নিম্নচাপের প্রভাবে উত্তাল বঙ্গোপসাগর। এমন পরিস্থিতিতে দেশের ১৫ জেলা ও দ্বীপ এলাকায় ১ থেকে ৩ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা রয়েছে। সেই সঙ্গে ভরি বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
শনিবার (২৬ জুলাই) আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানা গেছে।
এতে বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর এবং বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে গত মধ্যরাতে পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন ঝাড়খণ্ডে অবস্থান করছে। এটি আরও পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগরে বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা ও সমুদ্রবন্দরের ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ অবস্থায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে তিন (৩) নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
অমাবস্যা ও নিম্নচাপের কারণে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরিশাল, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরে ১ থেকে ৩ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
দক্ষিণাঞ্চলের সব নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপরে
বরিশাল অফিস জানায়, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপে বৃষ্টির প্রভাবে উঁচু জোয়ারে দক্ষিণাঞ্চলের সব নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে অস্বাভাবিক জোয়ারে নদী তীরবর্তী জনপদ প্লাবিত হয়েছে। গতকাল বিকালে পানিতে তলিয়ে যায় নগরীর সদর রোডসহ গুরুত্বপূর্ণ একাধিক সড়কসহ নিম্নাঞ্চল। নগরীঘেঁষা কীর্তনখোলা নদীতীরের নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দাদের বসতঘর, রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়েছে।
বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-প্রকৌশলী তাইজুল ইসলাম বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের সব নদীর পানি শুক্রবার বিকাল ৩টার পর বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নগরীঘেঁষা কীর্তনখোলায় বিকাল ৪টা ৪০ মিনিটে বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ভাটা শুরু হলে নগরীর বসতবাড়ি থেকে পানি নেমে যেতে পারে।
বরিশাল আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র পর্যবেক্ষক মিলন হাওলাদার জানান, শুক্রবার বিকাল ৩টায় তারা সর্বোচ্চ ঘণ্টায় ১০ কিলোমিটার বাতাসের গতিবেগ রেকর্ড করা হয়েছে। এটাই ছিল দিনের সর্বোচ্চ গতিবেগ। বিকাল ৩টার আগের ২৪ ঘণ্টায় ২১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়। এমন আবহাওয়া আরও দুইতিন দিন থাকতে পারে।
বরিশাল নদী বন্দরের সহকারী পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) এবং বন্দর ও পরিবহণ বিভাগের কর্মকর্তা রিয়াদ হোসেন বলেন, সমুদ্রে তিন নম্বর সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অফিস।
আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ জাপানের কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত মেঘের চিত্র বিশ্লেষণ করে জানান, শুক্রবার থেকে শুরু করে কমপক্ষে ৩ দিন (সোমবার পর্যন্ত) বাংলাদেশের সকল জেলার ওপরে পর্যায়ক্রমে বৃষ্টির আশংকা করা যাচ্ছে। শুক্রবার খুলনা, বরিশাল, চট্রগ্রাম, ও ঢাকা বিভাগের জেলাগুলোর উপরে মাঝারী থেকে ভারি বৃষ্টি হয়েছে। চট্রগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় জেলাগুলোর সমুদ্র উপকূলে ঘন্টায় ৪০ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে বাতাস প্রবাহিত হচ্ছে । ফলে সমুদ্র ও নদীর মোহনাগুলোতে উত্তাল অবস্থা বিরাজ করছে। আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত সমুদ্রে মাছ ধরতে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া যাচ্ছে।