টালিউডের বর্ষীয়ান অভিনেত্রী ও নৃত্যশিল্পী অঞ্জনা রহমান না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। গতকাল শুক্রবার রাতে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন মারা যান।
অঞ্জনা রহমান ছোটবেলা থেকে নৃত্যের প্রতি আগ্রহের কারণে বাবা-মা তাকে নৃত্য শিখতে ভারতে পাঠান। সেখানে ওস্তাদ বাবুরাজ হীরালালের অধীনে নাচের তালিম নেন এবং কত্থক নৃত্য শিখেন এ অভিনেত্রী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মাত্র চার বছর বয়সে নৃত্যশিল্পী হিসেবে মঞ্চে অঞ্জনার আত্মপ্রকাশ ঘটে। এরপর আর থেমে থাকেননি। নৃত্যশিল্পী হিসেবে ছোট থেকেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পারফর্ম করেছেন তিনি। সাদাকালো থেকে রঙিন বাংলা চলচ্চিত্রের সাক্ষী গুণী এ অভিনেত্রী।
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে অঞ্জনা রহমান তিন শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন। শুধু বাংলাদেশই নয়, বিশ্বের ৯টি দেশের ১৩টি ভাষার সিনেমায় অভিনয় করেছেন অভিনেত্রী। দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, তুরস্ক, থাইল্যান্ড ও শ্রীলংকা। অঞ্জনা দাবি করেছিলেন, তিনিই দেশের একমাত্র চিত্রনায়িকা যিনি ৯ দেশের এতগুলো ভাষায় প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন।
১৯৮১ সালে ‘গাংচিল’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার লাভ করেন অঞ্জনা। এরপর ১৯৮৬ সালে ‘পরিণীতা’ সিনেমায় ললিতা চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় করে একই পুরস্কার লাভ করেন তিনি। এ ছাড়া তিনি ‘পরিণীতা’, ‘মোহনা’ ও ‘রাম রহিম জন’ সিনেমার জন্য তিনবার বাচসাস পুরস্কার লাভ করেন।
অভিনয়ের পাশাপাশি অঞ্জনা চলচ্চিত্র প্রযোজনা ও করেছেন। তার প্রযোজিত চলচ্চিত্রগুলো হলো— ‘নেপালী মেয়ে’, ‘হিম্মতওয়ালী’, ‘দেশ-বিদেশ’, ‘বাপের বেটস’, ‘রঙিন প্রাণ সজনী’, ‘শ্বশুরবাড়ি’, ‘লাল সর্দার’, ‘রাজা রানী বাদশা’, ‘ডান্ডা মেরে ঠান্ডা’, ‘বন্ধু যখন শত্রু’।
অঞ্জনা রহমান ঢালিউডের শীর্ষ জনপ্রিয় সব অভিনেতার সঙ্গেই অভিনয় করেছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে— নায়করাজ রাজ্জাক, আলমগীর, জসিম, বুলবুল আহমেদ, জাফর ইকবাল, ওয়াসিম, উজ্জ্বল, ফারুক, ইলিয়াস জাভেদ, ইলিয়াস কাঞ্চন, সোহেল চৌধুরী, রুবেল, সুব্রত বড়ুয়া, মান্না প্রমুখ। এ ছাড়া মিঠুন চক্রবর্তী (ভারত), ফয়সাল (পাকিস্তান), নাদিম (পাকিস্তান) জাভেদ শেখ (পাকিস্তান), ইসমাইল শাহ (পাকিস্তান), শীবশ্রেষ্ঠ (নেপাল) ও ভুবন কেসি (নেপাল) অভিনেতাদের সঙ্গে অভিনয় করেছেন অঞ্জনা।