সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:০০ অপরাহ্ন

শিল্পোদ্যোক্তাদের পাশাপাশি বিদেশি ক্রেতারা অনিশ্চয়তায়

প্রতিবেদকের নামঃ
  • প্রকাশের সময়ঃ সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ২৪ প্রদর্শন করেছেন

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার বদলের পর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শিল্পকারখানায় শুরু হয়েছে শ্রমিক বিক্ষোভ। তাতে গাজীপুর, নরসিংদীসহ বিভিন্ন শিল্প এলাকায় কারখানা বন্ধের ঘটনাও ঘটেছে। এসব ঘটনায় নিরাপত্তাহীনতা দেখা দিয়েছে শিল্পোদ্যোক্তাদের মধ্যে। পাশাপাশি ব্যাংক খাতের সমস্যায় জর্জরিত শিল্প খাত। তাতে নতুন বিনিয়োগ যেমন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি কর্মসংস্থানেও বিরূপ প্রভাব ফেলছে। ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নিয়ে নতুন সরকারের কাছে প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ।
ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের কারণে দেশে একটা পরিবর্তন এসেছে। পুলিশ বাহিনী একদম ভেঙে পড়েছে। এই বাহিনীকে আবার নতুন করে সংগঠিত করা হচ্ছে। তার জন্য সময় লাগবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তারা যথেষ্ট চেষ্টা করছে। তবে তাদেরও সীমাবদ্ধতা আছে। এ কারণে শিল্পকারখানায় গুপ্ত হামলা হচ্ছে। শ্রমিকদের ওপরও হামলা ও বিভিন্ন ধরনের অপরাধ হচ্ছে। যার কারণে আমরা পোশাক কারখানা নিরবচ্ছিন্নভাবে চালাতে পারছি না। যে ক্রয়াদেশ আমাদের হাতে রয়েছে, সেগুলো সময়মতো না পাঠানোর কারণে ক্রেতারাও আতঙ্কিত। তাঁদের আমরা কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারছি না, কত দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আমাদের মতো বিদেশি ক্রেতারাও অনিশ্চয়তার মধ্যে আছেন।

তৈরি পোশাকশিল্পে গত মাস থেকে শ্রম অসন্তোষ চলছে। গত বছরের ডিসেম্বরে নিম্নতম মজুরি বোর্ডের চূড়ান্ত করা নতুন মজুরিকাঠামো কার্যকর হয়েছে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর শ্রমিকেরা বিভিন্ন দাবি নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। শ্রমিকদের অনেক দাবি যৌক্তিক। আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে সেগুলো পূরণও করা হয়েছে। তারপরও শ্রমিকদের একটি অংশ নিত্যনতুন দাবি নিয়ে কর্মবিরতি কিংবা বিক্ষোভে নামছেন। এর পেছনে আসলে সংঘবদ্ধ একটি গোষ্ঠী কাজ করছে। তারা শ্রমিকদের উসকে দিয়ে তৈরি পোশাকশিল্পের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত করতে চায়।
শ্রম মন্ত্রণালয় ১১ সদস্যের শ্রমসংক্রান্ত অভিযোগ পর্যবেক্ষণ কমিটি গঠন করেছে। কমিটিতে সরকার, মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধি ছাড়া নিরপেক্ষ ব্যক্তিরাও আছেন। এই কমিটি যত দ্রুত সম্ভব সমাধান দিলে শিল্পের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। আমি বিশ্বাস করি না শুধু সেনাবাহিনী দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। সরকার, মালিক ও শ্রমিক মিলে সমাধান দিলেই কেবল আমরা আমাদের হাতে থাকা ক্রয়াদেশের পণ্য রপ্তানি করতে পারব। ভবিষ্যতে ক্রয়াদেশ চলে যাবে না। ইতিমধ্যে যেসব ক্রয়াদেশ স্থানান্তরিত হয়েছে, সেগুলো ফেরত আনা সম্ভব হবে।

বিজিএমইএর তথ্যানুযায়ী, গত জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত আর্থিক সংকটের কারণে ২৭০টি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়েছে। আমাদের দেশের পণ্যের চাহিদা আগের মতো নেই। বিদেশের ভোক্তারা তৈরি পোশাক কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। সে কারণে আমেরিকা ও ইউরোপে আমাদের রপ্তানি কমে গেছে। পোশাকের দামও কমে গেছে। যে অস্থিরতা চলছে, তাতে ডিসেম্বরের মধ্যে আরও কিছু কারখানা বন্ধ হতে পারে। সেটি হলে আরও অনেক লোক বেকার হবে। রপ্তানিও কমবে। সব মিলিয়ে আমরা একটা অনিশ্চয়তার দিকে যাচ্ছি।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতিতে সময় লাগবে। কারণ, যখন যে ক্ষমতায় এসেছে, তারা নিজেদের স্বার্থে পুলিশকে ব্যবহার করেছে। যার কারণে পুলিশ বাহিনী মনে করত, তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর তারা বুঝতে পেরেছে তাদের ব্যবহার করা হয়েছে। নতুন করে তাদের মানুষের সম্মান ও আস্থার জায়গায় আসতে আরও সময় লাগবে। এদিকে অনেকগুলো দাবি পূরণের পর মজুরি বাড়ানোর জন্যও শ্রমিকদের মাঠে নামানো হচ্ছে। মূলত শ্রমিকদের উসকানি দিয়ে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে পরিকল্পিতভাবে কাজ করানো হচ্ছে। এটি নিয়ন্ত্রণে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের প্রয়োজন।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও সংবাদ