সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:০৩ পূর্বাহ্ন

বুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থী রনক আহসানকে হত্যার হুমকি

অনলাইন ডেস্ক
  • প্রকাশের সময়ঃ শনিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৪
  • ২৯ প্রদর্শন করেছেন
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক শিক্ষার্থী রনক আহসানকে মুঠোফোনে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় নিরাপত্তা চেয়ে শনিবার রাজধানীর শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন তিনি। জিডিতে রনক আহসান উল্লেখ করেন, গত ২৮ মার্চ রাতে বুয়েটের মাটি ব্যবহার করে ছাত্রলীগ কমিটি দিচ্ছে- এমন একটি গুজব সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করেন আবরার ফাহাদের ভাই আবরার ফায়াজ। সেই গুজব চিহ্নিত করে ফেসবুকে পোস্ট দেন তিনি। এরপরই তাকে নিশানা করে সাইবার বুলিংসহ নানা মিথ্যাচার ছড়ানো শুরু হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার বিকেলের দিকে তাকে একটি বিদেশি ফোন নম্বর থেকে কল দিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। এ প্রসঙ্গে এক ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, বুয়েটে শিবির, হিযবুত ও তাদের পৃষ্ঠপোষকদের বিরুদ্ধে কথা বলায় ক্রমাগত আমাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। কিছুক্ষণ আগে একজন ফোন করে বলল- ‘৭ দিনের মধ্যে কুপিয়ে তোর কল্লা কেটে নেব। এ কেমন বুয়েটিয়ান? এ কেমন আন্দোলনকারী? মতের ভিন্নতার জন্য মাথা কেটে নিতে চায়! রনক আহসান বুয়েটে প্রগতিশীল রাজনীতির কর্মী ছিলেন। ক্যাম্পাসে অসাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদবিরোধী ছাত্রজোটের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন তিনি। সাম্প্রতিককালে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান প্রকাশ করছিলেন তিনি। গত ৩ এপ্রিল একইভাবে হুমকি পাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন বুয়েটে অসাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদবিরোধী এবং ছাত্ররাজনীতির পক্ষে থাকা শিক্ষার্থীরা। সেদিন তারা বলেন, আমাদের জীবন নিয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমরা আজ উপাচার্য স্যারের কাছে সব কিছুর প্রমাণ নিয়ে লিখিত আবেদন করেছি। আমরা ছাড়া আরো যারা এটার ভুক্তভোগী, তাদের নিরাপত্তার জন্য তাদের নামও লিখিত আবেদনে উল্লেখ করেছি, যেন এটি বন্ধ করা হয়। ২০১৩ সালের ৯ এপ্রিল বুয়েটের নজরুল ইসলাম হলে আরিফ রায়হান দীপের হত্যার আগে বিভিন্নভাবে তার নামে ও প্রগতিশীল রাজনীতির বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুৎসা রটানো হয়। আর এরপরই তার হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। একই রকম ঘটনা ঘটেছিল বুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থী ও তৎকালীন ছাত্রলীগের তন্ময় আহমেদের সঙ্গেও। ২০১৩ সালে তিনিও শিবিরের হামলায় গুরুতর আহত হয়েছিলেন। তন্ময় আহমেদ জানান, হামলার আগে তার বিরুদ্ধেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফরমে বিভিন্ন গুজব ও উসকানিমূলক লেখালেখি শুরু হয়েছিল। সাম্প্রতিককালে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতিবিরোধী তৎপরতা শুরু হলে আবারও সক্রিয় হয়ে ওঠে বুয়েটে গোপনে নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনা করা ছাত্রশিবির, হিযবুতসহ মৌলবাদী গোষ্ঠী। তারা অবস্থান নেয় ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের পক্ষে। তবে বিচার বিভাগের আদেশের সঙ্গে সহমত প্রকাশ করে ছাত্ররাজনীতির পক্ষে বুয়েটের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা সরব হলে মৌলবাদীগোষ্ঠীর নিশানায় উঠে আসে তারা। এর মধ্যে আরিফ রায়হান দ্বীপকে হত্যা নিয়ে সব পক্ষের শিক্ষার্থীরা যখন সরব এবং এ ধরনের হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে মৌলবাদী শক্তির বিরুদ্ধে সব শিক্ষার্থী যখন আন্দোলনে একতাবদ্ধ হয়ে মৌলবাদের বিরুদ্ধে কথা বলছে, তখনই মৌলবাদী গোষ্ঠী সক্রিয় হয়ে ওঠে। দ্বীপ হত্যাকাণ্ড বা তন্ময় আহমেদকে হত্যার উদ্দেশ্যে যে নৃশংস হামলা হয়, তার আগে যেভাবে তাদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও উসকানিমূলক তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া হয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অনলাইন প্ল্যাটফরমগুলোতে। ঠিক একইভাবে বর্তমানে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতির পক্ষে থাকাদের নিয়ে ঘৃণামূলক ও উসকানিমূলক বক্তব্য ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বুয়েটের ‘আড়িপেতে শোনা’ ও শিবিরের ‘বাঁশের কেল্লা’ গ্রুপে। প্রকাশ করা হচ্ছে তাদের ব্যক্তিগত পরিচয়। এসব পেজে এভাবে পরিচয় প্রকাশের কারণে জীবননাশের শঙ্কায় আছেন ওই সব শিক্ষার্থী ও সাবেক বুয়েটিয়ানরা। বুয়েটের ‘আড়িপেতে শোনা’ গ্রুপে দেখা যায়, আন্দোলনে সাড়া না দিয়ে এক শিক্ষার্থী পরীক্ষা দেওয়ায় তার নাম ও ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় এবার হত্যার হুমকি পেলেন বুয়েটে প্রগতিশীল রাজনীতির কর্মী রনক আহসান।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও সংবাদ