শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:৪৪ অপরাহ্ন

৫০ কোটির সরকারি ভূমিতে পিতা-পুত্রের হরিলুট

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশের সময়ঃ শনিবার, ১১ জানুয়ারী, ২০২৫
  • ০ প্রদর্শন করেছেন

সুনামগঞ্জের ছাতকে দীর্ঘদিন যাবত সড়ক ও জনপথের ৫০ কোটি টাকার সরকারি ভূমিতে লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে তা বন্ধ করা হচ্ছে না। সরকারি ভূমিতে বিভিন্ন কৌশলে মাটি, পাথর ও গাছ বিক্রি করার দৃশ্য এলাকাবাসীর চোখের সামনে ঘটলেও এটি ওপেন সিক্রেট হিসেবে পরিণত হয়েছে।

এসব ঘটনায় সড়ক ও জনপথ কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তবে গত ২৭ ডিসেম্বর সুরমা নদীর তীর থেকে অবৈধভাবে মাটি বিক্রির সময় যৌথ বাহিনীর হাতে আটক হয় এক ট্রাকচালক ও মাটি ক্রয়দাতা। সেসময় তারা জানায়, সাজ্জাদ মাহমুদ মনির ওরফে ইয়াবা মনির টাকার বিনিময়ে তাদের নিকট বিক্রি করছেন এসব মাটি। যা পূর্বেও নিয়েছেন তারা।

এ ঘটনার পর বিষয়টি ব্যাপক আকারে প্রচার হয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে। এরপর প্রকাশ্যে উঠে আসে মাটিখেকো চক্রের প্রধান হোতা সাজ্জাদ মনিরের নাম। এ বিষয়ে সাজ্জাদ মনির সহ পাঁচজনকে আসামি করে ছাতক থানায় মাটি ব্যবস্থাপনা আইনে দায়ের করা হয় মামলা।

মামলায় সাজ্জাদ মাহমুদ মনির কয়েক দিন পালিয়ে বেড়ালেও জামিনে এসে আবারও শুরু করেছে এসব কর্মকাণ্ড। ঘটনার দিন সরেজমিনে দেখা যায়, সুরমা নদীর তীর ছাড়াও চোখের সামনেই সড়ক ও জনপথের ভূমি থেকে মাটি নেওয়ার দৃশ্য। মাটি নেওয়ার কারণেই ওপরে পড়েছে বড় বড় গাছ। ২০২৩ সাল থেকে এভাবেই শতশত গাছ কর্তণ করা হয়েছে এসব সরকারি ভূমি থেকে।

এত কিছুর পরও চোখের সামনে পরে থাকা গাছটিও নিয়ে গেছেন মনির ও তার পিতা আবুল বাশার। মাটিখেকোদের এমন কর্মকাণ্ডে হুমকিতে পড়েছে এলাকার পরিবেশ। ২০২৩ সাল থেকে গাছ কাটার এমন দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করে রেখেছেন স্থানীয়রা। তবে এসব বিষয়ে কোনো তথ্য নেই সড়ক ও জনপথ বিভাগের কাছে। পূর্বের এসব দৃশ্য বাদ দিলেও ঘটনার দিন দেখা সেই গাছটি কোথায় তা জানতে চাওয়া হয় অবৈধভাবে সরকারি বাসায় বসবাসকারী অবসরপ্রাপ্ত ফেরি চালক আবুল বাশারের কাছে। তিনি জানান, গাছটি তুফানে ফেলে দেয়। গাছটি বর্তমানে আছে কোথায়, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেটা আপনাকে বলব কেন? যাকে বলার তাকে বলেছি।

সরকারি এসব গাছের বিষয়েও কোনো তথ্য নেই সড়ক ও জনপথের অফিসের কাছে। আবুল বাশার নোয়াখালী জেলার চাটখালী উপজেলার বানশা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি সড়ক ও জনপথ থেকে অনেক আগে অবসর নিলেও বর্তমানে চুক্তিভিত্তিতে কাজ করছেন দোয়ারাবাজার ফেরি চালক হিসেবে। তার ছেলে সাজ্জাদ মাহমুদ মনিরের জন্মগত নাম মতিউর রহমান হলেও রহস্যজনক কারণে ২০১৬ সালে এভিডেভিডের মাধ্যমে সাজ্জাদ মাহমুদ মনির নাম ধারন করে এখানের ভোটার হয়েছেন। পিতা আবুল বাশারের চাকুরির সুবাদেই সরকারি বাসায় বসবাস করে আসছিল সে। পিতার চাকুরির অবসর হলেও এখনো তাদের দখলেই রয়েছে সরকারি বাসা ও ৫০ কোটি টাকার ভূমি। আর এই সুবাদে পিতা আবুল বাশারের প্রকাশ্যে সহযেগিতায় সাজ্জাদ মাহমুদ মনির বিভিন্ন কৌশলে লুটপাট করছে সড়ক ও জনপথ বিভাগের কোটি কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তি।

কাগজপত্র ঘাটাঘাটি করে দেখা যায়, ছাতকের লাফার্জ ফেরিঘাট সংলগ্ন এলাকায় ২.৩০ একর ভূমি রয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগের। সামাজিক বনায়ন বৃক্ষরোপণের জন্য ২০০৬ সালে ভূমিটি লিজ দেওয়া হয় সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মচারীদের ১৪ জন স্ত্রী সন্তানের নামে। যার মধ্যে বেশির ভাগই আবুল বাশারের আত্মীয়-স্বজন বলে জানা গেছে।

আব্দুল্লা নামের একজন সিলেটের জালালাবাদ এলাকার হলেও তিনি অনেক আগেই মৃত্যুবরণ করেছেন। আর লিজের অংশীদার আছেন ছাতক উপজেলায় মাত্র তিনজন। তাদের সন্তানদের নামে লিজ নেওয়া এই ভূমিতে ৫০ ভাগ শেয়ার রয়েছে সড়ক ও জনপথ কর্তৃপক্ষ। সড়ক ও জনপথ বিভাগের দেওয়া ৩০টি শর্ত ভঙ্গ করে পিতা-পুত্র চালাচ্ছেন এমন কর্মকাণ্ড।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সড়ক ও জনপথ বিভাগের এক কর্মকর্তা মাটি ও গাছ বিক্রির বিষয় নিশ্চিত করেছেন। তবে সড়ক জনপথ বিভাগের ভূমিতে এমন কর্মকাণ্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে, বিভাগীয় উপ প্রকৌশলী শাদাত হোসেন বলেন, আমি এই এলাকায় একদম নতুন আসছি। তবে এসব বিষয় শুনা যাচ্ছে। শিগগিরই এ বিষয়ে যাচাই বাচাই করে ওপর মহলকে অবগত করবেন তিনি।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও সংবাদ