প্রাচীনকাল থেকেই মিশরীয় ও ভারতীয়দের খাদ্যতালিকায় কাঠবাদাম থাকত। এই বাদামে রয়েছে প্রচুর খনিজ উপাদান ও ভিটামিন। ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন বি, আমিষ ও অ্যামাইনো অ্যাসিডেও সমৃদ্ধ কাঠবাদাম। এই বাদাম খেলে কয়েক প্রকার ক্যানসারও প্রতিরোধ করা যায়। কাঠবাদাম খেলে শরীরে যে আটটি উপকারী ঘটনা ঘটে, তা নিয়ে আজকের আয়োজন।
১. ওজন কমায়
উচ্চ ক্যালরি থাকা সত্ত্বেও ওজন কমাতে বেশ উপকারি কাঠবাদাম। এই বাদাম আঁশ, আমিষ ও কিছু স্বাস্থ্যকর ফ্যাটে ভরপুর। গবেষণা বলছে, কাঠবাদাম ক্ষুধা কমায়, দিনশেষে বাড়তি খাওয়ার ইচ্ছা দূর করে। তাই শরীর থেকে অতিরিক্ত ক্যালরি দূর করতেও এটি সাহায্য করে। তবে উচ্চ ক্যালরিযুক্ত হওয়ায় এটি বেশি খাওয়া যাবে না।
২. মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ায়
মস্তিষ্কের বিকাশে সাহায্য করে এমন অনেক পুষ্টি উপাদান কাঠবাদামে রয়েছে। এতে থাকা অ্যামাইনো এসিড, উপকারি ফ্যাট আমাদের মস্তিষ্ককে যেকোনো কাজে মনোযোগ ধরে রাখতে সাহায্য করে। আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক সক্ষমতা বাড়াতেও কাঠবাদামের ভূমিকা রয়েছে। এ ছাড়া কাঠবাদাম অনিদ্রা ও মানসিক চাপ কমায়।
৩. ত্বক ভালো রাখে
কাঠবাদামে রয়েছে ভিটামিন ই। এই গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্টটি ত্বককে দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে। দিনে অন্তত চারটি করে কাঠবাদাম খেলে শরীরে কোলাজেনের উৎপাদন প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ত্বককে নরম ও স্থিতিস্থাপক করে তোলে।
৪. হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়
গবেষণা বলছে, যাঁরা সপ্তাহে অন্তত পাঁচ বার কাঠবাদাম খান, তাঁদের হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। আগেই বলেছি, কাঠবাদামে রয়েছে ভিটামিন ই, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। ধমনীর ক্ষতির জন্য দায়ী সি-রিয়্যাক্টিভ প্রোটিন কমাতে ভূমিকা রাখে কাঠবাদাম। কাঠবাদামে ভালো পরিমাণে মনোআনস্যাচুরেটেড ও কিছু পরিমাণে পলিআনস্যাচুরেটেড চর্বি থাকে—যা আমাদের শরীরের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমায়।
৫. হাড় শক্তিশালী করে
কাঠবাদাম ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস। ক্যালসিয়াম অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ করে। সেই সঙ্গে হাড়, দাঁত এবং মাংসপেশিকে শক্তিশালী করে। এ ছাড়াও কাঠবাদামে থাকে ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম, যা হাড়ের স্বাস্থ্য ঠিক রাখে। প্রতিদিন কাঠবাদাম খেলে হাড়ের খনিজ ঘনত্ব বৃদ্ধি করে। এতে আমাদের কঙ্কালতন্ত্র শক্তিশালী হয়।
৬. দৃষ্টিশক্তি প্রখর করে
কাঠবাদামে রয়েছে ফসফরাস। এটি আমাদের দৃষ্টিশক্তি প্রখর করে। আর সার্বিকভাবে চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
৭. গর্ভাবস্থায় স্বাস্থ্য ভালো রাখে
গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন অল্পকিছু পরিমাণে হলেও কাঠবাদাম খাওয়া উচিত। এতে থাকে ভিটামিন ই যা অন্তঃসত্ত্বাদের জন্য খুবই দরকারি। কাঠবাদাম খেলে গর্ভের অনাগত সন্তানের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। বিশেষ করে, গর্ভের ফিটাস যদি স্বাভাবিকের চেয়ে ধীরে বৃদ্ধি পায় তাহলে কাঠবাদাম খাওয়া হতে পারে ভালো সমাধান।
৮. ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়
মার্কিন জৈব রসায়নবিদ এডউইন ক্রেবস মনে করেন, নির্দিষ্ট কিছু ভিটামিন বি–এর অভাবে কয়েক ধরনের ক্যানসার সেল তৈরি হতে পারে। কাঠবাদামে প্রচুর ভিটামিন বি ও ফ্ল্যাভনয়েড থাকে, যা নারীদের স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। এতে বোরন থাকায় প্রস্টেট ক্যানসারও প্রতিরোধ করতেও সহায়তা করে কাঠবাদাম।
কীভাবে খাবেন?
প্রতিদিন ১৪টা পর্যন্ত কাঠবাদাম খাওয়া যেতে পারে। তবে প্রতিদিন মাত্র চারটি কাঠবাদাম খেলেই আপনি ওপরের সমস্ত উপকার পাবেন। রাতে পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খালিপেটে খেতে পারেন কাঠবাদাম। সালাদ, পায়েস, আইসক্রিম, কেক, পোলাও, ফ্রায়েড রাইস—সবখানেই চলে কাঠবাদাম। দুই খাবারের মধ্যেও খেতে পারেন। স্মুদি, বিভিন্ন মিশ্র ফল, মিল্কশেকের সঙ্গে মিশিয়েও খেতে পারেন কাঠবাদাম। মাংসসহ বিভিন্ন রান্নায় ব্যবহার করতে পারেন কাঠবাদামের পেস্ট। অফিসে একটা ছোট কৌটায় রেখে দিতে পারেন কাঠবাদাম। কাজের ফাঁকে পেট খিদের জানান দিলে চিবিয়ে খেয়ে নিলেন!