পাকিস্তান ও আফগান তালেবান সরকার আজ (বৃহস্পতিবার) ইস্তাম্বুলে তৃতীয় দফা আলোচনায় বসেছে, গত মাসের প্রাণঘাতী সীমান্ত সংঘর্ষের পর উত্তেজনা প্রশমনের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে।
ইস্তাম্বুলে এ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে এর আগে পাঁচ দিনব্যাপী আলোচনার ধারাবাহিকতায়, যা শেষ মুহূর্তে একটি অন্তর্বর্তী চুক্তিতে পৌঁছায়।
বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে জিও নিউজ।
দ্বিতীয় দফা আলোচনা গত ২৫ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুলে শুরু হয়েছিল। তবে পাকিস্তান তালেবান প্রতিনিধিদলের ‘অযৌক্তিক’ যুক্তি ও ইসলামাবাদের সীমান্তপারের সন্ত্রাসবাদের উদ্বেগ সমাধানে অনীহার কারণে আলোচনাটি ভেস্তে যায়।
পরে মধ্যস্থতাকারীদের প্রচেষ্টায় পাকিস্তানকে আলোচনায় ফের রাজি করানো হয়, যা শেষ পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি বজায় রাখার এক চুক্তিতে পরিণত হয়।
পূর্ববর্তী আলোচনার শেষে তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক যৌথ বিবৃতিতে জানায়, সব পক্ষ যুদ্ধবিরতি বজায় রাখা এবং শান্তি নিশ্চিতের জন্য একটি পর্যবেক্ষণ ও যাচাই প্রক্রিয়া গঠনে একমত হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সব পক্ষ এমন একটি পর্যবেক্ষণ ও যাচাই প্রক্রিয়া গঠনে একমত হয়েছে, যা শান্তি বজায় রাখবে এবং লঙ্ঘনকারী পক্ষের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে।’
এর এক দিন আগে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী সংসদের বাইরে সাংবাদিকদের বলেন, আলোচনার তৃতীয় দফা শুরু করতে একটি প্রতিনিধি দল রওনা দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আফগানিস্তানকে আঞ্চলিক শান্তির স্বার্থে বিচক্ষণতা দেখাতে হবে… যদি অগ্রগতির কোনো সম্ভাবনা না থাকে, তবে এ আলোচনাকে সময়ের অপচয় বলা যায়।’
এ সপ্তাহের শুরুতে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ এক অনানুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের সতর্ক করে বলেন, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যেকোনো বাহ্যিক আগ্রাসনের জবাব ‘দৃঢ় ও কঠোরভাবে’ দেওয়া হবে।
তিনি জানান, পাকিস্তানি বাহিনী সীমান্তপারের বহু সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে, যাদের অনেকেই আফগান নাগরিক। তিনি আরও বলেন, আফগানিস্তানে ব্যাপক আফিম চাষ থেকে সংগৃহীত অর্থ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ব্যবহার হচ্ছে।
বিবৃতিতে আরও অভিযোগ করা হয়, আফগানিস্তানের কিছু গোষ্ঠী বেলুচিস্তান থেকে আসা সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আশ্রয় দিচ্ছে এবং বেসামরিক এলাকায় যোদ্ধাদের স্থানান্তর করছে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহারের জন্য।
ব্রিফিংয়ে অংশ নেওয়া জিও নিউজের সিনিয়র সাংবাদিক হামিদ মির জানান, প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের কাছে প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন যে আফগান তালেবান সেনারা পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলায় জড়িত।
ইসলামাবাদ-কাবুল উত্তেজনা
২০২১ সালে আফগান তালেবান ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকেই পাকিস্তান, বিশেষ করে খাইবার পাখতুনখোয়া ও বেলুচিস্তানে, ক্রমবর্ধমান সন্ত্রাসী হামলার মুখে পড়েছে।
ইসলামাবাদ সরকার বারবার তালেবান প্রশাসনকে আহ্বান জানিয়েছে পাকিস্তানে হামলাকারী জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে।
কিন্তু তালেবান সরকার পাকিস্তানের দাবিগুলো উপেক্ষা করে আসছে এবং বহু জঙ্গি গোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়েছে, যারা পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনী ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা চালাচ্ছে।
পাকিস্তানের উদ্বেগের জবাবে তালেবান প্রশাসন বরং ১২ অক্টোবর সীমান্তে অপ্ররোচিত গোলাগুলি শুরু করে।
পাকিস্তানের সেনাবাহিনী পাল্টা জবাব দেয়, এতে ২০০-রও বেশি তালেবান যোদ্ধা ও সহযোগী নিহত হয়; তবে ২৩ জন পাকিস্তানি সেনা শহীদ হন।
পাকিস্তানি বাহিনী আফগান ভূখণ্ডে, এমনকি কাবুলেও, সন্ত্রাসীদের ঘাঁটি ধ্বংসে হামলা চালায়।
১৭ অক্টোবর তালেবান প্রশাসনের অনুরোধে পাকিস্তান সাময়িক যুদ্ধবিরতি মেনে নেয়, যার পর দুই পক্ষ দোহায় কাতারের মধ্যস্থতায় আলোচনায় বসে এবং একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছায়।
পরে তুরস্কের আয়োজনে ইস্তাম্বুলে দ্বিতীয় দফা আলোচনা ২৫ অক্টোবর শুরু হয়ে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত চলে।