দেশজুড়ে নানা ঘটনা, আলোচনা-সমালোচনা, শঙ্কা ও নাভিশ্বাসের মধ্য দিয়ে শেষ হচ্ছে ২০২৪ সাল। বছরের শুরুতে জাতীয় নির্বাচন, ছাত্র আন্দোলন, গণভ্যুত্থান, স্বৈরাচারের পতন ও নতুন সরকার গঠন—এই সবই ঘটেছে। জুলাই মাসে কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের মাধ্যমে, যা সরকারের দমন-নিপীড়নের ফলে গণমানুষের আন্দোলনে পরিণত হয়। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের ফলে শেখ হাসিনা পদত্যাগে বাধ্য হন। বহু প্রাণের বিনিময়ে দেশের জন্য গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার, যার নেতৃত্ব নেন নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্রদের আন্দোলনের সূচনা ২০১৮ সালে হলেও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে তখন চাকরিতে কোটা তুলে দিয়েছিল সরকার। এ বছরের ৫ জুন হাইকোর্টের এক রায়ে কোটা পুনর্বহাল হলে ‘‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’’ ব্যানারে শুরু হয় নতুন আন্দোলন। শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে ২ জুলাই থেকে মিছিল-সমাবেশ শুরু করে। শুরুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও শাহবাগকে কেন্দ্র করেই চলছিল শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি। প্রায় প্রতিদিন শাহবাগে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছিল তারা। ধীরে ধীরে আন্দোলনের পরিসরও বাড়তে থাকে পুরো দেশজুড়ে। তবে বিক্ষোভের অনলে ঘি ঢালেন খোদ প্রধানমন্ত্রী।
‘রাজাকারের নাতি-পুতি’
চলতি বছরের চীন পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের নাতি-পুতি’ বলে অভিহিত করলে, সেদিন রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিতে থাকেন, ‘তুমি কে আমি কে? রাজাকার রাজাকার। কে বলেছে কে বলেছে স্বৈরাচার স্বৈরাচার।’ তার এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় সেদিন রাতেই উত্তাল হয়ে উঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের প্রায় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিতে থাকেন, ‘তুমি কে আমি কে? রাজাকার রাজাকার। কে বলেছে কে বলেছে স্বৈরাচার স্বৈরাচার।’
শিক্ষার্থীদের এই স্লোগানকে ইস্যু করে একে একে উস্কানীমূলক বক্তব্য দিতে থাকেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহনও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, তথ্য মন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাতসহ অনেকেই।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তার এক বক্তব্য বলেন, ‘এসব রাজাকারদের প্রতিহত করতে ছাত্রলীগই যথেষ্ট।’
ওবায়দুল কাদেরের উস্কানীমূলক বক্তব্যের পর, সাদ্দামের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ ২০১৮ সালের মতো দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়, এবং নারী শিক্ষার্থীদেরও লাঞ্ছিত করা হয়। তবে এবার শিক্ষার্থীরা চুপ থাকে না, তারা পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধের মুখে, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ছেড়ে পালাতে শুরু করে। পরবর্তী সময়ে দেশের প্রায় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে “ছাত্রলীগ মুক্ত” ঘোষণা করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
এক নজরে ২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের ঘটনাবলী সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো,-
৬ জুন: কোটা বাতিল করে আদালতের রায়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভে নামেন শিক্ষার্থীরা।
৯ জুন: হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।
১-৬ জুলাই: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’র ব্যানারে সংগঠিত হয় এবং সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে ২০১৮ সালের সরকারি বিজ্ঞপ্তি পুনঃবহালের দাবিতে টিএসসি এলাকায় একটি বিক্ষোভ সমাবেশ করে।
পরের কয়েকদিন দেশের অন্যান্য অংশে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা তাদের ক্যাম্পাস ও এর আশপাশে মিছিল-সমাবেশ করে।
গত ৪ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ৫ জুন হাইকোর্টের রায় বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। পরদিন ৬ জুলাই শিক্ষার্থীরা ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির ডাক দেয়।
৭ জুলাই: সারা দেশে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করা হয়। ব্যাপক বিক্ষোভে অচল হয়ে যায় রাজধানী। পরের দিনও ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়।
৯ জুলাই: সারা দেশে সড়ক ও রেলপথের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সকাল-সন্ধ্যা ব্লকেড অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। কোটা বহাল রেখে দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিলে আইনজীবীর মাধ্যমে পক্ষভুক্ত হন দুই শিক্ষার্থী।
১০ জুলাই: কোটা পুনর্বহাল করে হাইকোর্টের আদেশের ওপর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা, ৭ই আগস্ট পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ।
১৪ জুলাই: কোটা পুনর্বহালের নির্দেশ দিয়ে হাই কোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ। এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলা ‘রাজাকার’ শব্দটির জের ধরে রাতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ।
১৫ জুলাই: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগসহ সরকার সমর্থকরা।
১৬ জুলাই: সারা দেশে দিনভর ব্যাপক বিক্ষোভ ও সংঘর্ষ হয়। আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ সরকার সমর্থকরা। এতে নিহতের ঘটনা ঘটে। রংপুরে আন্দোলনকারী বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ পুলিশের বুলেটে নিহত হন।
বিকেলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘আন্দোলন যাবে, আন্দোলন আসবে। কিন্তু ছাত্রলীগ থাকবে’।
১৭ জুলাই: আগের রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে ছাত্রলীগ নেতাদের বের করে দিয়ে কক্ষ ভাঙচুর করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গায়েবানা জানাজা করতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়।
এদিন বিক্ষোভের কেন্দ্রের ছিল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী। শীর্ষ আদালতের রায় আসা পর্যন্ত ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান তিনি। রাতেই যাত্রাবাড়ী এলাকায় সংঘাতের সূত্রপাত হয়। যাত্রাবাড়ীতে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের টোলপ্লাজা জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। ওই রাত থেকে মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়।
১৮ জুলাই: দেশব্যাপী প্রতিরোধ, সহিংসতা, সংঘর্ষ ও গুলি করা হয়। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ সারা দেশ ছিল প্রায় অচল। রাজধানী ছাড়াও দেশের ৪৭টি জেলায় দিনভর বিক্ষোভ, অবরোধ, পালটাপালটি ধাওয়া, পুলিশের হামলা-গুলি ও সংঘাতের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় নিহত ও আহত হয়েছেন অনেকেই। ফলে সারা দেশে বিজিবি মোতায়েন করা হয়। এদিন রাতে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়।
১৯ জুলাই: কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ বা সর্বাত্মক অবরোধের কর্মসূচি ঘিরে রাজধানী ঢাকায় ব্যাপক সংঘর্ষ, হামলা, ভাঙচুর, গুলি, অগ্নিসংযোগ ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। আন্দোলনকারীরা জানান, ৯ দফা দাবি না মানা পর্যন্ত চলবে ‘শাটডাউন’।
২০ জুলাই: শনিবার দেশজুড়ে কারফিউ, সেনা মোতায়েন করা হয়। সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কারফিউ চলবে। এদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে।
২১ জুলাই: সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা পুনর্বহাল-সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় সামগ্রিকভাবে বাতিল (রদ ও রহিত) করে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায় প্রদান। রায়ে বলা হয়, কোটাপ্রথা হিসাবে মেধাভিত্তিক ৯৩ শতাংশ। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা, শহিদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ; ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ১ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। একই দিন চার দফা দাবি পূরণের জন্য বৈষম্যবারোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন।
২২ জুলাই: সোমবার কোটাপ্রথা সংস্কার করে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী তৈরি করা প্রজ্ঞাপনে অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী। রাতে সীমিত আকারে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা চালু হয়।
২৪ জুলাই: বুধবার ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। কোটা আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের মজুমদার ও রিফাত রশীদের খোঁজ পাওয়া যায়। নিখোঁজ থাকার পাঁচ দিন পর আসিফ ও বাকেরকে চোখ বাঁধা অবস্থায় ফেলে যাওয়া হয়েছে বলে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে দুজনই জানায়। আর রিফাত আত্মগোপনে আছে বলে জানানো হয়।
২৫ জুলাই: বৃহস্পতিবার চিকিৎসাধীন আরও তিনজনের মৃত্যু হয়। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয় ছুটির দুদিন-শুক্র ও শনিবার কারফিউ শিথিল থাকবে ৯ ঘণ্টা।
২৬ জুলাই: এলাকা ভাগ করে চলে ‘ব্লক রেইড’। চলে সারা দেশে অভিযান। সারা দেশে অন্তত ৫৫৫টি মামলা। গ্রেপ্তারের সংখ্যা ছয় হাজার ২৬৪। চট্টগ্রামে ৩০ শিক্ষার্থী গ্রেফতারের খবর পাওয়া যায়। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সংঘর্ষে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন আরও তিনজনের মৃত্যু হয়। নাহিদ ইসলামসহ কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন সমন্বয়ককে রাজধানীর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে নিজেদের হেফাজতে নেয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। অপর দুই সমন্বয়ক হলেন আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের মজুমদার।
২৭ জুলাই: কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরও দুই সমন্বয়ককে হেফাজতে নেয় ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তারা হলেন সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) চিকিৎসাধীন আহত ব্যক্তিদের দেখতে যান। গুরুতর আহত চিকিৎসাধীন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন। হাসপাতালে আহতদের দেখার পর সেতু ভবন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ ও টোল প্লাজা দেখেন প্রধানমন্ত্রী।
২৮ জুলাই: কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুমকে হেফাজতে নেয় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। ভোরে রাজধানীর মিরপুরের রূপনগর আবাসিক এলাকার এক আত্মীয়ের বাসা থেকে তাকে উঠিয়ে নেওয়া হয়। ডিবির হেফাজতে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয়জন সমন্বয়ক এক ভিডিও বার্তায় সব কর্মসূচি প্রত্যাহারের কথা বলেছেন। ডিবি কার্যালয়ে ধারণ করা একটি ভিডিও বার্তা রাত ৯টার দিকে গণমাধ্যমে পাঠানো হয়।
এক ব্রিফিংয়ে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ডিবির হেফাজতে নেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। রাত ৯টার দিকে নাহিদ ইসলামসহ ছয় সমন্বয়কের ওই ভিডিও বার্তা আসার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পৃথক বার্তায় এসব কথা বলেন এই আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক মাহিন সরকার, আব্দুল কাদের ও আব্দুল হান্নান মাসুদ। মাহিন সরকার বলেছেন, ‘অস্ত্রের মুখে ডিবি অফিসে ছয় সমন্বয়কের ভিডিও বিবৃতি নেওয়া হয়েছে। এদিন মোবাইল ইন্টারনেট চালু হয়।
৩০ জুলাই: মঙ্গলবার হত্যার বিচার চেয়ে মুখে লাল কাপড় বেঁধে মিছিল হয়। জাতিসংঘ মহাসচিবের বিবৃতিতে স্বচ্ছ তদন্তের আহ্বান জানানো হয়। কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের প্রোফাইল লাল রঙের ফ্রেমে রাঙায় অনেকেই। রাঙিয়েছেন অনেকে। এসব ব্যক্তির মধ্যে শিক্ষক, সংস্কৃতিকর্মী, সাংবাদিক, লেখক, শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ আছেন। অন্যদিকে সরকার-সমর্থকদের অনেকে ফেসবুক প্রোফাইলে কালো রঙের ফ্রেম জুড়েছেন। এদিন ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা আসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে।
৩১ জুলাই: মার্চ ফর জাস্টিস কর্মসূচির পর বৃহস্পতিবারের জন্য নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাংশ। এদিনের কর্মসূচির নাম দেওয়া হয়েছে ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোস’।
১ আগস্ট: গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজতে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে ছেড়ে দেওয়া হয়। এদিন জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার।
৩ আগস্ট: কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবি আদায়ে ঘোষণা করা হয়।
৪ আগস্ট: ঢাকায় লং-মার্চের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
শেখ হাসিনার দেশ থেকে পালায়ন
৫ আগস্ট: সোমবার সকালেও রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে ছাত্র-জনতার সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষ চলে। গুলিতে সেদিনও অনেক শিক্ষার্থী নিহত হন। তবে দুপুর ১২টার দিকে সংবাদ মাধ্যমে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জাতির উদ্দেশে ভাষণের ঘোষণা দেন। তখনই রাজধানীর বুকে ছাত্র-জনতার ঢল নামে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে অংশ নেয়া লাখো মানুষের সমাবেশ বেলা আড়াইটার দিকে যাত্রা করে গণভবনের দিকে। এরপর জনগণের উদ্দেশে দেয়া ভাষণে শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং অন্তবর্তী সরকার গঠনের কথা বলেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
সেনাপ্রধানের ভাষণের পরই উচ্ছ্বসিত ছাত্র-জনতার মিছিলে মিছিলে স্লোগান ছিল, ‘কী হয়েছে কী হয়েছে, শেখ হাসিনা পালাইছে’। ৩৬ দিন আগে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার চেয়ে শুরু হওয়া আন্দোলন ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত রূপ লাভ করল। যার জন্য শেষদিন পর্যন্ত সময়কে ‘৩৬ জুলাই’ বলে অ্যাখ্যা দিয়েছে ছাত্র-জনতা।
৬ আগস্ট: সরকারহীন, পুলিশহীন দেশে অরাজকতা চলতে থাকে। বিভিন্ন স্থানে ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ চলে। ডাকাত আতঙ্ক ছড়ায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়।
শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রস্তাব মেনে নেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সংসদ বিলুপ্ত করা হয়।
সেনাবাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ে কয়েকটি রদবদল হয়, চাকরিচ্যুত হন মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান।
৭ আগস্ট: পুলিশের শীর্ষ পর্যায়ে রদবদল। চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে বাদ দিয়ে মো. ময়নুল ইসলামকে আইজিপি নিয়োগ। র্যা ব ও ডিএমপি কমিশনারও পরিবর্তন। অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন পদত্যাগ করেন। মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার নিয়োগ বাতিল করা হয়।
সাত বছর পর নয়া পল্টনে দলের সমাবেশে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে হাজির হন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এই সমাবেশে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন তারেক রহমান।
শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. ইউনূসের ৬ মাসের সাজা বাতিল করে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল। এদিন ফ্রান্স থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন ইউনূস। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ জামান জানান, পরদিন রাত ৮টায় অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নিতে পারে।
৮ আগস্ট: দুপুরে ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে নামেন ড. ইউনূস। তাকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা। সাংবাদিকদের ইউনূস বলেন, ‘আমার প্রথম কাজ শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা।’
রাতে বঙ্গভবনে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসসহ ১৪ জন উপদেষ্টাকে শপথ পড়ান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।