২০১৫ সালে ফ্রান্সে পরিবেশ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সেই প্যারিস কনভেনশনে বিশ্বের বহু দেশ সই করেছিল। বলা হয়েছিল, তাপমাত্রার বৃদ্ধি এক দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে আটকে রাখা হবে। এবং এর জন্য নেট জিরো বা কার্বন ফুটপ্রিন্ট শূন্যে নিয়ে যেতে হবে। স্থির হয়েছিল, ক্রমশ ফসিল ফুয়েল বা খনিজ তেল এবং এবং গ্যাসের ব্যবহার কমিয়ে বিকল্প শক্তির উৎসগুলির দিকে নজর দিতে হবে। ইউরোপ এবং অ্যামেরিকা-সহ পৃথিবীর বহু দেশ এই সিদ্ধান্ত সহমত হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে তার কিছুই ঘটছে না।যুক্তরাজ্যের থিংক ট্যাংক কার্বন ট্র্যাকার সম্প্রতি একটি সমীক্ষা করেছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, ইউরোপ এবং অ্যামেরিকার গুরুত্বপূর্ণ তেল এবং গ্যাস সংস্থাগুলি তাদের উৎপাদন কমায়নি। বরং নতুন নতুন তেলের খনির সন্ধান চালাচ্ছে তারা। সৌদি আরব এবং ব্রাজিল-সহ বিশ্বের প্রথম সারির ২৫টি সংস্থাকে নিয়ে এই সমীক্ষাটি চালানো হয়েছে। প্রায় প্রতিটি সংস্থার অবস্থাই এক। রিপোর্টে বলা হয়েছে, সংস্থাগুলি মুখে বলছে, তারা প্যারিস ক্লাইমেট চেঞ্জ কনফারেন্সের সিদ্ধান্তের সঙ্গে সহমত। কিন্তু বাস্তবে তার কোনো প্রতিফলন তাদের কাজে দেখা যাচ্ছে না। বিকল্প শক্তির কথা ভেবে নতুন কোনো প্রকল্পে হাত দেয়নি এই সংস্থাগুলো। একথা জানিয়েছেন, কার্বন ট্র্যাকারের রিপোর্টের লেখক ওকন্নর। যুক্তরাজ্যের ব্রিটিশ পেট্রোলিয়াম এখনো তাদের উৎপাদন আগের মতোই চালিয়ে যাচ্ছে। ছয়টি মহাদেশে এখনো নতুন নতুন তেলের খনি তৈরির বিষয়ে কাজ চালাচ্ছে বিপি। এমন একটি সংস্থা পরিবেশ সচেতনতার তালিকায় সবার উপরে। গ্রেড ডি পেয়ে তাদের স্থান সবার উপরে। এ, বি এবং সি গ্রেড কোনো সংস্থাই পায়নি। রিপোর্টে বলা হয়েছে ২০৩০ সালের মধ্যে বিপি তাদের প্রোডাকশন বন্ধ করবে বলে জানিয়েছে। সেই লক্ষ্য নিয়েই তারা এগোচ্ছে। স্পেনের রেপসোল, নরওয়ের ইকুইনোর, যুক্তরাজ্যের শেল তাদের উৎপাদন কমানোর চেষ্টা করছে। ২০২৪ সালের মধ্যে অ্যামেরিকার চেসাপিক সংস্থা উৎপাদন কমানোর কথা বললেও তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা স্পষ্ট নয়। তবে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা সৌদি আরব, ব্রাজিল এবং একাধিক মার্কিন সংস্থার। তাদের ভবিষ্য়ৎ পরিকল্পনায় পরিবেশ নিয়ে কোনো সুস্পষ্ট ভাবনাই নেই। ইটালির ইএনআই সংস্থাটি একমাত্র কোম্পানি যারা প্যারিস চুক্তির কথা মাথায় রেখে নিজেদের পরিকল্পনা সাজিয়েছে। এই সংস্থাটি দাবি করছে, দ্রুত তারা বিকল্প শক্তির রাস্তায় হেঁটে কার্বন ফুটপ্রিন্ট শূন্যের কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারবে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই সংস্থাগুলি যদি নেট জিরোর পথে না হাঁটে, তাহলে বিশ্বের তাপমাত্রা এক দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে আটকে রাখা সম্ভব হবে না।