কঠোর অভিযানের মধ্যেও নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নদীতে ইলিশ শিকার এবং জেলে ধরপাকড়ের মধ্য দিয়ে রোববার (৩ নভেম্বর) দিবাগত রাত ১২টায় শেষ হয়েছে মা ইলিশ রক্ষায় সরকারি নিষেধাজ্ঞার ২২ দিন। নিষিদ্ধ সময়ে লক্ষ্মীপুরের রায়পুরসহ চার উপজেলায়-মেঘনায় মাছ শিকারের অপরাধে ২২ দিনে প্রায় ৭৪ জেলেকে আটক করেছে কোস্টগার্ড, নৌপুলিশ, জেলা প্রশাসন, মৎস্য বিভাগের সমন্বয়ে গঠিত টাস্কফোর্স।
Advertisement
তাদের মধ্যে অপ্রাপ্ত বয়স্ক ১৫ জেলেকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কর্মসূচি সফল হওয়ায় আগামী বছর ইলিশের উৎপাদন অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছে মৎস্য বিভাগ।
এদিকে ২২ দিন অলস সময় কাটানোর পর ইলিশ ধরতে জাল-নৌকা নিয়ে গতকাল সকাল থেকেই প্রস্তুত ছিলেন অর্ধলক্ষ জেলে। নিষেধাজ্ঞার সময়ে জাল-নৌকা মেরামতের কাজটাও সেরে নিয়েছেন তারা। ঝাঁকে ঝাঁকে রূপালি ইলিশ ধরার আশায় নদীতে নেমে পড়েছেন এসব জেলে।
লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো.বিল্লাল হোসেন জানান, ১৩ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ২১ দিন জেলার রায়পুর হয়ে রামগতির মেঘনা থেকে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল গিয়ে শেষ করে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী পর্যন্ত পদ্মা-মেঘনা নদীর ৭০ কিলোমিটার অভয়াশ্রম এলাকায় টাস্কফোর্স ২১৩ টি অভিযান পরিচালনা করে। এসব অভিযানে গ্রেফতার হন ৭৪ জন জেলে।
তাদের মধ্যে ৭৪ জন জেলেকে টাস্কফোর্সে নিয়োজিত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন এবং ৫৯ জেলেকে ২ লক্ষ ৯৭ হাজার ২১০ টাকা জরিমানা করেন। এ ছাড়াও পরিদর্শন করা হয় ৭৫টি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ৩৮৯ মাছঘাট, ৫২৫ মৎস্য আড়ত ও ৫২৭টি মাছ বাজার। জব্দ করা হয় ৬৮৭ টন ইলিশ, সাড়ে ১৮ লাখ ৯০ হাজার মিটার কারেন্টজাল, এসব ঘটনায় মামলা হয় ৩৬টি। জব্দ মাছ বিভিন্ন এতিমখানায় বিতরণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘তালিকাভুক্ত জেলেদের সরকারিভাবে চাল সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এবার অভিযান ভালোভাবে সম্পন্ন হয়েছে। আশা করি, আগামী দিনে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।’
নৌ-পুলিশের চাঁদপুর অঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘টাস্কফোর্সের সহযোগিতায় নৌ পুলিশ গত ২১ দিনে ৫৯ জেলেকে গ্রেফতার করে ভ্রাম্যমাণ আদালত বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড এবং ৩৬ জনের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করা হয়। এ ছাড়া ১৫ জন অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, ‘অভিযানে জব্দ হয় ১৮ লাখ ৯০ হাজার মিটার কারেন্টজাল, ৬৮৭ কেজি ইলিশ এবং ২৫টি মাছ ধরার নৌকা। এর মধ্যে ৫টি নৌকা থানা হেফাজতে, ১২টি নৌকা ঘটনাস্থলে অকার্যকর এবং ৮টি মৎস্য বিভাগের হেফাজতে দেওয়া হয়।’
উল্লেখ্য- গত ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন পদ্মা-মেঘনা নদীর অভয়াশ্রম এলাকায় ইলিশের নিরাপদ প্রজননের জন্য দেশের কয়েকটি অভয়াশ্রম এলাকায় ইলিশসহ সব ধরনের মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার। ৪ নভেম্বর মধ্যরাত থেকে এই নিষেধাজ্ঞা শেষ হলে আবারও ইলিশ আহরণে নামবে জেলার অর্ধলক্ষাধিক জেলে।