পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যকার চামান–স্পিন বোলদাক সীমান্ত বাণিজ্যের জন্য আংশিকভাবে খুলে দেওয়া হয়েছে বলে দেশটির সরকারি সূত্রে সোমবার নিশ্চিত করেছে।
এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে সামা টিভি।
পাকিস্তান যখন ব্যাপক আকারে আফগান শরণার্থীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর অভিযান চালাচ্ছে—এমন সময়ে সীমান্ত খোলার সিদ্ধান্ত এল।
শুধু অক্টোবর মাসেই ৬৭ হাজারের বেশি আফগান নাগরিক পাকিস্তান ত্যাগ করেছে, এবং ১৮ নভেম্বরের মধ্যে সম্পূর্ণ উচ্ছেদের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সরকারি সূত্র জানায়, চামান সীমান্ত আপাতত কেবল বাণিজ্যিক পণ্যবাহী যানবাহনের জন্য খোলা হয়েছে। তবে নিরাপত্তাজনিত কারণে সাধারণ মানুষের যাতায়াত এখনো নিষিদ্ধ।
উভয় দেশের কাস্টমস ও বাণিজ্য কর্মকর্তারা সীমান্তে উপস্থিত থেকে নিয়ন্ত্রিত চলাচল তদারকি করছেন। আপাতত শুধু খালি ট্রাকগুলোকেই আফগানিস্তানে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আফগান চালকদের বৈধ পাসপোর্ট ও ভিসা থাকা বাধ্যতামূলক।
তোরখাম সীমান্তও খুলবে মঙ্গলবার
সূত্র জানায়, ইসলামাবাদে আফগান দূতাবাসে পাঠানো আনুষ্ঠানিক বার্তার পর তোরখাম সীমান্তও আগামীকাল একই শর্তে খুলে দেওয়া হতে পারে। তবে গুলাম খান, আঙ্গুর আড্ডা ও খারলাচি সীমান্তপথগুলো পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
শরণার্থী পরিবহনকারী ট্রাকের অনুমতি
শুধু আফগান শরণার্থী বহনকারী ট্রাকগুলোকেই চমন সীমান্ত দিয়ে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কর্মকর্তারা স্পষ্ট করে বলেছেন, নিয়মিত বাণিজ্য ও পদচারী চলাচল এখনো বন্ধ রয়েছে।
দেশব্যাপী শরণার্থী প্রত্যাবাসন জোরদার
খাইবার পাখতুনখওয়ায় শরণার্থী শিবিরগুলো বন্ধ করার পর দেশজুড়ে আফগান নাগরিকদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়েছে। শুধু অক্টোবর মাসেই ৬৭,৬০১ জন আফগান নাগরিক স্বদেশে ফিরে গেছেন, যার মধ্যে ১৯ অক্টোবর একদিনেই ফিরেছেন ২,০৫৬ জন।
মোট হিসাব অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ১৪ লাখেরও বেশি আফগান শরণার্থী পাকিস্তান ছেড়েছেন—এর মধ্যে ১ লাখ ৬৩ হাজার ‘প্রুফ অব রেজিস্ট্রেশন’ কার্ডধারী এবং ৮০ হাজার ‘আফগান সিটিজেন কার্ড’ ধারক।
আজাদ কাশ্মীরে ১৮ নভেম্বরের মধ্যে উচ্ছেদের নির্দেশ
আজাদ জম্মু ও কাশ্মীর কর্তৃপক্ষ সব আফগান নাগরিককে ১৮ নভেম্বরের মধ্যে অঞ্চলটি ছেড়ে যেতে নির্দেশ দিয়েছে। পুলিশ, সিটিডি ও স্পেশাল ব্রাঞ্চকে শরণার্থীদের তালিকা প্রস্তুতের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, নির্দেশনা বাস্তবায়নে অবহেলা করলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সময়সীমার পরও যদি অবৈধ বিদেশিরা অবস্থান করে, তবে তাদের জোরপূর্বক বহিষ্কার করা হবে।
ইসলামাবাদে পুলিশের ওপর হামলার পর গ্রেফতার ১৭ আফগান নাগরিক
এক পৃথক ঘটনায়, ইসলামাবাদের বারি ইমাম এলাকায় পুলিশের অভিযানের সময় হামলার অভিযোগে ১৭ আফগান নাগরিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। সংঘর্ষে চারজন পুলিশ কর্মকর্তা আহত হন, যাদের মধ্যে একজন থানার ওসি ও এক নারী কনস্টেবল রয়েছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেফতার ব্যক্তিদের শিগগিরই নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
চার দশকের আতিথেয়তার অবসান
পাকিস্তানের প্রায় চার দশকব্যাপী আফগান শরণার্থী আতিথেয়তার যুগ শেষের পথে। কর্তৃপক্ষ বলছে, এটি ‘সম্মানজনক ও সংগঠিত প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া’, যা অবৈধভাবে থাকা শেষ ব্যক্তিটিকেও ফেরত পাঠানো না পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।