শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:৩১ পূর্বাহ্ন

চীনের বয়কটের মুখে হুমকিতে জাপানের অর্থনীতি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • প্রকাশের সময়ঃ বুধবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২৫
  • ৫ প্রদর্শন করেছেন

চলমান কূটনৈতিক বিবাদের জেরে চীন নিজ নাগরিকদের জাপানে ভ্রমণ না করার আহ্বান জানিয়েছে। আর সেই ঘোষণার কয়েক দিনের মধ্যেই টোকিওভিত্তিক ট্যুর অপারেটর ইস্ট জাপান ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল সার্ভিস বছরের বাকি সময়ের বুকিংয়ের প্রায় ৮০ শতাংশ হারিয়েছে।

এই প্রতিষ্ঠানটি বিশেষভাবে চীনা দলভিত্তিক পর্যটকদের সেবা দিয়ে থাকে। কিন্তু চীন সরকারের আহ্বানের পর ছোট্ট এই প্রতিষ্ঠানটি বড় অর্থনৈতিক ধাক্কা খেয়েছে। আর এই ধাক্কা জাপানের অর্থনীতিতেও বড় ধরনের আঘাত হানতে পারে। কারণ, বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটির জন্য পর্যটন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি।

জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি তাইওয়ান ইস্যুতে মন্তব্য করার পরই চীন এই নিজ নাগরিকদের ওপর এই সতর্কতা আরোপ করে। তাইওয়ানকে চীন নিজের ভূখণ্ড বলে দাবি করে। বেইজিংয়ের এই সতর্কতার পর ব্যাপক হারে জাপানগামী ফ্লাইট বাতিল হচ্ছে, পর্যটন খাতের শেয়ার দাম পড়ছে। ইস্ট জাপান ইন্টারন্যাশনালের ভাইস প্রেসিডেন্ট ইউ জিনশিন বলেন, এটা আমাদের জন্য বিশাল ক্ষতি।

ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড টুরিজম কাউন্সিলের মতে, জাপানের মোট জিডিপির প্রায় ৭ শতাংশ আসে পর্যটন থেকে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে খাতটি দেশটির প্রবৃদ্ধির প্রধান চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছে। সরকারি হিসেবে দেখা গেছে, চীন ও হংকং থেকে আসা পর্যটকরাই মোট বিদেশি পর্যটকের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ।

এ বয়কট প্রতিবছর প্রায় ২ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ইয়েন (১৪ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলার) ক্ষতি ডেকে আনতে পারে বলে অনুমান করছে নোমুরা রিসার্চ ইনস্টিটিউট। ইতিমধ্যে সতর্কতার পর থেকেই জাপানের পর্যটন খাতের শেয়ারগুলো পড়ে গেছে।

চীনের ১০ টিরও বেশি এয়ারলাইন চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত জাপানগামী রুটে টিকিট ফেরত দিচ্ছে। এক এয়ারলাইন বিশ্লেষক অনুমান করেছেন, প্রায় পাঁচ লাখ টিকিট ইতিমধ্যে বাতিল হয়েছে।

এ মাসে জাপানি এমপিদের সামনে তাকাইচি বলেন, চীন তাইওয়ানে হামলা চালালে যদি জাপানের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে পড়ে, তবে তা টোকিওর তরফ থেকে সামরিক প্রতিক্রিয়া উসকে দিতে পারে। এরপরই দীর্ঘ বছরের মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর বিবাদে জড়িয়ে পড়ে এশিয়ার দুই বৃহৎ অর্থনীতি।

চীনের এক কূটনীতিক ও রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম তাকাইচিকে নিয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু করে। এর জেরে জাপান সোমবার তার নাগরিকদের চীনে বাড়তি সতর্কতা নিতে ও ভিড়যুক্ত এলাকা এড়িয়ে চলতে বলে। বেইজিং তাকাইচির এই বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে। তবে টোকিও বলছে, তার মন্তব্য রাষ্ট্রীয়ভাবে নির্ধারিত অবস্থানের মধ্যেই আছে। এতে দ্রুত কোনো সমাধানের সম্ভাবনা নেই বলে ধারণা করা হচ্ছে।

চীন আসন্ন জাপানি চলচ্চিত্রগুলোর প্রদর্শন স্থগিত করেছে। আর চীনে জনপ্রিয় জাপানি তারকারা সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া এড়াতে প্রকাশ্যে নিজেদের অবস্থান জানাতে শুরু করেছেন। মঙ্গলবার ওয়েইবোতে জাপানি গায়িকা মারিয়া লিখেছেন, চীন আমার কাছে দ্বিতীয় মাতৃভূমির মতো, আর সেখানে থাকা বন্ধুদের আমি পরিবারের মতোই দেখি। আমি সব সময় এক চীন নীতিকে সমর্থন করব।

ট্যুর অপারেটর ইউ জানান, প্রতিবেশী দুই দেশের আগের সংকটগুলোর সময় তাদের প্রতিষ্ঠান টিকে যেতে পেরেছিল। যেমন, ২০১২ সালে জাপান যখন বিতর্কিত দ্বীপগুলো রাষ্ট্রীয়করণ করে, তখন চীনে দেশবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল। কিন্তু এবার দীর্ঘস্থায়ী সংকট ভয়াবহ ক্ষতি ডেকে আনতে পারে—বলে মনে করেন তিনি। তার ভাষায়, এক-দুই মাস এভাবে চললে আমরা সামলে নিতে পারব। কিন্তু পরিস্থিতি যদি আরও খারাপ হতে থাকে, তাহলে ব্যবসায় বড় ধরনের আঘাত আসবে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও সংবাদ