সিরাজগঞ্জের তাড়াশে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরে চিকিৎসক না থাকায় ভেটেরিনারি ফার্মেসির দোকানে-দোকানে ঘুরে রোগে আক্রান্ত গরু-ছাগলের চিকিৎসা নিচ্ছেন ভুক্তভোগীরা। চিকিৎসক ছাড়া ভালো চিকিৎসা সেবা মিলছে না। অথচ গুণতে হচ্ছে বেশি টাকা।মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) তাড়াশ পৌর এলাকার ভাদাস গ্রামের শাহালম নামের এক ব্যক্তি বলেন, আমার একটি ছাগলের তিনটি বাচ্চা হওয়ার পর ওলান প্রদাহ দেখা দেয়। আমি পর পর তিন দিন মা ছাগলটিকে পশু হাসপাতালে নিয়ে আসি। একদিনও ডাক্তার, ওষুধ পাইনি। বাধ্য হয়ে গরু-ছাগলের ওষুধের দোকান থেকে চিকিৎসা ও ওষুধ কিনে নিচ্ছি। তবুও ছাগলটি সুস্থ হচ্ছে না। ডাক্তার ছাড়া সঠিক চিকিৎসা পাওয়া সম্ভব না। বাড়িতে ছাগলের বাচ্চাগুলো গরুর দুধ খেয়ে কোনো মতে বেঁচে আছে।কাউরাইল গ্রামের রেজাউল করিম ও তার স্ত্রী রিনা খাতুন বলেন, গরুর অসুস্থ বাছুর অটোভ্যানে নিয়ে হাসপাতালে এসেছি। ডাক্তার নেই। ভেটেরিনারি ফার্মেসি থেকে চিকিৎসা ও ওষুধ নিতে হল বাধ্য হয়েছি। সোনাপাতিল গ্রামের আনছের আলী বলেন, আমার গরু ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত। সকালে হাসপাতালে এসেছি। বেলা ১১টার মতো বাজে। ডাক্তার নেই। উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের এফএআই ওরাফেল আহাম্মেদ বলেন, প্রাণিসম্পদ দপ্তরে চিকিৎসক নেই দুই বছরে ধরে। করোনার পর গবাদিপশুর জরুরি ওষুধ সরবরাহ বন্ধ। এ কারণে সরকারিভাবে ভেটেরিনারি চিকিৎসা ব্যবস্থা একেবারে বন্ধের উপক্রম। চিকিৎসক হিসাবে বিবেচনা করলে এখন একজনও নেই। এমন পরিস্থিতির মধ্যে রায়গঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. অলিউল ইসলামকে তাড়াশ উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের অতিরিক্ত দায়িত্বে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি অনেক সপ্তাহে অফিস করেন না। রায়গঞ্জেই থেকে যান। করোনার পর থেকে গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির রোগব্যাধির চিকিৎসায় অত্যাবশ্যকীয় বেশ কয়েক ধরনের ওষুধ দিচ্ছে না প্রাণিসম্পদ দপ্তর। ভুক্তভোগী লোকজনকে সান্তনা দেওয়ার মতো যৎসামান্য কৃমিনাশক ওষুধ রয়েছে। কিন্তু গবাদিপশুর আঠালীপোকা মারা ওষুধ, এ ছাড়া বিভিন্ন প্রকার রোগ-বালাইয়ের সিরাপসহ কোন ওষুধ নেই । চলতি অর্থ বছরে যে ওষুধ দেওয়া হয়েছে। এত কম ওষুধে চিকিৎসা সেবা চালিয়ে নেওয়া সম্ভব না। প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ দপ্তরের ভেটেরিনারি সার্জন, ইউএলএ, ভিএফএ, এফ.এ.(এ.আই), অফিস সহকারী, পিয়ন, ড্রেসার ও অফিস সহায়কের পদের আরও নয়জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদ শূন্য রয়ে গেছে। রায়গঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. অলিউল ইসলাম বলেন, সপ্তাহে একদিন অল্প সময়ের জন্য হলেও তিনি তাড়াশে অফিস করার চেষ্টা করেন।এ প্রসঙ্গে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. ওমর ফারুক দৈনিক ইত্তেফাককে বলেন, কয়েক মাস আগে সচিব এসেছিলেন সিরাজগঞ্জে। আমি তার কাছে তাড়াশ প্রাণিসম্পদ দপ্তরের নানাবিধ সমস্যার কথা তুলে ধরেছি। তিনি সমাধানের আশ্বাস দিয়ে গেছেন।