মঙ্গলবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৬:২১ পূর্বাহ্ন

নেপালে জেন জি আন্দোলনে নিহত বেড়ে ১৯

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • প্রকাশের সময়ঃ সোমবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • ৪ প্রদর্শন করেছেন

নেপালে দুর্নীতি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধের প্রতিবাদে ‘জেনারেশন জেড’–এর নেতৃত্বে শুরু হওয়া আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে সোমবার অন্তত ১৯ জন নিহত হয়েছেন। কাঠমান্ডুসহ দেশজুড়ে বিভিন্ন শহরে এ বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।

প্রথমে রাজধানী কাঠমান্ডুর নিউ বানেশ্বর এলাকায় সংসদ ভবনের সামনে আন্দোলন শুরু হয়। পরে তা দ্রুতই দেশের অন্যান্য শহরেও ছড়িয়ে পড়ে। দুপুরের পর পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে সরকার কারফিউ জারি করে।

তবুও প্রতিবাদ থামেনি। পুলিশ জলকামান, টিয়ার গ্যাস ছাড়াও সরাসরি গুলি চালায়। এতে শুধু কাঠমান্ডুর বিভিন্ন হাসপাতালে অন্তত ১৭ জনের মৃত্যু হয়। দেশটির ন্যাশনাল ট্রমা সেন্টারে ৮ জন, এভারেস্ট হাসপাতালে ৩ জন, সিভিল হাসপাতালে ৩ জন, কাঠমান্ডু মেডিকেল কলেজে ২ জন, ত্রিভুবন ইউনিভার্সিটি টিচিং হাসপাতালে ১ জন নিহত হন।

সুনসারির ইতাহারিতে আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে ২ জন নিহত হন। এর মধ্যে একজন ঘটনাস্থলেই মারা যান, অন্যজন পরে ধরণে বিপি কৈরালা স্বাস্থ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এতে সারাদেশে মোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৯। দেশজুড়ে অন্তত ৩৪৭ জন আহত হয়েছেন বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।

বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এভারেস্ট হাসপাতালের আনিল অধিকারী জানিয়েছেন, অন্তত ৪ জন সংকটাপন্ন। ট্রমা সেন্টারের ডা. দিপেন্দ্র পাণ্ডে বলেন, ১০ জনের মাথা ও বুকে গুলির আঘাত লেগেছে, যাদের অবস্থা অত্যন্ত গুরুতর।

কাঠমান্ডু ছাড়াও পোখারা, বিরাটনগর, জনকপুর, হেটৌডা ও নেপালগঞ্জে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে। ঝাপা জেলায় আন্দোলনকারীরা প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির দামাকের বাড়িতে ইটপাটকেল ছোড়ে। এ সময় পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে। পূর্ব–পশ্চিম মহাসড়কের কয়েকটি স্থানে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে বিক্ষুব্ধ জনতা।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশন (এনএইচআরসি) এক বিবৃতিতে উভয় পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে। কমিশন বলেছে, শান্তিপূর্ণ মতপ্রকাশ সাংবিধানিক ও আন্তর্জাতিক আইনে নিশ্চিত অধিকার। তবে আন্দোলনকারীদের ভাঙচুর ও নিরাপত্তা বাহিনীর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ—দুটোকেই ‘দুঃখজনক’ বলে উল্লেখ করেছে কমিশন।

তরুণ প্রজন্মের এই আন্দোলনের মূল দাবি—দুর্নীতির অবসান ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকারের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার। সরকার ২৬টি জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম বন্ধ করে দেওয়ার পর থেকে ক্ষোভ তীব্র হয়ে ওঠে। বিক্ষোভকারীরা বলছেন, রাজনৈতিক ব্যর্থতা ও দুর্নীতি দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বপ্নকে ধ্বংস করছে।

একাধিক জেলায় কারফিউ জারি করা হয়েছে। সেনা ও পুলিশ বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মোতায়েন রয়েছে। তবে বিক্ষোভকারীদের ঢল সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে প্রশাসন। হাসপাতালগুলোতে একসঙ্গে শত শত আহতকে ভর্তি করায় চিকিৎসা সেবায়ও চাপ তৈরি হয়েছে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও সংবাদ