বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং যমুনা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান নুরুল ইসলামের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রোববার (১৩ জুলাই) দুপুরে যুগান্তর ভবনের ৫ম তলায় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
দোয়া মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী এবং দৈনিক যুগান্তরের প্রকাশক অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম।
পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে আলোচনা সভা শুরু হয়। তিলাওয়াতের পর মরহুমের প্রতি সম্মান জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর প্রয়াত নুরুল ইসলামের জীবন ও কর্ম নিয়ে একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রয়াত নুরুল ইসলামের স্মৃতিচারণ করে বক্তৃতা করেন যমুনা গ্রুপ, যুগান্তর ও যমুনা টিভির সিনিয়র কর্মকর্তারা।
যুগান্তরের উপসম্পাদক বি এম জাহাঙ্গীর প্রয়াত নুরুল ইসলামের বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবন নিয়ে বলেন, আজ যে মানুষটিকে আমরা স্মরণ করছি, যুগান্তর পরিবার তাকে শুধু একদিনের জন্য স্মরণ করে না। প্রতিটি ক্ষণে ক্ষণে আমরা তাকে অনুভব করি। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন বাংলাদেশে আমাদের মরহুম চেয়ারম্যান নুরুল ইসলামের অনেক প্রয়োজন ছিল। এমন একটি সময়ের অনুভব করতেন তিন। তিনি আজ বেঁচে থাকলে দেশের জন্য অনেক অবদান রাখতে পারতেন।
বিএম জাহাঙ্গীর আরও বলেন, প্রয়াত চেয়ারম্যান নুরুল ইসলামকে আমরা যারা ভালোবাসি তারা দুটি কাজ করব। তার জন্য গোপনে সদকা, নফল রোজা ও নামাজ পড়ে আমরা দোয়া করবো। আর দ্বিতীয়ত— শুধু কথায় নয়, মরহুম চেয়ারম্যানের ভালো কাজগুলো নিজের মধ্যে ধারণ করব। এভাবে তাকে স্মরণ করলে আমাদের জীবন স্বার্থক হবে। উনি বেঁচে থাকলে যেভাবে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতেন, আমাদেরও সেভাবে করতে হবে।
বিএম জাহাঙ্গীর বলেন, তার সান্নিধ্যে বহু সময় আমার কেটেছে। তার সঙ্গে মিশতে না পারলে জীবন অপূর্ণ রয়ে যেত। তিনি কর্মনিষ্ঠ, দেশপ্রেমিক ও সময়জ্ঞানসম্পন্ন মানুষ ছিলেন। তিনি কাজকে কখনো ফাঁকি দেননি। তাকে যে অনুস্মরণ করবে সে জীবনে সফল হবেই হবে।
যমুনা টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম বলেন, নুরুল ইসলাম যেগুলো স্বপ্ন দেখতেন সেগুলো বাস্তবায়ন করেছেন। এটি সফল হয়েছে তার নিরলস প্রচেষ্টার কারণে। কাজের ব্যাপারে তার কোনো ক্লান্তি ছিল না। তিনি যেসব প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন সেখানে সব পেশাদার লোকদের মাধ্যমে সব করেছেন। পরিবারের সদস্যদের তিনি তেমন জড়াননি। তার রেখে যাওয়া আদর্শ অনুযায়ী তার প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমরা যদি এগিয়ে নিতে পারি তাহলেই উনাকে স্মরণ করা বা ভালোবাসা স্বার্থক হবে।
প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামের সহধর্মিনী যমুনা গ্রুপ চেয়ারম্যান ও দৈনিক যুগান্তরের প্রকাশক অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম তার বক্তব্যে বলেন, আজকের এ দিনে আমার কথা বলার ভাষা নেই। আল্লাহতায়ালা মরহুম নুরুল ইসলামকে এমন কিছু গুণ দান করেছিলেন, যেগুলোর মাধ্যমে আল্লাহ তাকে দিয়ে স্বল্প সময়ে অনেক কাজ করিয়েছেন। মহান আল্লাহ বিশেষ রহমত দিয়ে তাকে দিয়ে এসব কাজ করিয়েছেন।
স্মৃতিচারণ করে সালমা ইসলাম বলেন, তার স্ত্রী হিসেবে আমি গর্বিত। তিনি কখনও আমাকে কষ্ট দিতেন না। এমনকি তিনি নিজ হাতে মশারি পর্যন্ত টানিয়েছেন। আমার যখন বিয়ে হয় শুধু বিয়ের দিনটাই তিনি ছুটি কাটিয়েছেন। পরদিন থেকেই নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। কর্মক্ষেত্রে তার ত্যাগের কথাগুলো মনে রেখে কাজ করলে আপনারা অনুপ্রেরণা পাবেন।
যুগান্তর সম্পাদক কবি আবদুল হাই শিকদার বলেন, মরহুম নুরুল ইসলাম একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের পর যদি তিনি যদি আর কিছু নাও করতেন তবুও তার যে গৌরবের আসন সেটি চিরকাল নক্ষত্রের মতো উজ্জ্বল হয়ে থাকতো। কিন্তু তিনি যুদ্ধবিধস্ত দেশে নতুন স্বপ্ন নিয়ে কাজ শুরু করলেন। শিল্পায়নের মাধ্যমে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়লেন।
তিনি বলেন, মরহুম নুরুল ইসলাম যেখানে হাত রেখেছেন সেখানে সোনা ফলেছে। অসম সাহস ও সুপরিকল্পিত কাজের মাধ্যমে তিনি সব স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছেন। আজকে জুলাই বিপ্লব পরবর্তী এ সময়ে তার অনেক প্রয়োজন ছিল। নুরুল ইসলাম ছিলেন অত্যন্ত সাহসী একজন মানুষ। তিনি সবসময় নিপীড়িত মানুষের পেছনে দাঁড়িয়েছেন। তিনি আমাদের প্রেরণার উৎস। আজকের এই দিনে আমরা তার মাগফিরাত কামনা করি, শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই।