মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৫ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক এখন কোন পথে এগোবে

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশের সময়ঃ শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪
  • ১০ প্রদর্শন করেছেন

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের আগে দেশে বহুল চর্চিত বিষয় ছিল রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প জিতলে বাংলাদেশ নিয়ে তার নীতি কী হবে, আদৌ সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়বে কি না। বাংলাদেশ ইস্যুতে ট্রাম্পের একটি টুইট সেই আলোচনা আরও উসকে দেয়। কমলা হ্যারিসকে পরাজিত করে ট্রাম্পের জয়ের পর ব্যাপক উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরা।

ট্রাম্প ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে অবস্থান করছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস আবার রিপাবলিকান ঘনিষ্ঠ। যদিও তিনি বলেছেন ডেমোক্র্যাট পার্টিতেও তার বন্ধু আছে। তবু ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পর একটি প্রশ্ন বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে, ভবিষ্যতে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক কোন দিকে যাবে?

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার ফলে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়বে না। কারণ দক্ষিণ এশিয়ায় নানান কারণেই এখন গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশ। আর প্রতিহিংসার সম্পর্ক যেহেতু নেই, সেহেতু বাংলাদেশ নিয়ে নীতিতে ট্রাম্প প্রশাসন তেমন কোনো পরিবর্তন আনবে না। তাই বাংলাদেশের দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই।

তবে কেউ কেউ বলছেন, ২০১৬ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় যাওয়ার পর থেকে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সম্পর্ক ভালো। নানান সময় বিভিন্ন পোস্টে ট্রাম্পকে নিজের বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের আশ্রয়ে সেখানে আছেন এবং তার ইস্যুতে অনেকটা অনড় দেশটি। ফলে মোদী এই ইস্যুতে কোনো ভূমিকা রাখার চেষ্টা করতে পারেন।

নির্বাচনী প্রচারণা চলাকালে ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশের হিন্দুসহ সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের নিন্দা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) একটি টুইট করেন। তবে তার এই টুইটকে নির্বাচনের কৌশল মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

আমার ধারণা ট্রাম্প আসায় বাংলাদেশের সঙ্গে খুব একটা সম্পর্কের ঘাটতি হবে না। কারণ অর্থনৈতিক নানান কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত যুক্তরাষ্ট্র। সুতরাং, শুধু ভারতের ইস্যু নয়, নিজেদের স্বার্থের দিকেও নজর রাখবে ট্রাম্প প্রশাসন।- পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব সাব্বির আহমেদ চৌধুরী

মানবাধিকারসহ বিভিন্ন ইস্যুতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে শীতলতা চলছিল। এসময় ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বক্তব্যেও তা প্রকাশ পাচ্ছিল। সেসময় যুক্তরাষ্ট্র ইস্যুতে নানান নেতিবাচক মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। সেসময় বাংলাদেশে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অযাচিত হস্তক্ষেপ বা প্রভাব বিস্তারে মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশ-মার্কিন সম্পর্কে অনেকটাই উষ্ণতা ফেরে।

যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। এক চিঠিতে তিনি বলেন, ‘দুই দেশের অংশীদারত্ব আরও জোরদার করতে ও টেকসই উন্নয়নের জন্য একসঙ্গে কাজ করতে উন্মুখ রয়েছি।’ বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস বলছে, অন্তর্ভুক্তিমূলক, নিরাপদ ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের জন্য যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গি অভিন্ন। মানবাধিকার ও নাগরিক সমাজকে সমর্থন করতে একটি মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিকের জন্য আমাদের অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি এগিয়ে নিতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারত্বের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বৃহত্তম প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগকারী এবং বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্যের দেশ।

ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়বে কি না- এমন প্রশ্নে অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক শুধু যে দলের ভিত্তিতে হয় তা তো নয়, আমাদের সঙ্গে বাইডেন প্রশাসনের যে সব বিষয় নিয়ে আলাপ চলছিল বা তাদের যেসব চাওয়া ছিল বা নেগোসিয়েশন হচ্ছিল সেগুলো কিন্তু এর পূর্ববর্তী ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গেও ছিল। কাজেই এটা বলা ঠিক হবে না, ট্রাম্প প্রশাসন এবং বাইডেন প্রশাসনের মাঝে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে বড় কোনো পরিবর্তন হবে। আমি সেটি মোটেও মনে করি না।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও সংবাদ