বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫, ০৮:৩২ অপরাহ্ন

হাসিনার অডিও রেকর্ডিং নিয়ে যা বললেন মাহফুজ আলম

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশের সময়ঃ বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই, ২০২৫
  • ৩ প্রদর্শন করেছেন

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে পদচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথোপকথনের একটি অডিও রেকর্ডিং ‍সামনে এসেছে। যা থেকে জানা যায় যে, জুলাই-আগস্টে প্রাণঘাতী শক্তি প্রয়োগের অনুমতি দিয়েছিলেন নিজেই।

বিবিসি’র যাচাই করা ওই অডিও রেকর্ডিং অনুসারে, শেখ হাসিনা তার নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করার অনুমতি’ দেন এবং তারা (এসব বাহিনীর সদস্যরা) যেখানেই তাদের (আন্দোলনকারী) পাবে, গুলি করবে।

অজ্ঞাতনামা একজন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে শেখ হাসিনার কথোপকথনের ফাঁস হওয়া অডিওটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ যে তিনি সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের গুলি করার জন্য সরাসরি অনুমতি দিয়েছিলেন।

এ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে কথা বলেছেন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। তিনি বলেন, ‘হাসিনার অডিও এসেছে, ভিজুয়াল ও  আসবে শীঘ্রই। সত্য প্রকাশিত হবেই।’

বুধবার (৯ জুলাই) রাত ৮টা ৪ মিনিটে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ কথা বলেন।

এদিকে ফাঁস হওয়া অডিওটি সম্পর্কে জানেন এমন একটি সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে, গত বছরের ১৮ জুলাই নিজের সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে শেখ হাসিনা ওই ফোনালাপটি করেন।

বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফোনালাপের অডিওটি চলতি বছরের মার্চের শুরুতে কে ফাঁস করেছেন তা স্পষ্ট নয়। বিক্ষোভের পর থেকে হাসিনার কলের অসংখ্য ক্লিপ অনলাইনে প্রকাশিত হয়েছে যার অনেকগুলোই যাচাই করা হয়নি।

ফাঁস হওয়া ওই অডিও রেকর্ডিংয়ের কণ্ঠের সঙ্গে শেখ হাসিনার কণ্ঠস্বরের মিল শনাক্ত করেছে বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ।

বিবিসি আলাদাভাবে ইয়ারশটের অডিও ফরেনসিক এক্সপার্টদের দিয়েও এই রেকর্ডিংয়ের সত্যতা যাচাই করেছে এবং তারা এটিতে এডিট করার বা কোনো রকম পরিবর্তন করার কোনো প্রমাণ পায়নি। অডিওটি কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয়েছে এমন সম্ভাবনাও খুবই কম বলে তারা জানিয়েছে।

মানবাধিকার বা পরিবেশ রক্ষার ইস্যুতে অডিও সংক্রান্ত তদন্তের কাজ করে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ইয়ারশট। তারা বলছে, ফাঁস হওয়া রেকর্ডিংটি সম্ভবত এমন একটি ঘরে ধারণ করা হয়েছিল যেখানে ফোন কলটি স্পিকারে বাজানো হয়েছিল। কারণ এতে স্বতন্ত্র টেলিফোনিক ফ্রিকোয়েন্সি এবং ব্যাকগ্রাউন্ডে কিছু শব্দ ছিল।

ইয়ারশটের বিশেষজ্ঞরা রেকর্ডিংজুড়ে ইলেকট্রিক নেটওয়ার্ক ফ্রিকোয়েন্সি বা ইএনএফ শনাক্ত করেছে, যে ফ্রিকোয়েন্সি অন্য একটি ডিভাইস থেকে অডিও রেকর্ডিংয়ের ক্ষেত্রে প্রায়ই উপস্থিত থাকে। এটি এমন এক সূচক যার মানে হলো অডিওটিতে হেরফের করা হয়নি।

তারা শেখ হাসিনার বক্তব্যে ছন্দ, স্বর এবং শ্বাসের শব্দ বিশ্লেষণ করেছে এবং ধারাবাহিক নয়েজের স্তরও শনাক্ত করেছে। অডিওতে কৃত্রিম কোনো পরিবর্তন আনার প্রমাণও খুঁজে পায়নি।

ব্রিটিশ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনজীবী টবি ক্যাডম্যান বিবিসিকে বলেছেন, রেকর্ডিংগুলো তার (শেখ হাসিনার) ভূমিকা প্রমাণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এগুলো স্পষ্ট এবং সঠিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে এবং অন্যান্য প্রমাণ দ্বারা সমর্থিত।

তিনি বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) পরামর্শক হিসেবে কাজ করছেন যেখানে শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে মামলা চলছে।

আওয়ামী লীগের একজন মুখপাত্র বলেছেন, বিবিসির উল্লেখ করা টেপ রেকর্ডিংটি সত্য কিনা তা আমরা নিশ্চিত করতে পারছি না এবং এই টেপটিতে কোনো বেআইনি উদ্দেশ্য বা অসামঞ্জস্যপূর্ণ প্রতিক্রিয়া দিতেও দেখা যায়নি।

এদিকে, জুলাই অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন বিষয়ে আজ (বৃহস্পতিবার) আদেশ দেবেন ট্রাইব্যুনাল-১। এদিন বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ এ মামলাটি আদেশের জন্য রয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রথম কোনো মামলা, যা চার্জ গঠন বিষয়ে আদেশ হচ্ছে। মামলায় অন্য দুই আসামি হচ্ছেন-সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং অভ্যুত্থান সময়ের আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।

 

মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলায় শেখ হাসিনাকে নির্দেশদাতা হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। অভিযোগ গঠন হলে এর মধ্যে দিয়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম কোনো মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হবে। এই মামলায় গ্রেফতার একমাত্র আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে আজ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হবে বলে প্রসিকিউশন জানিয়েছে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম মামলার বিচারে জুলাই অভ্যুত্থানে ভুক্তভোগী পরিবারসহ সারা দেশের মানুষের দৃষ্টি এখন ট্রাইব্যুনালের দিকে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও সংবাদ