অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের সীমান্তবর্তী উপজেলা ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ী ও শ্রীবরদীতে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যার উন্নতির হয়েছে। সোমবার বৃষ্টি না হওয়ায় পাহাড়ি ঢলে আগ্রাসন কমে গেছে।
পাহাড়ি নদী মহারশি, সোমেশ্বরী, ভোগাই ও চেল্লাখালীর পানি বিপৎসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে উজান থেকে ঢলের পানি নেমে ভাটি এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে অনেক ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাটে পানি জমে থাকায় মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। মঙ্গলবার ভোর থেকে আবার বৃষ্টি শুরু হওয়ায় বানভাসিদের কষ্ট আরও বেড়েছে।
এদিকে সোমবার বন্যার পানিতে ডুবে নালিতাবাড়ী উপজেলায় জিমি আক্তার নামে ৮ বছরের এক শিশু মারা গেছে বলে জানিয়েছেন ওসি ছানোয়ার হোসেন এবং নকলার টালকি এলাকায় রাহিম নামে ৫ বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওসি হাবিবুর রহমান। এ নিয়ে গত ৫ দিনে বন্যার পানিতে ডুবে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ জনে।
ঢল নামা অব্যাহত থাকায় সদর উপজেলার গাজীরখামার, ধলা, বাজিতখিলা ও পাকুরিয়া ইউনিয়নের আংশিক এবং নকলা উপজেলার নকলা, উরফা, গণপদ্দী ও গৌরদ্বার ইউনিয়নের আংশিক এবং নকলা পৌরসভার আংশিক প্লাবিত হয়েছে।
এ বন্যার কারণে রোপা আমন ধান ও সবজিসহ সবধরনের ফসলের এবং মাছ চাষিদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া আঞ্চলিক মহাসড়কসহ গ্রামীণ রাস্তাঘাট, বাঁধ ও ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে। অনেক বানভাসি মানুষ গবাদি পশু ও পরিবার পরিজন নিয়ে পাকা রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জেলায় রোপা আমন ৪৬ হাজার ৭৯০ হেক্টর জমির ধান, ১ হাজার ৬২ হেক্টর জমির সবজি বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এছাড়া বস্তায় আদা চাষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৪ লাখ ৬৯ হাজার ২৯৪টি বস্তা বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে।
মঙ্গলবার জেলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নকিবুজ্জামান খান জানান, নালিতাবাড়ীর ভোগাই নদীর পানি কমে নালিতাবাড়ী পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৬৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে এবং নাকুঁগাও পয়েন্টে ৩৭১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। চেল্লাখালী নদীর পানি কমে বিপৎসীমার ৮৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বাড়লেও তা বিপৎসীমার ৫২৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মঙ্গলবার সকাল ৯টায় শেরপুর পয়েন্টে ৪৪, নালিতাবাড়ী পয়েন্টে ১৯ ও নাকুঁগাও পয়েন্টে ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। নকলায় পানি বেড়েছিল তা কমতে শুরু করেছে। বন্যা কবলিত এলাকায় সরকারি ও বেসরকারিভাবে ত্রাণ তৎপরতা পুরোদমে চলছে। জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী ও বিজিবির পক্ষ থেকে বন্যার্তদের মধ্যে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।