চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলা হিসাবরক্ষণ কার্যালয়টি বর্তমানে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সেবা নিতে গেলে এখানে ঘুষ ছাড়া কোনো ফাইলই ছাড়া হয় না।
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, পেনশন এবং অন্যান্য আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করতে গেলেই দিতে হয় মোটা অঙ্কের উৎকোচ।
সেবাগ্রহীতারা অভিযোগ করে বলেন, কার্যালয়ের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা এ কে এম নজরুল ইসলাম এবং হিসাব নিরীক্ষণ কর্মকর্তা রাজিব কুমার দত্ত এসব ঘুষ বাণিজ্যের মূল হোতা।
সম্প্রতি ফটিকছড়ি সরকারি কলেজের ২৩ জন শিক্ষক-কর্মচারীর ১ কোটি ৯ লাখ টাকার এরিয়ার বিল ছাড় করতে গিয়ে পাঁচ শতাংশ হারে ঘুষ দাবি করা হয়।
বিষয়টি নিয়ে কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে শিক্ষকদের বাকবিতণ্ডাও হয়। পরে গোপনে চার শতাংশ হারে ঘুষ দিয়েই অর্থ ছাড় করাতে বাধ্য হন তারা। শিক্ষকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রাজিব কুমার দত্ত এই ঘুষ লেনদেনে সরাসরি জড়িত।
কলেজের এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা শিক্ষক মানুষ, কতটাইবা বেতন পাই। বাধ্য হয়ে কিছু ‘উপরি’ দিয়ে সন্ধ্যায় বিল ছাড় করি। এদেশ কি কোনোদিন সুষ্ঠু হবে না?’
কাঞ্চননগরের মিলন নন্দী নামে এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘যে কোনো কাজে গেলেই টাকা লাগে। আমি চেক ছাড় করতে গিয়ে কয়েকদিন ঘুরেছি। শেষে অফিসের রাজিবকে টাকা দিয়েই ছাড় করতে হয়েছে।’
এক সরকারি কর্মচারী জানান, ‘মে মাসে বেতন সাবমিট করার পরও কার্যালয়ের গাফিলতির কারণে কর্মচারীরা এপ্রিল মাসের বেতনও পাননি। ইচ্ছাকৃতভাবেই তারা বিল আটকে রাখে।’
একজন শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, ‘অফিসিয়াল বিলের ক্ষেত্রে অডিটর রাজিব ৫ শতাংশ করে দাবি করেন। টাকা না দিলে বেতন ফারওয়ার্ডিং করেন না।’
কিছুদিন আগে উর্ধ্বতনদের দপ্তরে তাদের বিষয়ে অভিযোগ করেছিলেন শিক্ষকরা। অভিযোগে লিখেছিলেন, জিপিএফ নম্বর খোলা, বেতন নির্ধারণ, বকেয়া বিল, চূড়ান্ত বিল—সব ক্ষেত্রেই মোটা অঙ্কের ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ হয় না। এমনকি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২২৯টি স্লিপ বিলেও বিলপ্রতি ৫০০ টাকা করে ঘুষ দাবি করা হয়েছে। ঘুষ না দিলে শিক্ষকদের হুমকিও দেওয়া হয়। পেনশন এবং আনুতোষিক বিলে দাবি করা হয় ১৫-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
অভিযুক্ত হিসাব নিরীক্ষণ কর্মকর্তা রাজিব কুমার দত্ত বলেন, ‘কলেজের বিষয়ে অফিস প্রধানের সঙ্গে কী হয়েছে জানি না। আমি ঘুষ লেনদেনে জড়িত নই। কেউ কেউ হয়তো চা-নাস্তার জন্য দু-একশ টাকা দেন।’
উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা এ কে এম নজরুল ইসলাম বলেন, ‘কলেজের বিল দ্রুতই ছাড় দিয়েছি। কোনো গাফিলতি করিনি। অভিযোগ থাকলে দফতর ব্যবস্থা নেবে।’
উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী আহমদ মাস্টার বলেন, ‘সরকারি দপ্তরে যদি দুর্নীতি হয়, তবে জনগণ কিভাবে সেবা পাবে? এটি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘অনিয়মের বিষয়ে অভিযোগ পেলে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী নতুন বাংলাদেশে দুর্নীতি, অনিয়ম ও হয়রানির কোনো স্থান নেই।