সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:২০ অপরাহ্ন

মার্কিন নির্বাচন নিয়ে চীনা নাগরিকরা কী ভাবছেন?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • প্রকাশের সময়ঃ সোমবার, ৪ নভেম্বর, ২০২৪
  • ১১ প্রদর্শন করেছেন

চীনের সাধারণ জনগণ অত্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিকে নজর রাখছেন। অবশ্য তাদের মধ্যে কিছুটা উদ্বেগও কাজ করছে।

নির্বাচনে জিতে যে-ই হোয়াইট হাউসে যান না কেন, তারপর দেশে-বিদেশে কী ঘটতে পারে- সেটি নিয়েই কিছুটা ভয় দেখা যাচ্ছে চীনা নাগরিকদের মধ্যে।

‘আমাদের মধ্যে কেউই যুদ্ধ দেখতে চাই না,’ বলছিলেন জিয়াঙ নামের ষাটোর্ধ্ব একজন চীনা নাগরিক। অন্য বয়স্ক সঙ্গীদের সঙ্গে তিনি বেইজিংয়ের রিতান পার্কে নাচ শিখতে এসেছেন।

পার্কটি চীনে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বাসভবন থেকে মাত্র কয়েক শ’ মিটার দূরে অবস্থিত। জিয়াঙ ও তার সঙ্গীদের সবাই নিয়মিতভাবেই এখানে নাচ শিখতে আসেন।

এসময় নাচের নতুন মুদ্রা শেখার পাশাপাশি আসন্ন মার্কিন নির্বাচন নিয়েও আলাপ-আলোচনা করে থাকেন তারা।

কারণ এবছর এমন একটি সময়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, যখন তাইওয়ান, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ আন্তর্জাতিক নানান বিষয়কে কেন্দ্র করে দুই পরাশক্তি চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বেশ উত্তেজনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

‘চীন-মার্কিন সম্পর্কে ক্রমেই টানাপোড়েন বাড়ছে, যা দেখে আমি চিন্তিত,’ বলেন জিয়াঙ। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা শান্তি চাই।’

এ ধরনের আলাপ-আলোচনা শুনতে অনেকেই পার্কটিতে ভিড় জমান। যারা এখানে আলোচনায় অংশ নেন, তাদের বেশিরভাগের মধ্যেই নিজের পুরো নাম বলার ব্যাপারে অনাগ্রহ দেখা যায়।

তারা এমন একটি দেশে বসবাস করেন যেখানে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে নিয়ে কথা বলা গেলেও নিজ দেশের নেতাদের বিষয়ে কথা বলতে ভয় পান। কারণ নেতাদের সমালোচনা করে কথা বললে তারা সমস্যায় পড়তে পারেন।

পার্কে একত্রিত হওয়া এসব চীনা নাগরিকরা বলছিলেন যে, তারা যুদ্ধ নিয়ে বেশ চিন্তিত।

এর অর্থ এই নয় যে, কেবল ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যকার দ্বন্দ্ব ঘিরেই তাদের মধ্যে উদ্বেগ কাজ করছে। বরং মধ্যপ্রাচ্য ও ইউক্রেনে এখন যে যুদ্ধ চলছে, তা আরও তীব্রতর হয়ে অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ে কি-না, সেটি নিয়েও তাদের মধ্যে দুশ্চিন্তা কাজ করছে।

আর সে কারণেই সত্তরের ঘরে পা দেওয়া মেঙ চান যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এবারের নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়লাভ করুক।

‘যদিও তিনি (ট্রাম্প) চীনের ওপর অনেকগুলো অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন, কিন্তু কোনো যুদ্ধ শুরু করেননি,’ বলছিলেন মেঙ।

‘জো বাইডেন আরও যুদ্ধ বাঁধিয়েছেন। সে কারণে অনেক সাধারণ মানুষ তাকে অপছন্দ করে।’

‘বাইডেনই ইউক্রেন যুদ্ধে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। আর এই যুদ্ধের ফলে রাশিয়া ও ইউক্রেন- উভয় দেশ ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে,’ বলেন মেঙ।

পাশেই কয়েক নারী তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যবহারের জন্য নাচের ভিডিও ধারণ করছিলেন।

তাদের একজন বলেন, ‘নির্বাচনি বিতর্কে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন যে, তিনি ক্ষমতা গ্রহণের ২৪ ঘন্টার মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধের ইতি টানবেন।’

ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমালা হ্যারিস সম্পর্কে মতামত জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হ্যারিস সম্পর্কে আমি খুব বেশি জানি না। আমরা মনে করি, তিনি (নির্বাচনে জয়লাভ করলে) প্রেসিডেন্ট বাইডেনের দেখানো পথেই হাঁটবেন, যিনি যুদ্ধে সমর্থন দিচ্ছেন।’

ঠিক এরকম বার্তা দিয়েই চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে প্রচারণা চালানো হয়েছে, যা এখন দেশটির নাগরিকদের কণ্ঠেও প্রতিধ্বনিত হতে দেখা যাচ্ছে।

মধ্যপ্রাচ্যের জনগণকে ‘আরবিয় ভাই’ বর্ণনা করে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকরের লক্ষ্যে সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বেইজিং।

সেই সঙ্গে, যুদ্ধে ইসরাইলকে সর্বাত্মকভাবে সমর্থন ও সহযোগিতা করার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করতেও বিলম্ব করেনি চীন।

চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াঙ ই জাতিসংঘকে জানিয়েছেন যে, ইউক্রেন ইস্যুতে তারা ‘গঠনমূলক ভূমিকা’ পালন করছেন। অন্যদিকে, পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ওয়াশিংটন নিজের স্বার্থসিদ্ধি করছে বলেও অভিযোগ তুলেছেন তিনি।

যদিও বিশ্লেষকদের বেশিরভাগই মনে করেন যে, আসন্ন মার্কিন নির্বাচনে কে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে হোয়াইট হাউসে ঢুকবেন, সে বিষয়ে বেইজিংয়ের কোনো সুনির্দিষ্ট পছন্দ-অপছন্দ নেই।

তারপরও অনেকে এ বিষয়ে একমত হবেন যে, ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমালা হ্যারিস সম্পর্কে চীনের সাধারণ জনগণ, এমনকি নেতারাও খুব বেশি কিছু জানেন না।

তবে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে তাইওয়ানের মতো বড় ইস্যুর ক্ষেত্রে ট্রাম্পের চেয়ে মিজ হ্যারিসের অবস্থান বেশি স্থিতিশীল হবে বলে মনে করেন কেউ কেউ।

‘আমি ট্রাম্পকে পছন্দ করি না। আমি এটাও মনে করি না যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের সম্পর্কের ভালো কোনো ভবিষ্যৎ আছে। অনেক সমস্যা আছে। সেগুলোর মধ্যে বৈশ্বিক অর্থনীতির বিষয় যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে তাইওয়ান সমস্যাও,’ বলছিলেন বেইজিংয়ের পার্কটিতে বেড়াতে আসা এক নাগরিক, যার চার বছর বয়সী এক সন্তান রয়েছে।

এই বাবা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, তাইওয়ানকে কেন্দ্র করে চীন-মার্কিন বিরোধ শেষপর্যন্ত সংঘাতে রূপ নিতে পারে।

‘আমি এটা (সংঘাত) চাই না। আমি চাই না যে, আমার ছেলে (যুদ্ধের কারণে) সামরিক বাহিনীতে যোগদান করুক,’ বলেন তিনি।

স্বশাসিত তাইওয়ানকে চীনের অংশ বলে দাবি করে বেইজিং। দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছেন যে, চীনের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে তাইওয়ানের ‘পুনর্মিলন অনিবার্য’।

এর জন্য প্রয়োজনে বলপ্রয়োগ করা হবে বলেও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

অন্যদিকে, চীনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক বজায় রেখে চলছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি দেশটি ‘এক চীন নীতিরও’ বিরোধীতা করেনি। কিন্তু সেটা সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রই তাইওয়ানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পৃষ্ঠপোষক।

আইন অনুযায়ী, তাইওয়ানকে প্রতিরক্ষামূলক অস্ত্র সরবরাহ করতে যুক্তরাষ্ট্র বাধ্য। জো বাইডেন বলেছেন যে, তার দেশ তাইওয়ানকে সামরিকভাবেও সুরক্ষা দিবে।

তবে মিজ হ্যারিস অবশ্য এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো মন্তব্য করেননি। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তাইওয়ান নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি ‘সব জাতির নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধির প্রতি অঙ্গীকারের’ কথা বলেছেন।

অন্যদিকে, তাইওয়ান প্রশ্নে কূটনীতির চেয়ে একটি বিশেষ চুক্তির প্রতিই বেশি জোর দিচ্ছেন ট্রাম্প, যেটির আওতায় সুরক্ষা পেতে হলে তাইপেকে অর্থ ব্যয় করতে হবে।

অর্থ প্রদানের জন্য ইতোমধ্যে তাইপের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন সাবেক এই প্রেসিডেন্ট।

‘তাইওয়ান আমাদের চিপ ব্যবসা নিয়ে গেছে। আমরা যে কতটা বোকা, সেটা বুঝতে পারছেন? তারা (তাইওয়ান) খুবই সম্পদশালী,’ সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন ট্রাম্প।

‘তাইওয়ানের উচিত প্রতিরক্ষার জন্য আমাদেরকে অর্থ দেওয়া,’ বলেন তিনি।

তবে রিপাবলিকান পার্টির এই প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে নিয়ে চীনের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের জায়গা হলো, তিনি এবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে চীনা পণ্যের ওপর ৬০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছেন বলে জানিয়েছেন।

চীনের ব্যবসায়িরা মোটেও সেটি চান না। কারণ অর্থনৈতিক মন্দা কাটাতে তারা এখন রপ্তানির উদ্দেশ্যে পর্যাপ্ত পণ্য তৈরি করার চেষ্টা চালাচ্ছে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও সংবাদ