সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:১৬ পূর্বাহ্ন

সবজি চাষেই সচ্ছল চর এলাকার চাষিরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশের সময়ঃ শনিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ৬ প্রদর্শন করেছেন

মাদারীপুর: নিহারঞ্জন মণ্ডল। বয়স ৪৫ বছর। কয়েক বছর প্রবাস জীবন কাটিয়েছেন। দেশে ফিরে বেছে নিয়েছেন কৃষি কাজ। নিজের পরে থাকা জমিতেই শুরু করেছেন শাক-সবজির বাগান। সারা বছরই মৌসুম উপযোগী নানান ধরনের শাক-সবজির চাষাবাদ করেন তিনি। নিজ ক্ষেতে উৎপাদিত শাক-সবজি ভোরে স্থানীয় বাজারে খুচরা এবং পাইকারি বিক্রি করেন। শিবচরের একাধিক বাজারে তার ক্ষেতে উৎপাদিত শাক-সবজি বিক্রি হয়। এ ধরনের চাষাবাদ করেই আর্থিকভাবে লাভবান এ কৃষক।

অন্যদিকে ইয়াকুব আলী খালাসি নামের এক ব্যক্তি করেছেন বেগুনের চাষ। অন্যের জমি লিজ নিয়ে প্রায় ১৫ বছর ধরে তিনি শাক-সবজির চাষ করে আসছেন। চাষাবাদের ওপরই তার জীবিকা নির্বাহ।

সূর্য মিয়া খান নামে আরেক ব্যক্তি ২০ শতাংশ জমিতে এই মৌসুমে নানা জাতের বেগুনের চাষ করেছেন। এক মাত্র পেশাই তার চাষাবাদ।

মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার সীমান্তবর্তী সূর্যনগর সংলগ্ন এলাকার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল। আড়িয়াল খাঁ নদের এই চরে দীর্ঘদিন ধরেই মানুষের বসতি। এখানকার মাটি উর্বর হওয়ায় শাক-সবজি চাষের জন্য বেশ উপযোগী। ধান-পাটসহ অন্যান্য ফসল এই চরাঞ্চলে চাষ করা হয় না। চরের বাসিন্দারা নিজ বাড়ির আঙিনাসহ চরের জমিতে চাষ করেন হরেকরকম শাক-সবজি। প্রতিদিন ভোরে শিবচরের সূর্যনগর, পাঁচ্চর, ভাঙ্গা উপজেলার পুলিয়া, মালিগ্রামসহ বিভিন্ন হাট-বাজারে এই সবজি বিক্রি করা হয়। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নিজের ক্ষেত পরিচর্যাসহ সবজি তুলতে ব্যস্ত চাষিরা। প্রায় দুই বিঘা জমি নিয়ে ফুলকপি ও বাঁধাকপির চাষ করেছেন নিহারঞ্জন। নিজের জমিতে আগাছা পরিষ্কারসহ ক্ষেতের পরিচর্যা করছেন। নিহারঞ্জন জানান, ‘মৌসুমের শুরু থেকে প্রতিদিন দেড় থেকে দুই মণ ফুলকপি স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেন। মার্বেল, নিঞ্জা ও স্নোবক্স নামে তিনটি জাতের ফুলকপির চাষ করেছেন তিনি। ফলনও বেশ ভালো এসেছে। এলাকার বাজারগুলোতে স্থানীয় চাষের এসব সবজির চাহিদা বেশি। ভালো দামও পাওয়া যায়।

আরেক ক্ষেতে দেখা গেছে বেগুনের চাষ। কয়েক জাতের বেগুন গাছে রয়েছে। বিক্রির জন্য গাছ থেকে বেগুন ছিঁড়ছেন ইয়াকুব আলী নামে আরেক চাষি। জমি লিজ নিয়ে তিনি বেগুন চাষ করেছেন। এ বছর সাদা বেগুনের চাষ করেছেন তিনি। বাজারে দামও ভালো পাচ্ছেন। খুচরা বিক্রি বেশি করেন তিনি।

ইয়াকুব আলী বলেন, এ বছর বেগুন ছাড়াও লাল শাক, পুঁইশাক, পালং শাক, ভুট্টার চাষ করেছি। ১৫ বছর ধরে শাক-সবজির চাষই করছি। আল্লাহ ভালো রাখছে। 

অন্য দিকে সার, ওষুধসহ কৃষি উপকরণের দাম বাড়ার কারণে পরিশ্রম অনুযায়ী খুব একটা লাভ দেখা যায় না বলে জানান আরেক বেগুন চাষি সূর্য মিয়া।

তিনি বলেন, ২০ শতাংশ জমিতে এবার বেগুনের চাষ করেছি। এ বছর মৌসুমের শুরুর দিকে প্রবল বৃষ্টি হলে বেশ ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। এছাড়া সার, কীটনাশকসহ নানা কৃষি উপকরণের দাম বেড়েছে। বীজের দামও বেড়েছে। সব মিলিয়ে যে শ্রম দেই সেই অনুযায়ী লাভ কম।

তিনি আরও বলেন, চর এলাকার জমিতে প্রায় সবাই শাক-সবজির চাষ করেন। অনেকে বাড়ির আঙিনাতেও সবজি চাষ করে। বাজারে বিক্রির পাশাপাশি নিজেদের খাদ্যের চাহিদাও মিটছে। তাছাড়া স্থানীয় বাজারগুলোতে আমাদের উৎপাদিত সবজি প্রচুর বিক্রি হয়। শিবচরসহ আশেপাশের এলাকার বাজারে বিক্রি হয় আমাদের সবজি।

দিগন্তজোড়া সবুজের এ সমারোহ। কোথাও গাঢ় সবুজ পাতার ঝলমলে ফুলকপি ক্ষেত আবার কোথাও বেগুনের ক্ষেত। এছাড়া রয়েছে পুঁইশাক, পালং শাক, ধনিয়াপাতা। বাণিজ্যিকভাবে এই চর এলাকার নানান শাক-সবজি স্থানীয়বাজারের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন স্থানীয় চাষিরা। একই সঙ্গে নিজেদের খাদ্যের চাহিদাও মিটাচ্ছেন নিজ ক্ষেতে চাষ করা শাক-সবজি দিয়ে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও সংবাদ