রাজবাড়ীর আলোচিত চরমপন্থী নেতা সুশীল কুমার সরকার (৫৮) নিষিদ্ধ চরমপন্থী সংগঠন পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি ছেড়ে লাল পতাকায় যোগ দেওয়ায় শীর্ষ নেতাদের নির্দেশে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। সুশীল হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দুই আসামি গতকাল বুধবার আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব কথা বলেছেন।
গতকাল রাত সাড়ে নয়টার দিকে পুলিশ সুপার মোছা. শামীমা পারভীন সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সুশীল সরকার হত্যা মামলার দুই আসামির এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সুশীল হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সর্বশেষ ঠাকুরগাঁও থেকে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই দুজন হলেন গোয়ালন্দ উপজেলার ছোটভাকলা ইউনিয়নের কেউটিল গ্রামের সালাম শেখের ছেলে চরমপন্থী সর্বহারা পার্টির সদস্য তোফাজ্জল শেখ ওরফে তোফা (৩৮) ও একই গ্রামের মৃত মজিবর শেখের ছেলে চরমপন্থী সর্বহারা পার্টির সদস্য মো. লোকমান শেখ (৩৫)। এর আগে গ্রেপ্তার হওয়া অপর দুই আসামি হলেন গোয়ালন্দ উপজেলার উত্তর চর পাচুরিয়া গ্রামের আশিকুল ওরফে ভাষান শেখ (২৮) এবং চর কাঁচরন্দ গ্রামের জনি মোল্যা (৩৪) । তাঁরা জেলা কারাগারে রয়েছেন।
পুলিশ জানায়, প্রযুক্তিগত সহযোগিতায় গত ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে তোফাজ্জল ও লোকমানকে ঠাকুরগাঁও জেলা সদর থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন তাঁদের রাজবাড়ীর আদালতে হাজির করে তিন দিনের রিমান্ডের আবেদন জানায় পুলিশ। রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তাঁরা হত্যার কথা স্বীকার করেন। এরপর গতকাল সন্ধ্যায় গোয়ালন্দ আমলি আদালতের বিচারক ইকবাল হোসেনের কাছে হত্যায় সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে লোকমান শেখ এবং আগের দিন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তোফাজ্জল শেখ ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। জবানবন্দি শেষে গতকাল রাতেই আদালত দুজনকে কারাগারে পাঠান।
আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে তোফাজ্জল ও লোকমান বলেন, সুশীল কুমার নিষিদ্ধ পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টির রাজবাড়ী, কুষ্টিয়া, মানিকগঞ্জ, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ অঞ্চলের আঞ্চলিক কমান্ডার ছিলেন। সম্প্রতি পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি ছেড়ে তিনি সর্বহারা পার্টির আরেকটি গ্রুপ ‘লাল পতাকা’য় যোগদান করে এলাকায় মাদক ব্যবসা ও চাঁদাবাজিতে লিপ্ত হন। নীতি বির্সজন দিয়ে লাল পতাকায় যোগদান করায় দলের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। পরে দলের নির্দেশে সুশীলসহ আরেকজনকে হত্যার সিদ্ধান্ত হয়। সুশীল হত্যার অন্যতম পরিকল্পনাকারী সর্বহারা পার্টির আঞ্চলিক পরিচালক আকরাম হোসেন। হত্যাকাণ্ডের এক সপ্তাহ আগে তাঁদের গোপন বৈঠক হয়। বৈঠকের পর ২১ সেপ্টেম্বর প্রথম দফায় সুশীলকে হত্যার চেষ্টা করে তাঁরা ব্যর্থ হন।
জবানবন্দিতে তোফাজ্জল ও লোকমান আরও বলেন, ২২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে গোয়ালন্দের ছোটভাকলা ইউনিয়নের কাটাখালী বাজারে ইমদাদুল ব্যাপারীর চায়ের দোকানে আড্ডা দিচ্ছিলেন সুশীল কুমার। এ সময় সুশীলকে হত্যার জন্য চারজন সেখানে অটোরিকশায় করে যান। এর মধ্যে তিনজনের হাতে পিস্তল, আরেকজনের হাতে ধারালো দা ছিল। দোকানের সামনে বেঞ্চে বসে থাকা অবস্থায় সুশীলকে লক্ষ্য করে অটোরিকশা থেকে প্রথমে তোফাজ্জল গুলি করলে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
পরে লোকমান গুলি করলে তা বাঁ পাঁজরে বিদ্ধ হয়। এতে সুশীল মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এরপর তোফাজ্জল আরও কয়েকটি গুলি করেন। এরপর তাঁরা তাঁকে দা দিয়ে কোপাতে থাকেন। সুশীলের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর তাঁরা সেখান থেকে চলে যান।
সুশীল কুমার সরকার গোয়ালন্দ উপজেলার কেউটিল গ্রামের মণীন্দ্রনাথ সরকারের ছেলে। তাঁর বিরুদ্ধে গোয়ালন্দ থানায় অস্ত্র, হত্যাসহ সাতটি মামলা রয়েছে। সুশীল কুমারকে হত্যার ঘটনায় গত ২২ সেপ্টেম্বর রাতে অজ্ঞাতনামা আসামি করে তাঁর ভাই সুনীল সরকার থানায় হত্যা মামলা করেন।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাকিবুল ইসলাম জানান, সুশীল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও তোফাজ্জল ও লোকমান সরাসরি হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত আরও দুজনকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।