পাওয়ারপ্লেতে বোলিংটা অনেকদিন ধরেই ‘পাওয়ারলেস’ ছিল কলকাতা নাইট রাইডার্সের। গেল আইপিএলে যখনই সে ধাঁধার সমাধানটা করল কেকেআর, দশ বছর পর শিরোপার দেখাটা পেয়ে গেল তখনই।
এ সমাধানটা তারা করেছিল মিচেল স্টার্ককে দিয়ে। ২০১৮ সাল থেকে শুরু করে ছয়টি মৌসুমে কেকেআর প্রতি ইনিংসে গড়ে পাওয়ারপ্লেতে ১.৫টিরও কম উইকেট পেয়েছিল। সেই ঘাটতি পূরণেই স্টার্ক ছিল বড় অস্ত্র। শুরুর দিকে বিবর্ণ ছিলেন, তবে প্লে অফে ঠিকই জ্বলে ওঠেন তিনি। প্লে অফ আর ফাইনাল, দুই ম্যাচেই হায়দরাবাদকে গুঁড়িয়ে দেন রীতিমতো।
তবে মেগা নিলামের নিয়ম অনুযায়ী স্টার্ককে ধরে রাখতে পারেনি কেকেআর। তারা ১০ কোটি পর্যন্ত বিড করলেও আর ধরে রাখতে পারেনি এই অস্ট্রেলিয়ান তারকাকে। তার জায়গায় এবার তারা দলে নিয়েছে স্পেন্সার জনসনকে। তার সঙ্গে দেশি পেসার বৈভব অরোরাকেও, যিনি ২০২৪ মৌসুমে পাওয়ারপ্লেতে ৯টি উইকেট নিয়েছিলেন।
তবে সে কৌশলটা ব্যর্থই হয়েছে, অন্তত সবশেষ চেন্নাই ম্যাচের আগ পর্যন্ত। চলতি মৌসুমে শুক্রবারের ম্যাচের আগ পর্যন্ত কেকেআর মোটে ৫টি পাওয়ারপ্লে উইকেট পেয়েছে। এই সময়ে তাদের গড় ৫৬.২০ – যা সব দলের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ। অরোরা ও জনসন দুজনই বলকে সুইং করাতে ফুল লেংথে বল করার চেষ্টা করেছে, কিন্তু তাতে উল্টো বিপদ বেড়েছেই। কেকেআর পেসাররা ফুল লেংথে বল করেছে ২৪.০৫% সময় – যা শুধু এলএসজির চেয়ে কম। কিন্তু যখন ফুল লেংথে বল করেছে, তখন রান দিয়েছে প্রতি ওভারে ১৪.৮৪ করে – যা সব দলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এতে বোঝা যায় স্টার্কের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার অভাবটা কতটা প্রকট।
তবে চেন্নাই সুপার কিংসের বিপক্ষে কেকেআর পরিকল্পনায় বড় পরিবর্তন আনে। পেসাররা মাত্র দুইবার ফুল লেংথে বল করেন, তাও ব্লকহোলে। অরোরা গুড লেংথেই বল রাখেন, যেখানে তিনি বলের সুইং ও সিম মুভমেন্ট দুটোই পান। হারশিত রানা পঞ্চম ওভারে এসে নিজের প্রথম বলেই রচিন রবীন্দ্রকে আউট করেন, এক ব্যাক অব লেংথ ডেলিভারিতে।
কেকেআরের পুরনো কৌশল ছিল পাওয়ারপ্লেতে স্পিনার ব্যবহার করা। ২০১৮-২১ এবং ২০২২-২৪ চক্রে তারা পাওয়ারপ্লেতে সবচেয়ে বেশি স্পিন ওভার করিয়েছিল। এতে মাঝের ওভারগুলোতে স্পিন ঘাটতি থাকত, কিন্তু শুরুতে নিয়ন্ত্রণ পেত।
চিপকের পিচে যেখানে বল থেমে আসছিল, সেখানে দুই বাঁহাতি ওপেনারকে সামনে পেয়ে কেকেআর খেলে এক মাস্টারস্ট্রোক। স্পেন্সার জনসনের জায়গায় একাদশে ঢোকা মইন আলিকে নতুন বল দেওয়া হয়। নিজের পরিচিত মাঠে মইন আলি ডেভন কনওয়ের উইকেট নেন এবং দেন এই মৌসুমের প্রথম স্পিনারের করা মেডেন ওভার। কেকেআর এই প্রথম একাধিক ওভার স্পিন দিয়ে পাওয়ারপ্লে চালায়। মইনের স্পেল ছিল: ২-১-৪-১।
এতে কেকেআরের হাতে নারাইন ও চক্রবর্তীকে ধরে রাখার সুযোগ ছিল, যাদের তারা পরবর্তীতে মিডল অর্ডারে ব্যবহার করে। এই দুই স্পিনার মিলে ৮ ওভার বল করে মাত্র ৩৫ রান দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ উইকেট তুলে নেয়, যাতে চেন্নাইয়ের ইনিংস ভেঙে পড়ে। সে ধাক্কা আর অন্যদের ওপর চড়াও হয়ে পুষিয়ে দিতে পারেনি চেন্নাই। ম্যাচটা হারে বিশাল ব্যবধানে। কেকেআর পেয়ে যায় তাদের তৃতীয় জয়।