টাইফুন কালমেগি-এর ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞে ফিলিপাইনে জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ফের্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ২৪১ জনের মৃত্যু ও নিখোঁজের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১১৪ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হলেও ১২৭ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন।
রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, বৃহস্পতিবার জাতীয় দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস ও ব্যবস্থাপনা কাউন্সিলের (এমডিআরআরএমসি) ব্রিফিং শেষে প্রেসিডেন্ট এ সিদ্ধান্ত নেন।
প্রেসিডেন্ট মার্কোস বলেন, জরুরি অবস্থা ঘোষণার মাধ্যমে উদ্ধার, ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম আরও দ্রুত সম্পন্ন করা যাবে। এতে জরুরি তহবিল ব্যবহারে ও সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ায় গতি আসবে।
তিনি বলেন, যেহেতু টাইফুন টিনো এবং আসন্ন উওয়ান-এর প্রভাবপ্রবণ অঞ্চলগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাই কাউন্সিলের প্রস্তাব অনুযায়ী জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা অনুমোদন করেছি।
রাষ্ট্রপতি জানান, টিনো ও উওয়ান—এই দুটি টাইফুন মিলিয়ে ১০ থেকে ১২টি অঞ্চল প্রভাবিত হতে পারে। দেশটি ইতোমধ্যেই পরবর্তী টাইফুন উওয়ান-এর আগমনেও প্রস্তুতি নিচ্ছে।
দুর্যোগ প্রতিরক্ষা দপ্তরের উপ-মুখপাত্র দিয়েগো মারিয়ানো স্থানীয় গণমাধ্যম দ্য ইনকোয়ারারকে জানান, সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সেন্ট্রাল ভিসায়াস অঞ্চলে ৮২ জন আহত হয়েছেন।
স্থানীয়ভাবে টাইফুন টিনো নামে পরিচিত কালমেগি প্রবল বাতাসে ঘরবাড়ির ছাদ উড়িয়ে দেয়, গাছ ও বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে ফেলে এবং ভয়াবহ বন্যা সৃষ্টি করে।
দেশটির আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, বৃহস্পতিবার সকালে কালমেগি ফিলিপাইন অঞ্চল থেকে সরে গেলেও লুজন ও মিন্দানাওয়ের কিছু এলাকায় এখনো ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে।
প্রায় ৫ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং ১৪ লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার মধ্যে সেবু প্রদেশের কিছু অংশও রয়েছে।
দূরবর্তী কিছু এলাকায় বন্যা ও ভূমিধসের কারণে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে, পাশাপাশি বহু পৌরসভায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এ বিপর্যয়টি এমন সময়ে ঘটল যখন এর আগে ৩০ সেপ্টেম্বর সেবু অঞ্চলে ৬.৯ মাত্রার এক ভূমিকম্পে বহু মানুষের মৃত্যু ও হাজারো মানুষের ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়।
সরকার জানিয়েছে, দুর্গত এলাকায় উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম চলছে এবং উদ্ধারকর্মীরা বন্যা ও ভূমিধসে বিচ্ছিন্ন দুর্গম এলাকাগুলোতে পৌঁছানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
আবহাওয়া বিভাগ জানায়, কালমেগি মঙ্গলবার সকালে প্রথমে দক্ষিণ লেইতে ও পরে সেবু অঞ্চলে দুটি স্থানে আঘাত হানে। এরপর এটি দক্ষিণ চীন সাগরের দিকে অগ্রসর হচ্ছে এবং শুক্রবার ভিয়েতনামে আঘাত হানতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।