রবিবার, ০৫ জানুয়ারী ২০২৫, ০৬:২৯ পূর্বাহ্ন

যমুনা নদীতে নৌকার পরিবর্তে ঘোড়ার গাড়ি!

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশের সময়ঃ বৃহস্পতিবার, ২ জানুয়ারী, ২০২৫
  • ১ প্রদর্শন করেছেন

বগুড়ার সারিয়াকান্দির যমুনা নদীতে নাব্য সংকট দেখা দিয়েছে। এতে এ উপজেলার বেশ কয়েকটি নৌরুট বন্ধ হয়ে গেছে। কৃষিপণ্য পরিবহণে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন কৃষকরা। নৌকার পরিবর্তে কৃষকরা ঘোড়ার গাড়িতে করে বেশি ভাড়া দিয়ে কৃষিপণ্য পরিবহণ করছেন।

 

পাশাপাশি যমুনার বুকে নতুন চর জেগে ওঠায় কৃষকরা সেখানে বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। এখানে নদীবন্দর করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে কৃত্রিম নৌপথ সৃষ্টি করে এ সমস্যার সমাধান করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সারিয়াকান্দি উপজেলায় যমুনা নদীতে বছরের ছয় মাসের বেশি সময় নাব্য সংকট দেখা দেয়। গত কয়েক বছরে নদী তার গতিপথ পরিবর্তন করেছে। যমুনার মূল স্রোতধারা এখন চালুয়াবাড়ী ও কাজলা ইউনিয়নের পূর্ব সীমানা দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া কর্ণিবাড়ী ও বোহাইল ইউনিয়নে পশ্চিম সীমানা দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

 

এ চারটি ইউনিয়নের পশ্চিমে সারিয়াকান্দি উপজেলা সদর এবং বগুড়া জেলা সদর অবস্থিত। তাই দুটি ইউনিয়নের পশ্চিমে বিশালাকৃতির চরের সৃষ্টি ও যমুনার নাব্য সংকট দেখা দিয়েছে। নাব্যতা সংকটের জন্য উপজেলার সদর ইউনিয়নের আলতাফ আলীর খেয়াঘাট, হাটশেরপুর ইউনিয়নের হাসনাপাড়া ও নিজবলাইল খেয়াঘাট এবং চালুয়াবাড়ী ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি নৌঘাট বন্ধ হয়েছে। ফলে এসব নৌরুটে আর কোন নৌকা চলাচল করছে না।

 

নৌকার পরিবর্তে এসব নৌরুটে কৃষকরা ঘোড়ার গাড়িতে করে বেশি ভাড়া দিয়ে কৃষিপণ্য পরিবহণ করছেন। অনেকে হেঁটে ঘাড়ে করে অনেক কষ্টে কৃষিপণ্য, গো ও পশুখাদ্য পরিবহণ করছেন। এছাড়া নাব্য সংকটে পুরো যমুনা নদী জুড়ে অসংখ্য ডুবোচরের সৃষ্টি হয়েছে। এসব ডুবোচরে চলন্ত নৌকা আটকে যাওয়া এখন নিত্যকার ঘটনা।

 

এদিকে যমুনা নদীর নাব্য সংকটে উপজেলার একমাত্র ব্যস্ততম সারিয়াকান্দি মাদারগঞ্জ নৌরুটও বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। পরে এ নৌরুট খনন করা হয়েছে। ফলে কোনো মতে নৌকাগুলো কালিতলা নৌঘাট দিয়েই চলাচল করছে। তবে এ নৌরুট দিয়ে যখন নৌকা চলাচল করে তখন মনে হয় কোনো ড্রেনের মধ্যে দিয়ে নৌকাগুলো চলাচল করছে।

 

বর্তমানে যেখানে যমুনা নদীর মূল স্রোতধারা বয়ে চলেছে সেখান থেকে হাটশেরপুর ইউনিয়নের বলাইল বন্যা নিয়ন্ত্রণ স্পারের আনুমানিক দূরত্ব ছয় কিলোমিটার এবং হাসনাপাড়া স্পারের দূরত্ব পাঁচ কিলোমিটার। সদর ইউনিয়নের কালিতলা গ্রোয়েন বাঁধ হতে বর্তমান স্রোতধারার নদীর দূরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার এবং দীঘলকান্দি হার্ডপয়েন্ট হতে দূরত্ব চার কিলোমিটার। কর্ণিবাড়ী ইউনিয়নের দেবডাঙা হার্ডপয়েন্ট হতে দূরত্ব চার কিলোমিটার। এ দূরত্ব পাড়ি দিয়ে কৃষকদের ঘোড়া বা গরুর গাড়ি দিয়ে ফসলাদি বাড়িতে নিয়ে আসতে মোটা অঙ্কের পরিবহণ ভাড়া গুনতে হচ্ছে।

 

অন্যদিকে পানি না থাকায় উপজেলার যমুনা নদীতে বিশালাকার বেশ কিছু চরের সৃষ্টি হয়েছে। যেখানে পলি পরে বেশ কিছু উর্বর ভূমির সৃষ্টি হয়েছে। এসব জমিতে কৃষকেরা মরিচ, ভুট্টা, মিষ্টি কুমড়া, ধানসহ নানা ধরনের শাকসবজি চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। এছাড়া প্রতিবছর এখানে বিশালাকার গো চারণভূমির সৃষ্টি হচ্ছে। এসব গো চারণভূমিতে চরবাসী গরু, মহিষ, ভেড়া, ছাগল পালন করে উপকৃত হচ্ছেন।

 

সারিয়াকান্দি উপজেলার কাজলা ইউনিয়নের কুড়িপাড়া চরের আজিজার রহমান বলেন, যমুনা নদীতে নতুন চর পড়ায় সেখানে আমরা নানা ধরনের ফসল ফলাচ্ছি। কিন্তু যমুনায় পানি না থাকায় ফসলগুলো আমরা নৌকাযোগে উপজেলা সদরে বিক্রি করতে নিয়ে যেতে পারছি না। উপজেলা সদর থেকে বিভিন্ন সার কীটনাশক নিয়ে আসতে পারছি না। নিরুপায় হয়ে আমরা এখন ঘোড়ার গাড়িতে উচ্চ ভাড়া দিয়ে কৃষিপণ্য পরিবহণ করছি। এতে আমাদের লাভ কম হচ্ছে এবং কৃষি ফসলে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

 

আলতাফ আলী নৌঘাটের মাঝি সাইফুল ইসলাম জানান, যমুনা নদীতে পানি না থাকায় গত ১৫ দিন আগে থেকেই তার নৌঘাট বন্ধ হয়েছে। প্রায় চার লাখ টাকা দিয়ে তিনি ঘাটটি ইজারা নিয়েছিলেন। তার আসল টাকা এখনো ওঠেনি। তাই তিনি এখন লোকসানে আছেন। এ নৌরুট দিয়ে যাত্রীরা পায়ে হেঁটে চলাচল এবং ঘোড়ার গাড়ি দিয়ে কৃষিপণ্য পরিবহন করছেন।

 

সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহরিয়ার রহমান বলেন, সারিয়াকান্দিকে নদীবন্দর করার প্রস্তাবনা ইতোমধ্যেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে সারিয়াকান্দির যমুনা নদীতে ড্রেজিং কাজ শুরু করা হবে। কৃত্রিমভাবে এখানে কিছু নৌরুট চালু করা হবে। এতে কৃষকের সব ধরনের ভোগান্তির অবসান হবে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও সংবাদ