শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৪৭ অপরাহ্ন

যুক্তরাষ্ট্রের চাপে কখনো মাথা নত করব না: পুতিন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • প্রকাশের সময়ঃ শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২৫
  • ০ প্রদর্শন করেছেন

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, রাশিয়া কখনো যুক্তরাষ্ট্রের চাপে মাথা নত করবে না। তবে তিনি স্বীকার করেছেন, ওয়াশিংটনের আরোপ করা নতুন নিষেধাজ্ঞায় তার দেশের অর্থনীতিতে কিছুটা ক্ষতি হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার সবচেয়ে বড় দুটি তেল কোম্পানিকে লক্ষ্য করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পর চীন ও ভারত রুশ তেল আমদানি কমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে এরইমধ্যে খবর পাওয়া গেছে।

বুধবার রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি রোসনেফট ও লুকঅয়েলের ওপর এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে এদের প্রায় তিন ডজন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও। ইউক্রেনে যুদ্ধ শেষ করতে ক্রেমলিনের ওপর চাপ বাড়ানোর অংশ হিসেবে ট্রাম্পের প্রশাসন এ পদক্ষেপ নিয়েছে। এর পাশাপাশি রাশিয়ার তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানিতে ধীরে ধীরে আলাদাভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।

রোসনেফট ও লুকঅয়েল রাশিয়ার মোট অপরিশোধিত তেল রপ্তানির প্রায় অর্ধেকের জোগান দেয়। গত সপ্তাহে যুক্তরাজ্যও এ দুই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। গত জানুয়ারিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে ফেরার পর এটিই (বুধবার ওয়াশিংটনের আরোপ করা) মস্কোর ওপর প্রথম বড় নিষেধাজ্ঞা। এর লক্ষ্য, রাশিয়ার ইউক্রেন যুদ্ধের তহবিলের প্রধান উৎস—তেল আয়ের প্রবাহ বন্ধ করা।

ওয়াশিংটন আশা করছে, এ নিষেধাজ্ঞার কারণে বৈশ্বিক তেলের দাম ৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যাওয়ার পর পুতিনের ওপর এমন চাপ তৈরি হবে, যাতে তিনি ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়ে আলোচনায় ফিরতে বাধ্য হবেন।

বৃহস্পতিবার পুতিন নতুন নিষেধাজ্ঞাগুলোকে ‘রুশ-মার্কিন সম্পর্ক শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে কোনোই কাজে না আসা অমৈত্রীসুলভ পদক্ষেপ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, এটি রাশিয়ার ওপর চাপ সৃষ্টি করার এক ব্যর্থ চেষ্টা। কোনো আত্মমর্যাদাশীল দেশ কখনো চাপের মুখে নতি স্বীকার করে না।

প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, নতুন নিষেধাজ্ঞাগুলো রাশিয়ার ওপর তেমন প্রভাব ফেলবে না। তবে ‘কিছু ক্ষতি হবে’।

পুতিন ট্রাম্পকে ইঙ্গিত করে বলেন, তার উপদেষ্টারা যখন রুশ তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞার পরামর্শ দেন, তখন প্রেসিডেন্টের ভাবা উচিত, তার প্রশাসন আসলে কার স্বার্থে কাজ করছে। তিনি সতর্ক করে দেন, নিষেধাজ্ঞার কারণে তেলের দাম আরও বাড়বে।

এ ছাড়া রুশ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে সতর্ক করে বলেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে টমাহক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র দেয় এবং সেগুলো দিয়ে রাশিয়ার ওপর হামলা চালানো হয়, তবে রাশিয়া ‘ব্যাপক ধ্বংসাত্মক না হলেও খুবই শক্তিশালী’ প্রতিক্রিয়া দেখাবে।

উল্লেখ্য, ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে এই ক্ষেপণাস্ত্র চাইছে। কিন্তু ওয়াশিংটন এখনো রাজি হয়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিকতম নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী, কোনো বিদেশি রাষ্ট্র বা প্রতিষ্ঠান রাশিয়ার বড় তেল কোম্পানিগুলোর সঙ্গে ব্যবসা করতে পারবে না। এতে রাশিয়া অনেকাংশেই আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থার বাইরে চলে যাবে।

গতকালই ইঙ্গিত পাওয়া যায়, রাশিয়ার তেলের দুই প্রধান ক্রেতা চীন ও ভারত ওয়াশিংটনের ওই নতুন নিষেধাজ্ঞার জবাবে দেশটি থেকে জ্বালানি আমদানি স্থগিত করছে।

ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ক্রমবর্ধমান হতাশার মধ্যেই ট্রাম্প প্রশাসন হঠাৎ এসব নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেয়। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের নির্ধারিত এক শীর্ষ বৈঠক আকস্মিকভাবে বাতিল করার ঘটনা।

ওই সম্মেলন প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নে পুতিন বলেন, এটি সম্ভবত বাতিল করা হবে। কারণ, যথাযথ প্রস্তুতি ছাড়া এমন বৈঠক করা ভুল সিদ্ধান্ত হবে।

রুশ প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, তিনি এখনো ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা করতে আগ্রহী। কেননা সংলাপ সব সময় যুদ্ধের চেয়ে ভালো।

তবে রুশ প্রশাসনের অন্য নেতারা অনেক কঠোর ভাষায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ও নিরাপত্তা পরিষদের জ্যেষ্ঠ সদস্য দিমিত্রি মেদভেদেভ নিষেধাজ্ঞাগুলোকে ‘যুদ্ধের ঘোষণা’ বলে মন্তব্য করেছেন।

‘যুক্তরাষ্ট্র আমাদের শত্রু’, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন মেদভেদেভ। ‘তাদের কথাবার্তা যতই শান্তির বার্তা দিক না কেন, তারা এখন পুরোপুরি রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধের পথে নেমেছে।’

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও সংবাদ