মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৪৯ অপরাহ্ন

যশোরের ‍দুঃখের স্থায়ী সমাধানের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশের সময়ঃ মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল, ২০২৫
  • ১ প্রদর্শন করেছেন

যশোরের দুঃখ হিসেবে পরিচিত ভবদহের জলাবদ্ধতা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের পথে হাঁটছে সরকার। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে।

মঙ্গলবার দুপুরে ভবদহ জলাবদ্ধ অঞ্চল পরিদর্শনকালে এ কথা জানান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই আজম ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। অন্তর্বর্তী সরকারের তিন উপদেষ্টা একসঙ্গে এ অঞ্চল পরিদর্শনে আসেন। এ সময় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবরাও উপস্থিত ছিলেন।

মঙ্গলবার দুপুরে ভবদহ এলাকা পরিদর্শন শেষে ভবদহ কলেজ মাঠে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

তিনি বলেন, গতবারের মতো এবার বর্ষায় যাতে জলাবদ্ধতা না হয়, সেজন্য সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ভবদহ এলাকার নদী খনন কাজ শুরু হবে। জলাবদ্ধতা নিরসনে যেসব সেচপাম্প কাজ করছে, সেগুলোর বিদ্যুৎ বিল ইতোমধ্যে ৪৬ শতাংশ কমিয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ। এই এলাকার জন্য কৃষি ব্যাংকের ঋণের সুদ মওকুফের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ভবদহ জলাবদ্ধতা সমস্যার স্থায়ী সমাধান যাতে হয়, সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ২০০৫ সালে ভবদহ সমস্যার সমাধান করা সহজ ছিল; কিন্তু সেই সময় সরকার সদিচ্ছা দেখায়নি। বর্তমান সরকার এ সমস্যার চিরস্থায়ী সমাধানের জন্য ইতোমধ্যে ভিজিবিলিটি স্ট্যাডি শুরু করেছে। তিনি বলেন, পক্ষ-বিপক্ষ সবার কাছ থেকে এ ব্যাপার মতামত নেওয়া হবে। এরপর বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

পানিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, প্রায় চিরস্থায়ী হয়ে ওঠা ভবদহ সমস্যা রাতারাতি সমাধান করা যাবে না। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কাজ শুরু করেছে। এ কাজ দীর্ঘমেয়াদি হবে। স্বল্পকালীন সমাধান হিসেবে আমডাঙ্গা খাল খনন করে পানি বের করা হয়েছে। এর ফলে অনাবাদী থাকা ২০ হাজার হেক্টরের মধ্যে ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে এবার বোরো চাষ হয়েছে।

তিনি জানান, এই খাল আরও চওড়া করে খনন করা হবে। এতে আশা করা যায়, অনাবাদি জমি কমে আসবে। হাওড় অঞ্চলের মতো ভবদহ এলাকার জন্যও স্থায়ী বরাদ্দ রাখা যায় কিনা তা বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো সমন্বিতভাবে কাজ করছে।

এদিকে তিন উপদেষ্টার আগমনের খবরে ভবদহের ২১ ভেন্ট স্লুইস গেটের কাছে সমাবেত হন ভুক্তভোগীরা। তারা পানি উন্নয়ন বোর্ডের অপরিণামদর্শী প্রকল্প বাদ দিয়ে জোয়ারাধার বা টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট (টিআরএম) চালু করার দাবি করেন।

একপর্যায়ে কিছুসংখ্যক লোক টিআরএম বাস্তবায়নের বিরোধিতা করে স্লোগান দিতে দিতে ভবদহ বাজারে আসেন। এই সময় দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।

স্থানীয়রা জানান, টিআরএমের বিরোধিতাকারীরা মূলত মাছের ঘের মালিকদের ভাড়া করা লোক। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া কয়েক ব্যক্তি সাংবাদিকদের কাছে তা স্বীকারও করেন।

এর আগে মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে যশোরের অভয়নগরের নওয়াপাড়া সরকারি কলেজ মাঠে হেলিকপ্টারে নামেন তিন উপদেষ্টা। এরপর তারা এ অঞ্চলের ধানখেত পরিদর্শন করেন। এর আগে থেকে ভবদহ পারের মানুষেরা ভবদহের স্থায়ী সমাধানে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া সম্বলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে সেখানে অবস্থান নেন।

জানা যায়, যশোরের অভয়নগর, মণিরামপুর, কেশবপুর এবং খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার অংশবিশেষ নিয়ে ভবদহ অঞ্চল। পলি পড়ে এ অঞ্চলের পানি নিষ্কাশনের মাধ্যম মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদী নাব্য হারিয়েছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে উজানের পানি এসব নদী দিয়ে নামতে পারে না। নদী উপচে সেই পানি বিল-মাঠ ছাপিয়ে ঘরবাড়িতে প্রবেশ করে। বর্ষায় জলাবদ্ধতায় খেতের ফসল, ঘেরের মাছ সবই কেড়ে নেয় পানি। জলাবদ্ধতায় আটকে থাকে গ্রামের শতাধিক ঘরবাড়ি, ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট, কৃষিজমি এবং মাছের ঘের।

এ অঞ্চলের ৪ লাখের অধিক মানুষের ঠাঁই হয় মহাসড়কের ধারে বা স্কুল কিংবা আশ্রয় কেন্দ্রে। অথচ বিগত চার দশকে ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রায় ৬৫০ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলেও জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান হয়নি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বিগত সরকারগুলোর স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তারা বরাদ্দের অর্থের সিংহভাগ লুটপাট করেছে। তাই বছরের পর বছর জলাবদ্ধতায় ভোগতে থাকা মানুষেরা দীর্ঘদিন স্থায়ী সমাধানে টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট (টিআরএম) চালু ও আমডাঙ্গা খাল সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও সংবাদ