বুধবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:২৬ পূর্বাহ্ন

পরমাণু শক্তি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি ভাঙছে ইরান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • প্রকাশের সময়ঃ সোমবার, ৬ অক্টোবর, ২০২৫
  • ৬ প্রদর্শন করেছেন

পশ্চিমা দেশগুলো ইরানের ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল রেখেছে। এ কারণে জাতিসংঘের পারমাণবিক সংস্থাকে (আইএইএ) সহযোগিতা করা এখন আর প্রাসঙ্গিক নয় বলে ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী। রোববার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি বলেন, ‘আইএইএ’র সঙ্গে আমাদের সহযোগিতার জন্য কায়রো চুক্তি আর প্রাসঙ্গিক নয়।’ তিনি গত মাসে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) সঙ্গে স্বাক্ষরিত ওই চুক্তির কথা উল্লেখ করেন। আল-জাজিরা।

এই চুক্তিতে এমন একটি কাঠামো নির্ধারণ করা হয়েছিল, যার মাধ্যমে তেহরান সহযোগিতা স্থগিত করার পর আবারও আইএইএ চাইলে পরিদর্শন ও তদারকি কার্যক্রম শুরু করা যেত।

গত জুনে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের হামলার পর তাদের পারমাণবিক স্থাপনায় সহযোগিতা করা বন্ধ করে দেয় তেহরান। তবে, ওই চুক্তির গুরুত্ব হারায় যখন ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি যারা ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির স্বাক্ষরকারী ইরানের বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অভিযোগ তুলে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করে। ইরান অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

তেহরানে বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে এক বৈঠকে আরাকচি বলেন, ‘তিনটি ইউরোপীয় দেশ মনে করেছিল তাদের হাতে একটি চাপ প্রয়োগের হাতিয়ার আছে। এখন তারা সেই হাতিয়ার ব্যবহার করেছে এবং ফলাফল দেখেছে। এই তিন ইউরোপীয় দেশ নিশ্চিতভাবেই নিজেদের ভ‚মিকা কমিয়ে ফেলেছে এবং তাদের সঙ্গে আলোচনার যৌক্তিকতাও প্রায় বিলুপ্ত করেছে।’ তিনি আরও বলেন, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ভবিষ্যতের যে কোনো আলোচনায় এই তিন ইউরোপীয় দেশের ভূমিকা আগের তুলনায় ‘অনেক ছোট হবে’।

দ্বিমুখী নীতিমালা

তেহরান আইএইএ-এর বিরুদ্ধে দ্বিমুখী নীতিমালা অনুসরণের অভিযোগ করেছে। ইরানের দাবি— পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তির (এনপিটি) আওতায় বাধ্যবাধকতা থাকা সত্ত্বেও সংস্থাটি ইসরাইলের হামলার নিন্দা জানাতে ব্যর্থ হয়েছে। ইরানের মতে, এই নীরবতা আইএইএ’র পক্ষপাতমূলক আচরণকে নির্দেশ করে।

মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা দেশগুলো, ইসরাইলের সমর্থনে, দীর্ঘদিন ধরে ইরানের বিরুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা চালানোর অভিযোগ তুলে আসছে যা তেহরান দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করে আসছে। ইরানের দাবি— তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণরূপে বেসামরিক উদ্দেশ্যে, এবং পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তির (এনপিটি) আওতায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার অধিকার তাদের রয়েছে। কিছু ইরানি সংসদ-সদস্য এনপিটি থেকে পুরোপুরি সরে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। তবে প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান জানিয়েছেন, ইরান চুক্তির প্রতি তাদের অঙ্গীকার বজায় রাখবে। আরাকচি বলেন, তেহরান শিগ্গিরই আইএইএ’র সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার বিষয়ে তাদের ‘সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবে’। তবে তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি। তিনি উল্লেখ করেন, ‘কূটনীতির জন্য এখনো সুযোগ রয়েছে।’ গত এপ্রিলে একটি বিস্তৃত পারমাণবিক চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের যে আলোচনা শুরু হয়। কিন্তু জুনে ইসরাইলের হামলার পর তা ভেস্তে যায়। ওই হামলায় ইরানের পারমাণবিক, সামরিক ও আবাসিক স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়।

এরপর থেকে তেহরান যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ভণ্ডুল করার অভিযোগ করেছে এবং সম্ভাব্য আলোচনায় ফিরে যাওয়ার আগে নিজেদের অধিকার স্বীকৃতি ও নির্দিষ্ট নিশ্চয়তা দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। ইরান বারবার দাবি করেছে, তারা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে চায় না। অন্যদিকে, ইসরাইলকে এমন একটি দেশ হিসাবে মনে করা হয়, যার কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার না করলেও তাদের ডজনখানেক পারমাণবিক অস্ত্রের ভাণ্ডার রয়েছে।

সূত্র: আল-জাজিরা

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও সংবাদ