রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৫৪ পূর্বাহ্ন

গাজায় ৫ বছরের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিল হামাস

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • প্রকাশের সময়ঃ শনিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৫
  • ৩ প্রদর্শন করেছেন

ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গাজায় যুদ্ধ বন্ধ ও ইসরাইলি বন্দিদের মুক্তির বিনিময়ে তারা পাঁচ বছরের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে প্রস্তুত।

হামাসের একটি প্রতিনিধিদল বর্তমানে কায়রোতে অবস্থান করছে। সেখানে তারা মিশরীয় মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে গাজায় ১৮ মাস ধরে চলা ইসরাইলি আগ্রাসন থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে আলোচনা করছে।

শনিবার সেই আলোচনার মধ্যেই এমন প্রস্তাব দিয়েছে ফিলিস্তিনের সংগঠনটি। খবর মেহর নিউজের।

একদিকে গাজাজুড়ে চলছে ইসরাইলের তীব্র বিমান হামলা, অন্যদিকে কায়রোতে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খুঁজছে হামাসের প্রতিনিধিদল। এই বিপরীত দৃশ্য আজ ফিলিস্তিন সংকটের বিভাজনরেখা টেনে দিয়েছে আরও স্পষ্টভাবে।

ডেইলি সাবাহ জানিয়েছে, মঙ্গলবার কায়রো পৌঁছেছে হামাসের এই প্রতিনিধিদল। যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন ফিলিস্তিনি মুক্তিকামী সংগঠনটির প্রধান মুখপাত্র ও আলোচক খলিল আল-হাইয়া।

হামাসের দাবি, তারা যুদ্ধবিরতি কার্যকরের জন্য ‘নতুন কিছু ধারণা’ নিয়ে এসেছেন।

হামাসের ওই কর্মকর্তা জানান, হামাস গাজা উপত্যকায় পাঁচ বছরের জন্য একটি পূর্ণ যুদ্ধবিরতির পরিকল্পনা করছে। যার মাধ্যমে তারা গাজার যুদ্ধ পুরোপুরি বন্ধ করতে চান।

তিনি বলেন, ‘হামাস একটিমাত্র ধাপেই সব বন্দি বিনিময় এবং পাঁচ বছরের যুদ্ধবিরতিতে প্রস্তুত’।

এদিকে কায়রোতে যখন হামাস আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খুঁজছে, ঠিক তখনই ইসরাইলি বাহিনীর বিমান হামলায় গাজায় আরও ৫৬ ফিলিস্তিনি নিহত ও ১০৮ জন আহত হয়েছেন।

এর মধ্যে গাজার একটি বাড়িতে ইসরাইলি বিমান হামলায় অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন। আরও অনেকে ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়েছে বলে জানিয়েছে এএফপি।

এ নিয়ে গত ১৮ মার্চ থেকে গাজায় নতুন করে ইসরাইলি হামলা শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ২,১১১ জন শহিদ এবং ৫,৪৮৩ জন আহত হয়েছেন।

ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ নিয়ে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় এ পর্যন্ত ৫১,৪৯৫ জন নিহত হয়েছেন। সেই সঙ্গে ইসরাইলি হামলায় আহতের সংখ্যা বেড়ে ১,১৭,৫২৪ জনে পৌঁছেছে।

গাজা উপত্যকায় এখনো হাজার হাজার মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন এবং ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছেন। তাদের তথ্য সমন্বয় করে গাজার তথ্য অফিস মোট নিহতের সংখ্যা ৬২ হাজারেরও বেশি বলে উল্লেখ করেছে।

এদিকে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ একদিন আগে জোর দিয়ে বলেছিলেন, তেলআবিব গাজা উপত্যকায় হামলা অব্যাহত রাখবে, যাতে হামাসের ওপর চাপ তৈরি করা যায়।

তবে বাস্তবে এসব হামলা হামাসকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করতে পারেনি।

কারণ, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর গাজার ধ্বংসস্তূপের নিচে থেকে যুদ্ধ এখন আর কৌশল নয়, এখন টিকে থাকার এক সংগ্রাম চলছে। হামাসের অস্তিত্ব এখন গোটা ফিলিস্তিন জাতির প্রতীক।

গত ১৮ মাসের পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন। তারপর দুই মাসের অবরোধ ও ক্ষুধাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার পরও ইসরাইল এখনো সেই দিবাস্বপ্ন দেখেই চলেছে যে, হামাসও ‘ফাতাহ’র মতো’ হবে—অর্থ নেবে, বন্দি দেবে, অস্ত্র ছাড়বে।

তবে হামাস কখনোই ফাতাহ হতে রাজি নয়। ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠনটি বারবার বলে আসছে, তাদের দুটি মূল শর্ত রয়েছে। যে শর্তে তারা অনড়। তা হলো:

১) অস্ত্রত্যাগ নয়;

২) ইসরাইলি বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার।

তাদের প্রস্তাব—একটি দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতি। সব জিম্মির মুক্তির বিনিময়ে ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি এবং গাজার প্রশাসনিক ক্ষমতা অন্য দলগুলোর হাতে ছেড়ে দেওয়া। তবুও আত্মসমর্পণ নয়।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও সংবাদ