ঢাকাই সিনেমার অমর নায়ক সালমান শাহ। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর তিনি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন। তার রহস্যময় মৃত্যু আজও কোটি ভক্তের কাছে এক হাহাকার হয়ে আছে। দীর্ঘদিন ধরে সালমান শাহের মাসহ পরিবারের সদস্যরা দাবি করে আসছিলেন, নায়ককে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু সেটিকে অপমৃত্যু মামলায় বারবার আত্মহত্যা বলেই দেখানো হয়েছে।
অবশেষে গেল ২০ অক্টোবর সালমান শাহের মৃত্যুর ঘটনায় পুনঃতদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। তখন থেকেই সারা দেশে আবারও আলোচনায় উঠে আসেন সালমান শাহ। নতুন করে আলোচ্য হয়ে উঠে তার মৃত্যু। আদালতের নির্দেশের ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন সালমান শাহের মামা আলমগীর কুমকুম। মামলার এজাহারে প্রথম আসামি হিসেবে নাম রয়েছে সালমানের সাবেক স্ত্রী সামিরা হকের। এছাড়াও রয়েছেন ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই, লতিফা হক লুসি, চলচ্চিত্রের খলনায়ক ডনসহ আরো কয়েকজন। মোট অভিযুক্ত ১১ জনের পাশাপাশি উল্লেখ করা হয়েছে অজ্ঞাতনামা আরো কয়েকজনের নাম।
সেই থেকে বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ট্রেন্ডিংয়ের শীর্ষে রয়েছে চিত্রনায়ক সালমান শাহ হত্যা মামলা। নানা তথ্য উপাত্ত ঘেঁটে দেখা যায়, ২০ অক্টোবর দিনভরই বাংলাদেশে গুগল ট্রেন্ডিংয়ের এক নম্বরে ছিলেন সালমান শাহ। ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় কয়েক লক্ষ মানুষ সালমান শাহকে নিয়ে গুগলে সার্চ করেছেন। তাদের আগ্রহের মধ্যে রয়েছে সালমান শাহের মৃত্যু, সালমান শাহ হত্যা, সালমান শাহ হত্যা মামলা, সালমান শাহের মৃত্যুর রহস্য, সালমান শাহের সিনেমা, গান ও ক্যারিয়ারের নানা বিষয়াদি।
এর পাশাপাশি সালমান শাহের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এমন ব্যক্তিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি খোঁজা হয়েছে নায়কের সাবেক স্ত্রী সামিরা হককে। এরপরই আছেন অভিনেতা ডন ও সালমান শাহের মা নীলা চৌধুরী। যথাক্রমে শাবনূর, আজিজ মোহাম্মদ ভাই, মৌসুমীও সমানভাবে আগ্রহের কেন্দ্রে আছেন। লোকজন সালমান-সামিরার প্রেম, বিয়ে, বিচ্ছেদ, তাদের সংসার জীবন ও সন্তান বিষয়ক নানা তথ্যের পাশাপাশি শাবনূরের সঙ্গে সালমানের প্রেম ও সম্পর্ক নিয়েও অনেক তথ্য জানতে চেয়েছেন। নায়িকা মৌসুমীর সঙ্গে সালমানের সম্পর্ক, সিনেমা নিয়েও আগ্রহ দেখাচ্ছেন অনেকে। সালমান শাহের ছোট ভাইকে নিয়েও অনেকে জানতে চেষ্টা করেছেন গেল এক সপ্তাহে।
কিছু বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, দেশ হিসেবে বাংলাদেশ থেকেই সালমান শাহ সংশ্লিষ্ট সর্বাধিক খোঁজ করা হয়েছে। এরপর আছ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ওমান, সৌদি আরব, কাতার, অস্ট্রেলিয়া।
আর বাংলাদেশের মধ্যে এই বিষয়ে সবচেয়ে বেশি আগ্রহী সালমান শাহের জন্মস্থান সিলেট বিভাগের মানুষ। এরপর যথাক্রমে বরিশাল, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, ঢাকা, খুলনার মানুষ আগ্রহী হয়ে সালমান শাহকে ট্রেন্ডিংয়ে রেখেছেন।
বয়সভেদে দেখা গেছে ২১-৪০ বছর বয়সি নেট ইউজাররা সালমান শাহ ও তার মৃত্যু রহস্য নিয়ে বেশি কৌতুহলী। আর তার মধ্যে পুরুষের সংখ্যা বেশি।
সালমান শাহের মৃত্যুর ঘটনা চিত্র জগতে দীর্ঘকাল ধরে একটি গোপন রহস্য হিসেবে ছিল। ১৯৯৬ সালে সালমান শাহের অকাল মৃত্যু সমগ্র বিনোদন জগতকে শোকের মধ্যে ফেলে দিয়েছিল। সেই শোক আজও বুকে বয়ে বেড়াচ্ছেন ভক্তরা। পুত্রকে অকালে হারিয়ে আজও শোকে কাতর সালমানের মা নীলা চৌধুরী। মূলত তাদের আগ্রহ আর প্রচেষ্টাতেই দীর্ঘদিন পর সালমানের মৃত্যুর ঘটনাটি অপমৃত্যু থেকে হত্যা মামলায় রুপ নিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই পট পরিবর্তনই জনসাধারণের কৌতূহল আরও বাড়িয়েছে সালমান ও তার মৃত্যুকে নিয়ে।
আইনজীবী এবং অপরাধ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই মামলা শুধু বিনোদন জগতের নয় দেশের বিচার ব্যবস্থার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ একটি পরীক্ষা। মামলার প্রমাণ, সাক্ষী এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক তথ্য সঠিকভাবে বিচারককে উপস্থাপন করা হলে এ থেকে একটি পরিষ্কার রায় আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
ভক্ত এবং অনুরাগীরা সোশ্যাল মিডিয়ায় নিয়মিত এ ব্যাপারে তাদের মতামত প্রকাশ করছেন। অনেকেই চাইছেন যে সত্য উদঘাটিত হোক এবং অপরাধীরা দণ্ডিত হোক। অনলাইনে হ্যাশট্যাগ, মন্তব্য এবং শেয়ার চলমান এই আলোচনাকে আরও তীব্র করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের উচ্চমাত্রার জনচাহিদা বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা ও কৌতূহলকে প্রমাণ করছে।
মামলার অগ্রগতি, আসামিদের অবস্থান এবং তদন্ত সংক্রান্ত সংবাদ এখন দেশের সকল গুরুত্বপূর্ণ নিউজ প্ল্যাটফর্মে শীর্ষে রয়েছে। বিশেষ করে গত এক সপ্তাহে এই বিষয়টি সংবাদ এবং অনলাইন ট্রেন্ডে শীর্ষ স্থান ধরে রেখেছে।