রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনসার সদস্য কর্তৃক রোগীর স্বজনকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে হেনস্তা করা হয় সাংবাদিককেও। নিয়ে নেওয়া হয় সাংবাদিকের মোবাইল ও পরিচয় পত্র। শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এই ঘটনা ঘটে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় হাসপাতালের ১০ নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন সন্তানের নেবুলাইজার আনার জন্য বারবার নার্স এর কাছে ধরনা দিচ্ছিলেন নগরীর তালতলা এলাকার আব্দুল বাতেন মিয়া। এ নিয়ে সেখানে বচসা তৈরি হলে বাতেন মিয়াকে বেধড়ক মারধর করেন উপস্থিত আনসার সদস্যরা।
এ খবর পেয়ে পেয়ে সেখানে সংবাদ সংগ্রহের জন্য যান স্থানীয় দৈনিক বায়ান্নর আলোর স্টাফ রিপোর্টার ফেরদৌস জয়। এ সময় আনসার সদস্যরা তার মোবাইল ফোন এবং পরিচয় পত্র কেড়ে নিয়ে তাকে হেনস্তা করে।
এই ঘটনার পর সেখানে উপস্থিত হন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আশিকুর রহমান এবং আনসারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। প্রাথমিক তদন্ত শেষে হাসপাতালের পরিচালকের কার্যালয়ের কক্ষে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, আনসার, সাংবাদিক এবং পুলিশের যৌথ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আনসার সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, আকবর আলী ও রাশেদুল ইসলামকে হাসপাতাল থেকে প্রত্যাহার এবং সাময়িকভাবে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়াও তদন্ত সাপেক্ষে স্থায়ী বহিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত তিন আনসার সদস্য কোথাও দায়িত্ব পালন না করারও সিদ্ধান্ত হয়। দ্রুততম সময়ের মধ্যে মোবাইল ফোন এবং পরিচয় পত্র ফিরিয়ে দেয়ার কথা জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
মারধরের শিকার রোগীর স্বজন আব্দুল বাতেন মিয়া জানান, ‘আমার সন্তানের জন্য নেবুলাইজার প্রয়োজন। কিন্তু নার্সরা আমার সন্তানকে নেবুলাইজার দিচ্ছিল না। আমি একাধিকবার এবং এর পরে আমার স্ত্রী নার্সদের কাছে নেবুলাইজার চাইতে গেলে নাসরা আমার স্ত্রীর সাথে দুর্ব্যবহার করেন। আমি এর প্রতিবাদ জানালে সেখানে কর্তব্যরত আনসার সদস্যরা কোন কারণ ছাড়াই আমাকে মারধর করেন। এরপর আমাকে ধরে নিয়ে এসে পরিচালকের কার্যালয়ের সামনে একটি রুমে বন্দী করে রাখেন। বিষয়টি আমি তাৎক্ষণিকভাবে আমার পরিচিত সাংবাদিককে জানাই। ওই সাংবাদিক এসে আমার সাক্ষাৎকার নিতে গেলে আনসার সদস্যরা ওই সাংবাদিককে আর মোবাইল এবং পরিচয়পত্র ছিনিয়ে নেয়।’
হেনস্তার শিকার সাংবাদিক বলেন, ‘এই ধরনের ঘটনার খবর পেয়ে আমি হাসপাতালে যাই। গিয়ে দেখি হাসপাতালে পরিচালকের কার্যালয়ের একটি কক্ষে মারধরের শিকার ওই রোগীর স্বজনকে বন্দী করে রাখা হয়েছে। আমি তার ইন্টারভিউ নিতে গেলে উপস্থিত আনসার সদস্যরা আমাকে হেনস্তা করে। গালাগালি করেন এবং আমার মোবাইল ফোন ও পরিচয় পত্র ছিনিয়ে নেন।’
রংপুর সদর উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কার্যালয় পরিদর্শক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জানান, ‘প্রাথমিক তদন্তে তিনজনের বিরুদ্ধে অপেশাদার আচরণের প্রমাণ পাই। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের যৌথ বৈঠকে ওই ৩ দিন সদস্যকে প্রত্যাহার এবং স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়া হবে। মোবাইল ফোন এবং পরিচয় পত্র ছিনিয়ে নিলে সেটি ফেরত দেয়া হবে।’
রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আশিকুর রহমান জানান, ‘রোগীর স্বজনকে আনসার সদস্য কর্তৃক মারধরের ঘটনাটি একটি দুঃখজনক। কোনভাবেই এটা মেনে নেয়া যায় না। আনসার কর্তৃপক্ষ হাসপাতাল থেকে ওই তিন সদস্যকে প্রত্যাহার এবং সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। এছাড়াও বিভাগীয় কঠোর শাস্তির কথা বলেছে। আমরা বলেছি ওই তিন আনসার সদস্যকে আর কোথাও আনসার সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন যেন করতে না পারে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য। সেটিও তারা রাজি হয়েছেন।’
হাসপাতাল পরিচালক জানান, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা এবং রোগী ও স্বজনদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা যেকোনো ধরনের কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করব।