দুর্গাপূজা এলেই ভারতের দুই বাঙালি পরিবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে। একটি হচ্ছে কলকাতার ভবানীপুরের মল্লিকবাড়ি আর অন্যটি মুম্বাইয়ের মুখার্জিবাড়ি। প্রতি বছরের মতোই ঢাকঢোল আর দেবী-বন্দনায় এবারও সরব মুম্বাইয়ের মুখার্জি পরিবার। কিন্তু আর জি করের ঘটনায় শোকাহত মল্লিকবাড়ির সদস্যরা এবার সীমিত করেছেন পূজার আয়োজন। সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ থাকছে কলকাতার মল্লিকবাড়ির গেট।
ঢাকঢোলে সরব মুখার্জিবাড়ি
মুম্বাইয়ে দুর্গাপূজা নিয়ে অন্যতম বড় আয়োজন সাজায় মুখার্জি পরিবার। উৎসবে অভিনেত্রী কাজল, তার মা তনুজা এবং ছোট বোন তানিশার সঙ্গে যোগ দেন রানী মুখার্জি, অয়ন মুখার্জিরা। উপস্থিত থাকেন জয়া বচ্চন, রণবীর কাপুরসহ অনেক তারকা। এত দিন জুহুর টিউলিপ স্টার হোটেলে হতো আয়োজন। এবার ভেন্যু বদলে জুহুর এসএনডিটি উইমেন্স ইউনিভার্সিটির সামনে তৈরি হয়েছে পূজামণ্ডপ।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে জানাচ্ছে, মুখার্জিবাড়ির পূজার জোগাড় থেকে ভোগ পরিবেশন পর্যন্ত সব কাজে এগিয়ে থাকেন কাজল ও রানী। এবার অষ্টমীর সকালেও সেজেগুজে পূজামণ্ডপে হাজির হয়েছেন কাজল। গোলাপি ও বেগুনিরঙা শিফন শাড়িতে স্লিভলেস ব্লাউজে দ্যুতি ছড়াচ্ছিলেন নায়িকা। কাজলের সঙ্গে দেখা গেল অজয় দেবগনকে। তবে পাপারাজ্জিদের যন্ত্রণায় মেজাজ ঠিক রাখতে পারেননি কাজল। ছবি তোলার যন্ত্রণা তো ছিলই, সেই সঙ্গে তারা পূজামণ্ডপে জুতা পরে প্রবেশ করায় রেগে যান কাজল। অষ্টমীর দিনে হলুদ রঙের শাড়ি আর ম্যাচিং ব্লাউজ পরে কাজলদের পূজায় যান অমিতাভ ঘরনি জয়া।
ছাইরঙা পাঞ্জাবি পরে মুখার্জিবাড়ির পূজায় দেখা গেল রণবীর কাপুরকে। তিনি দীর্ঘ সময় রানী মুখার্জির পাশে বসে আড্ডা দিয়েছেন। এ দিন রানী পরেছিলেন হলুদরঙা শাড়ি, সঙ্গে ম্যাচিং ব্লাউজ ও খোঁপায় মালা। রণবীরপত্নী আলিয়া ভাটও এসেছিলেন মুখার্জিবাড়ির পূজায়।
এবারই প্রথম বন্ধ মল্লিকবাড়ির গেট
কলকাতার বনেদি বাড়ির পূজাগুলোর মধ্যে অন্যতম দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুরের মল্লিকবাড়ির পূজা। অভিনেতা রঞ্জিত মল্লিক ও কোয়েল মল্লিকদের বাড়ি এটা। আনন্দবাজার পত্রিকা জানাচ্ছে, এ বছর মল্লিকবাড়ির পূজা ১০০ বছর পূর্ণ করল। এই দীর্ঘ সময়ে এবারই প্রথম দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ থাকছে মল্লিকবাড়ির ফটক।
প্রতিবছর এ বাড়িতে পূজা দেখতে আসেন হাজার হাজার দর্শনার্থী। তবে এবার আর জি করের মর্মান্তিক ঘটনায় পরিবারের সবার মন খারাপ। রঞ্জিত মল্লিক বলেন, ‘এবার রীতিনীতি মেনে পূজা হলেও কোনো রকম উৎসবে শামিল হচ্ছি না। বাড়িতে পূজার আনন্দটাও অন্যবারের তুলনায় অনেকটা ম্লান। এ ছাড়া এ বছর শততম বর্ষে দেশ-বিদেশ থেকে অনেক আত্মীয়স্বজন আসছেন। তাই এ বছর দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত রাখা সম্ভব হচ্ছে না মল্লিকবাড়ির দরজা।’ তবে, একটি ভিডিও বার্তায় বাড়ির পূজামণ্ডপে বসে সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন কোয়েল মল্লিক।
মল্লিকবাড়ির পূজার সূচনা রাধাগোবিন্দ মল্লিকের হাত ধরে গুপ্তিপাড়ায়। পরে তারা ভবানীপুর চলে গেলে রাধাগোবিন্দর পুত্র সুরেন্দ্র মাধব মল্লিকের হাত ধরে ১৯২৪ সালে ভবানীপুরের মল্লিকবাড়িতে শুরু হয় পূজা। মল্লিকবাড়ির পূজা হয় বৈষ্ণব মতে। পূজা উপলক্ষে দেশ-বিদেশ থেকে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুরা আসেন, আসেন শোবিজ তারকারাও। গমগম করে ওঠে ভবানীপুরের মল্লিকবাড়ি। সবার সঙ্গে আনন্দে মেতে ওঠেন রঞ্জিত মল্লিক, কোয়েল মল্লিকসহ পুরো পরিবার।