সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:১৪ অপরাহ্ন

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা কতটা সক্ষম?

প্রতিবেদকের নামঃ
  • প্রকাশের সময়ঃ বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর, ২০২৪
  • ১৬ প্রদর্শন করেছেন

গত মঙ্গলবার রাতে দখলদার ইসরাইলের বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে নজিরবিহীন ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। তাদের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের ৯০ শতাংশ নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে বলে জানিয়েছে ইরানের ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড।

ইরানি সামরিক বাহিনী গত বছর এই অস্ত্রটি প্রকাশ করেছিল। তারা জানিয়েছিল, এটি শব্দের চেয়ে ১৫ গুণ বেশি দ্রুত ছুটতে পারে। তাছাড়া এটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় আঘাত হানতে সক্ষম।

তবে সমর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরানের কাছে ক্রুজ ও ব্যালিস্টিক দুই ধরনেরই ক্ষেপণাস্ত্র আছে। ইসরাইলে আক্রমণের ক্ষেত্রে, ইরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে। কিন্তু ইরানের সব ক্ষেপণাস্ত্রই ইসরাইলে আঘাত হানতে সক্ষম নয় দুই দেশের মধ্যকার দূরত্বের কারণে।

তারা বলছেন, ইরানের কাছে শাহাব-১ নামে অল্প পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র আছে। কিন্তু এই সিরিজের ক্ষেপণাস্ত্র ইসরাইলে আঘাত হানতে সক্ষম নয়। কারণ, এর পাল্লা মাত্র ৩০০ কিলোমিটার। অথচ, দুই দেশের মধ্যকার দূরত্ব আকাশপথে ১ হাজার কিলোমিটারের বেশি। ইরানের তৈরি ফাতেহ নামে আরেক সিরিজের মিসাইলের পাল্লা ৩০০-৫০০ কিলোমিটার। এটিও ইসরাইলে আঘাত হানতে সক্ষম নয়।

তেহরানের অস্ত্র ভাণ্ডারে শাহাবের উন্নত সিরিজের একধরনে ক্ষেপণাস্ত্র আছে। যার পাল্লা ৫০০ কিলোমিটারের আশপাশে। এটি দিয়েও ইসরাইলে আঘাত হানা সম্ভব নয়। জুলফিকার নামে একটি সিরিজের ক্ষেপণাস্ত্র ইসরাইলের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারলেও তা দিয়ে নির্ভুল হামলা চালানো সম্ভব নয়। কারণ এর পাল্লা মাত্র ৭০০ কিলোমিটার।

এছাড়া শাহাব-২ ক্ষেপণাস্ত্রের চেয়ে ৫০ কিলোমিটার বেশি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হলো ক্বিয়াম-১। এটি ইসরাইলের অল্প কিছু এলাকায় আঘাত হানতে পারলেও পুরো ইসরাইলে আঘাত হানা এটির পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু ইরানের কাছে থাকা শাহাব সিরিজের সর্বাধুনিক প্রকরণ শাহাব-৩ অনায়াসে ইসরাইলে আঘাত হানতে পারবে। কারণ এর পাল্লা ২০০০ কিলোমিটার। কেবল ইসরাইল নয়, ইরানের এই ক্ষেপণাস্ত্র মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় সব দেশকেই লক্ষ্যবস্তু করতে পারবে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, গত মঙ্গলবারের হামলায় ইরান এই ক্ষেপণাস্ত্রই ব্যবহার করেছে।

ইরানের অস্ত্র ভাণ্ডারে অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র থাকলে ইসরাইলেরও আছে সর্বাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। কিন্তু বিভিন্ন ভিডিও থেকে দেখা গেছে, এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মঙ্গলবার রাতে সেই অর্থে কাজ করেনি। ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ঠিকই তেল আবিবে আঘাত হেনেছে।

ইসরাইলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মূলত একটি স্তরীভূত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। যা আয়রন ডোম, ডেভিডস স্লিং এবং অ্যারো সিস্টেম নিয়ে গঠিত। ইসরাইলের অ্যারো এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমে সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল (স্যাম) বা ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে থাকে। এই সিস্টেমের ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর পাল্লা ২০০০-২৪০০ কিলোমিটারের মধ্যে। এটি মাটি থেকে ১০০ কিলোমিটার ওপরে উঠে আগত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রকে আঘাত হানতে পারে। সম্ভবত, বর্তমান বিশ্বে এটিই সবচেয়ে অত্যাধুনিক সিস্টেম।

ইসরাইলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার আরেকটি স্তরের নাম ডেভিডস স্লিং। এই সিস্টেমে ব্যবহৃত ক্ষেপণাস্ত্র বা ইন্টারসেপ্টরগুলোর পাল্লা ৩০০ কিলোমিটার। এই সিস্টেমে ব্যবহৃত ইন্টারসেপ্টরগুলো মাটি থেকে ১৫ কিলোমিটারের মতো ওপরের দিকে উঠে আগত ক্ষেপণাস্ত্রকে আঘাত হেনে ধ্বংস করতে পারে।

সর্বশেষ যে স্তরটি আছে, সেটি হলো—আয়রন ডোম। মূলত স্বল্প পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র বা ইন্টারসেপ্টর ব্যবহার করে থাকে এই আয়রন ডোম সিস্টেম। এই সিস্টেমের ব্যবহৃত ক্ষেপণাস্ত্র বা ইন্টারসেপ্টরগুলোর পাল্লা ৭০ কিলোমিটারের মতো এবং এগুলো ভূমি থেকে ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত উচ্চতায় উঠে আগত ক্ষেপণাস্ত্র বা শত্রুর ছোড়া বস্তুকে আঘাত হানতে পারে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও সংবাদ