রুড অয়েল খালাস শুরু হলে পাইপলাইনসহ প্রকল্পে বেশ কিছু ত্রুটি ধরা পড়ায় তা আর সম্ভব হয়নি। পরে ত্রুটি সারিয়ে ১ ডিসেম্বর সৌদি আরব থেকে আমদানি করা ৮২ হাজার টন ক্রুড অয়েলবাহী জাহাজকে বঙ্গোপসাগরে স্থাপিত ভাসমান জেটিতে ‘সিঙ্গল পয়েন্ট মুরিং’-এ বার্থিং দেওয়া হয়। জাহাজটি ক্রুড অয়েল খালাস করে চলে যাওয়ার এক দিন পরই আরেকটি জাহাজ ৬০ হাজার টন ডিজেল খালাস করে। এত দিন সিঙ্গল পয়েন্ট মুরিংয়ে থাকা ক্রুড অয়েল ও ডিজেল পাইপলাইনের জটিলতায় ইস্টার্ন রিফাইনারিতে আনা সম্ভব হয়নি। ইস্টার্ন রিফাইনারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ লোকমান বলেন, গত ডিসেম্বরে সাগরে ভাসমান মুরিং থেকে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ দুটি পাইপলাইনে মহেশখালীর স্টোরেজ ট্যাংক টার্মিনালে ডিজেল এবং ক্রুড অয়েল পরিবহন করা হয়েছিল। ট্যাংক টার্মিনাল থেকে সাগরের তলদেশ দিয়ে ৯৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের দুটি পাইপলাইন পৌঁছেছে চট্টগ্রামের ইস্টার্ন রিফাইনারিতে। এই ৯৪ কিলোমিটার পাইপলাইনে জ্বালানি তেল পরিবহনের ক্ষেত্রে সব সময় ১২ হাজার টন তেল লাইনে থেকে যাবে। মহেশখালীর স্টোরেজ ট্যাংক টার্মিনাল থেকে পাম্প করে চট্টগ্রামের ইস্টার্ন রিফাইনারিতে ৬০ হাজার টন ডিজেল পাঠাতে সময় লাগবে প্রায় ১৭ ঘণ্টা। এই লাইনে পরিবহন ক্ষমতা প্রতি ঘণ্টায় ৯০০ ঘনমিটার। প্রকল্পটির পরিচালক শরীফ হাসনাত বলেন, ‘দীর্ঘদিন এই স্টোরেজ ট্যাংক টার্মিনালে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের ইস্টার্ন রিফাইনারিতে ডিজেল পাম্প করার পরিকল্পনা রয়েছে। কোনো ত্রুটি না হলে ৬০ হাজার টন ডিজেল পাঠানো হবে। এরপর অন্য পাইপলাইন দিয়ে ক্রুড অয়েল পরিবহন করা হবে আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে।’ শরীফ হাসনাত জানান, আগে বহির্নোঙরে নোঙর করা মাদার ভেসেল থেকে লাইটারেজে করে তেল পরিবহন করা হতো। এখন সেই খরচটি পুরোপুরি বেঁচে যাবে। অন্যদিকে একটি জাহাজ থেকে তেল খালাস করতে আগে ১৫ দিন সময় লাগত, এখন ৩৬ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় নেমে আসবে। এতে করে প্রতিবছর সাশ্রয় হবে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা।