জম্মু ও কাশ্মীরের পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা ফেরানোর দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে চাপ সৃষ্টি হচ্ছে কেন্দ্র সরকারের ওপর। বৃহস্পতিবার সুপ্রি কোর্টে সেই মামলার শুনানিতে নতুন মাত্রা যোগ করল পহেলগাঁও হামলার প্রসঙ্গ।
প্রধান বিচারপতি বি.আর. গবাই এবং বিচারপতি কে. বিনোদ চন্দ্রনের বেঞ্চ স্পষ্ট করে বলেছে—“বাস্তবকে অস্বীকার করা যায় না।”
আদালতের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, রাজ্য মর্যাদা পুনঃস্থাপনের প্রশ্নে মাটির বাস্তব অবস্থা ও নিরাপত্তাজনিত পরিস্থিতি বিবেচনায় রাখা জরুরি।
কলেজ শিক্ষক জহুর আহমেদ ভাট এবং সমাজকর্মী খুরশিদ আহমেদ মালিক এই মামলার আবেদনকারী। তাদের অভিযোগ, ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহারের মাধ্যমে রাজ্যের মর্যাদা কেড়ে নেওয়ার পর থেকে সাধারণ নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। সেই সময় জম্মু ও কাশ্মীরকে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়—‘জম্মু ও কাশ্মীর’ এবং ‘লাদাখ’।
আবেদনকারীদের যুক্তি, গত কয়েক বছরের বিধানসভা এবং লোকসভা নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে, তাই নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার যুক্তি আর কার্যকর নয়। আদালতের কাছে তাদের আবেদন, অবিলম্বে রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দিতে কেন্দ্রকে নির্দেশ দেওয়া হোক।
এই প্রেক্ষাপটে সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্র সরকারকে নোটিস জারি করে আট সপ্তাহের মধ্যে জবাব দিতে বলেছে। আদালত আরও জানিয়েছে, বিষয়টি কেবল আইনি প্রক্রিয়া নয়, বরং সামগ্রিক রাজনৈতিক ও নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত, তাই বাস্তব পরিস্থিতি অগ্রাহ্য করা যাবে না।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, “সরকার ইতিমধ্যেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, সঠিক সময় এলে রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু নিরাপত্তা ও সীমান্ত পরিস্থিতি উপেক্ষা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না।”
অন্যদিকে, ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ও সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ মন্তব্য করেন, “প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া আশ্বাসও এখন অবিশ্বাস্য হয়ে উঠছে। জনগণ নির্বাচনে অংশ নিয়ে দায়িত্ব পালন করেছে, এখন সরকারের পালা।”
বড় বড় সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি শিরোনামে এসেছে। টাইমস অব ইন্ডিয়া লিখেছে—‘Incidents like Pahalgam can’t be ignored’—যা আদালতের বক্তব্যকে সরাসরি তুলে ধরে।
এনডিটিভি বিশ্লেষণে বলেছে, এই মন্তব্য ইঙ্গিত দিচ্ছে যে কেন্দ্র রাজ্যের মর্যাদা ফেরানোর আগে নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে প্রাধান্য দেবে।
উল্লেখযোগ্যভাবে, এই বছরের ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে ঘটে যাওয়া জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যা ভারত–পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনা বাড়িয়ে দিয়েছিল। আদালত আজকের পর্যবেক্ষণে সেই ঘটনাকে উল্লেখ করে বলে, “এ ধরনের হামলা এখনো এই অঞ্চলের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করে।”
আবেদনকারীদের দাবি ও আদালতের আজকের মন্তব্যে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, রাজ্য মর্যাদা ফেরানো নিয়ে সিদ্ধান্ত একদিকে রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তি, অন্যদিকে নিরাপত্তা বাস্তবতার মধ্যে আটকে আছে। আগামী আট সপ্তাহের মধ্যে কেন্দ্রের জবাবই নির্ধারণ করবে এই দাবির গতি কোন দিকে যাবে।