শীতে কাপছে উত্তরের দুই জেলা দিনাজপুর ও নীলফামারী । ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে দিনাজপুর। সড়ক-মহাসড়কে সব ধরনের যানবাহন হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীরগতিতে চলাচল করছে। কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। নিতান্তই প্রয়োজন কিংবা জীবিকার তাগিদে ছুটে চলা মানুষের দেখা মিলছে পথে-ঘাটে।
আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) দিনাজপুরে সকাল ৬টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বাতাসের আর্দ্রতা ৯৫ শতাংশ। জেলায় চলতি শীত মৌসুমে সর্বনিম্ন ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
ঘনকুয়াশায় তাপমাত্রা কম ও হিমেল বাতাসের প্রভাবে জনজীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। খেটে খাওয়া মানুষের বাড়ছে দুর্ভোগ। তারা ঠিকমতো কাজে যেতে পারছেন না। ফলে উপার্জনে ভাটা পড়তে শুরু করেছে।
ট্রাক চালক রবিউল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, গতকাল রাত থেতে এতো কুয়াশা ১০ হাত দূরের গাড়ি ঠিকমতো দেখা যায় না। এতে গন্তব্য পৌঁছাতে বেশি সময় লাগছে।
অটোরিকশা চালক হামিদুল ঢাকা পোস্টকে বলেন, যে পরিমাণ কুয়াশা আর ঠান্ডা বাতাস মানুষ বাড়ি থেকে কেমন করে বের হবে। আগে দৈনিক ভাড়া আয় করতাম ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। কয়েকদিন ধরে ৪০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা আয় হচ্ছে। শীত এলে আমাদের কষ্ট হয়।
দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, আজ মঙ্গলবার সকাল ৬টায় দিনাজপুরের তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এসময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৩ শতাংশ। বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১ কিলোমিটার।
নীলফামারী: উত্তরের জনপদ নীলফামারী জেলায় জেঁকে বসেছে শীত। সূর্য আকাশ ভেদ করে উত্তাপ ছড়াতে পারছে না।
মেঘলা আকাশে কেটে যাচ্ছে দিন। শীত ও কুয়াশায় বৃদ্ধ ও শিশুরা কাবু হয়ে পড়েছে। হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের চেম্বারে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীরা আসছেন। এছাড়া শরীরে গরম কাপড় জড়াতে পুরোনো কাপড়ের দোকানে ভিড় বাড়ছে।
জেলায় গত কয়েকদিন ধরে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। সেই সঙ্গে সারারাত ও পরদিন বেলা ১১টা পর্যন্ত কুয়াশায় ঢাকা থাকছে পুরো জনপদ। সকালের ফ্লাইটগুলো কুয়াশার কারণে অবতরণে শিডিউলে বিঘ্ন ঘটছে। এতে দূরদূরান্তের যাত্রীদের সৈয়দপুর বিমানবন্দরে এসে আকাশ পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত ফ্লাইটের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
এদিকে শীতের তীব্রতায় জেলার অভাবী, গরিব ও অসহায় মানুষগুলো কষ্ট পাচ্ছেন। এখনও সরকারি-বেসরকারিভাবে শীতবস্ত্র বিতরণ শুরু হয়নি। জেলার বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা পুরোনো কাপড়ের দোকানগুলোতে ভিড় বাড়ছে।
গুলিস্তান বলে পরিচিত সৈয়দপুরে সবচেয়ে বড় পুরোনো কাপড়ের বাজারে গরম কাপড় কিনতে আসা জাহানারা বেওয়া (৬৭) বলেন, ‘গরম কাপড় নিবার জন্য খানসামার পাকেরহাট থাকি আইলছু। কিন্তু যে দাম যায়ছে তাতে মোর কাপড় কেনা হইবে না। জারত হামার গরিব মানুষের মরণ ছাড়া উপায় নাই’।
জেলার সৈয়দপুর শহরের বার্মাসেল এলাকার রিকশাচালক জোবায়ের (৪৫) বলেন, ‘সকালের দিকে আর সন্ধ্যা থেকে শীতের অনুভূতি বেশি হচ্ছে। সকালে কুয়াশা আর শীতটা বেশি থাকে। প্রয়োজন থাকলেও সকালে বাইরে বের হওয়া কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। কামাই-ধামাই কমে গেইছে’।