মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:০১ পূর্বাহ্ন

কূটনৈতিক টানাপোড়েন ভারত-কানাডা বাণিজ্যে প্রভাব ফেলবে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • প্রকাশের সময়ঃ বুধবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২৪
  • ১৪ প্রদর্শন করেছেন
জাস্টিন ট্রুডো ও নরেন্দ্র মোদি। ছবি: সংগৃহীত

ভারত ও কানাডার কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতির কারণে উভয়দেশে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের নেতিবাচক প্রভার পরতে পারে। কানাডার একজন শিখ নেতাকে হত্যার ঘটনায় উভয়দেশের মধ্যে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

সোমবার (১৪ অক্টোবর) কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ভারতের আচরণকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে উল্লেখ করেছেন। অপরদিকে নয়া দিল্লি অভিযোগকে ‘হাস্যকর’ বলে অভিহিত করেছে।

নয়া দিল্লি-ভিত্তিক গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের অজয় শ্রীবাস্তব এক সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকারে বলেছেন, এই বিরোধটি যখন চলছে, তখন উভয় দেশের প্রসারিত অর্থনৈতিক পতন এড়াতে সাবধানতার সঙ্গে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।

ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের মতে, ২০১৯ এবং ২০২৩ অর্থবছরের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক পণ্য বাণিজ্য ৬ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার থেকে ৮ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। ২০২৪ সালের অর্থবছরে ৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। এখনও পর্যন্ত এটি ঝড়কে সামলিয়েছে বলে মনে হচ্ছে।

জানা গেছে, কানাডায় ভারতের সবচেয়ে বড় রপ্তানির মধ্যে রয়েছে ওষুধ, ইস্পাত ও লোহার পণ্য এবং বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি। অপরদিকে নয়াদিল্লির কানাডিয়ান সারের উপর নির্ভরতা রয়েছে।

শ্রীবাস্তব এএফপিকে বলেন, আমি অবিলম্বে বাণিজ্যে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে বলে মনে করি না। উভয়দেশের কোম্পানিই তাদের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে রপ্তানি ও আমদানি করে। ভারত বা কানাডা কেউ যদি কিছু অংশে বাণিজ্য নিষিদ্ধ না করে, তাহলে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম।’

দুই মধ্যে বাণিজ্য
তিনি আরও  বলেন, কূটনৈতিক বিরোধের কারণে একটি মুক্ত-বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য দেশ দুটির প্রচেষ্টাকে সাহায্য করার সম্ভাবনা কম। প্রস্তাবিত চুক্তির বিষয়ে আলোচনা গত বছর স্থগিত রাখা হয়েছিল, তবে রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের আগে কোনও পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা দূরবর্তী বলে মনে হয়।

দুদেশের মধ্যে বিনিয়োগ
ভারত বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল প্রধান অর্থনীতি এবং কানাডা সেদেশে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ১৭তম স্থানে রয়েছে।
নয়াদিল্লির পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রনালয় গত জুন মাসে জানিয়েছিল, কানাডিয়ান পেনশন তহবিল ভারতে প্রায় ৫৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। কানাডা পেনশন প্ল্যান ইনভেস্টমেন্ট বোর্ডের বর্তমানে ফুড ডেলিভারি অ্যাপ জোমাটো এবং বেসরকারি খাতের ঋণদাতা কোটাক মাহিন্দ্রা ব্যাঙ্কের মতো কোম্পানিগুলোতে এক শতাংশের বেশি অংশীদারিত্ব রয়েছে।

ভারতের শিল্প সমিতির অনুমান, শীর্ষ আইটি জায়ান্ট টিসিএস এবং ইনফোসিসসহ ভারত-ভিত্তিক কোম্পানিগুলো বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে কানাডায় হাজার হাজার চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করেছে। বিমান নির্মাতা বোম্বারডিয়ারসহ শীর্ষ কানাডিয়ান সংস্থাগুলোতেও ভারতে প্রবল উপস্থিতি রয়েছে।

ভারতীয় ধনকুবের গৌতম আদানি সেপ্টেম্বরে বলেছিলেন, তিনি বোম্বার্ডিয়ারের প্রধান এরিক মার্টেলের সঙ্গে বিমান পরিষেবা এবং প্রতিরক্ষায় ‘রূপান্তরমূলক অংশীদারিত্ব’ নিয়ে আলোচনা করেছেন।

কানাডায় ভারতীয় শিক্ষার্থী
কানাডায় আন্তর্জাতিক ছাত্রদের দুই-পঞ্চমাংশেরও বেশি ভারত থেকে আসে। সিএআরই রেটিং অনুযায়ী তৈরি করা অনুমান থেকে দেখা গেছে, ভারতের শিক্ষার্থীরা শিক্ষা খাতে বার্ষিক ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অবদান রাখে। শিক্ষার্থীদের আগমনের এই ধারায় কতটা ক্ষতি করতে পারে তা দেখার বিষয়।

ভারত থেকে কানাডিয়ান স্টাডি পারমিটের আবেদন গত বছর প্রায় ১৫ শতাংশ কমেছে, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে এটি কমতে শুরু হয়েছিল। তবে এজন্য অন্যান্য কারণও অবদান রেখেছে, যার মধ্যে রয়েছে দুর্বল চাকরির বাজার এবং শিক্ষার্থীদের জন্য কানাডার কঠোর নীতিমালা।

গত বছর কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো প্রকাশ্যে সেদেশের ভারতীয় বংশোদ্ভূত শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যায় ভারতের জড়িত থাকার অভিযোগ  করেন। এই প্রেক্ষিতে ভারত ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায়। নিজ্জাকে ২০২৩ সালের জুনে ভ্যাঙ্কুভারে তার বাড়ির কাছে গুলি করে হত্যা করা হয়।

এদিকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সংক্ষিপ্তভাবে কানাডিয়ানদের জন্য ভিসা বন্ধ করে দেয় এবং অটোয়াকে বেশ কয়েকজন কূটনীতিক প্রত্যাহার করতে বাধ্য করে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও সংবাদ