গাজীপুর মহানগরীর পূবাইল উচ্চ বিদ্যালয় এবং পূবাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ দুটি লক্ষ্মী দশমী মেলার নামে ইজারা দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পূবাইল থানা বিএনপির সভাপতি মনির হোসেন বকুলের সমন্বয়ে স্থানীয় বিএনপির একটি অংশ ১০দিনের জন্য ওই মাঠ ১১ লাখ টাকায় ইজারা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। অথচ প্রশাসন থেকে স্কুল মাঠে মেলা আয়োজনের কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি।
আজ রোববার দিবাগত রাতে নগরীর ৪১ নং ওয়ার্ডে অনুষ্ঠিত ওই পূজার সমাপনী দশমী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলনের।
সোমবার সকালে প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে এই পূজার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু দশমী মেলার অনুমতির জন্য পূবাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ আমিরুল ইসলামের একটি চিঠি সিটি এসবির বরাবর ইস্যু করে তা অনুমোদন হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে। ওসির ওই ইস্যুকৃত পত্রটি দেখিয়ে ইতোমধ্যে দোকানীদের কাছ থেকে ৮ লাখ টাকা আদায় করা হয়েছে।
পূজার লম্বা ছুটি শেষে আজ রোববার থেকে স্কুল খুলেছে। কিন্তু ওই দুটি স্কুল মাঠে মেলার আয়োজন হওয়ায় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম লক্ষ্য করা গেছে। এদিকে বার্ষিক পরীক্ষা আসন্ন। এমতাবস্থায় শিক্ষা কার্যক্রমের বিঘ্ন ঘটায় শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা।
দীর্ঘদিন ধরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দশমী মেলার আয়োজন করে আসছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী আবদুল খলিল। তিনি জানান, এবার মেলা করার জন্য আমার কাছে ১০ লাখ চাওয়া হয়েছে। কিন্তু এরও বেশি পেয়ে বড় মনির, বিল্লাল, কুদ্দুস ও রফিকদের দোকান বরাদ্দ দিয়েছে। পর পর তিন বছর আমাদের নেতৃত্বে মেলার বিভিন্ন পসরাসহ দোকান বসতো। এবার টাকার অংক অনেক বেশি চাওয়ায় আমরা আসতে পারিনি।
পূবাইল থানার ওসি শেখ আমিরুল ইসলাম যুগান্তরকে জানান, আমি মেলায় কী করতে পারবে আর কী পারবে না এটা জানিয়ে অনুমোদনের জন্য সিটি এসবির বরাবরে পত্র পাঠিয়েছি। কিন্তু আমি জানি এখনো সিটি এসবি কোনো অনুমোদন দেয়নি। অথচ স্কুল মাঠে মেলা চলছে।
পূবাইল বাজার রাধা মাধব কেন্দ্রীয় মন্দিরের সভাপতি গোবিন্দ সাহা জানান, প্রতিবার আমরা সনাতম ধর্মীরা উদ্যোগ নিয়ে দশমী উদযাপন করতাম। কিন্তু এবার বিএনপির পূবাইল থানার সভাপতি মনির হোসেন বকুলের সমন্বয়ে আফজালসহ বিএনপির একটি অংশ মেলার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে। আমাদের মন্দিরের জন্য তারা ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা দিয়েছে।
পূবাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আলমগীর হোসেন জানান, আগামী রোববার থেকে স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা। পূজা উপলক্ষে লম্বা সময় স্কুল ছুটি ছিল। আজ থেকে স্কুল খুলেছে। পরীক্ষা সামনে রেখে স্কুল মাঠে দশমী মেলার আয়োজনে শিক্ষা কার্যক্রমের বিঘ্ন ঘটছে, এমন অভিযোগ অভিভাবকদের। তারা শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
স্কুল মাঠে মেলার অনুমতি নিয়ে পূবাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পিয়া রানী দাস বলেন, আমার করার কিছুই নাই। সকালে স্কুলের বারান্দা থেকে মেলার মালামাল অপসারণ করেছি। মেলার কারণে স্কুলের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি একবারেই কম।
অভিযোগের বিষয়ে স্থানীয় বিএনপি নেতা আফজাল হোসেন জানান, দশমী মেলায় আমি কোনো টাকা পয়সা লেনদেন করিনি। কে কী বললো আমি বলতে পারব না, আসেন তাদের উপস্থিতিতে সামনাসামনি কথা বলি।
পূবাইল থানা বিএনপির সভাপতি মনির হোসেন বকুল যুগান্তরকে জানান, দশমী হিন্দু সম্প্রদায়ের উৎসব, স্কুল মাঠে মেলার জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ অনুমতি দিয়েছে। সবকিছু হিন্দুরাই করছে।
গাজীপুর জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) সোহেল রানা জানান, পূবাইল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে দশমী মেলার নামে আমরা কোনো মেলার অনুমোদন দিইনি। স্কুল মাঠ দখল করে কেউ মেলা করতে চাইলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন সিটি এসবির ডিসি আবুল বাশার আতিক জানান, পূবাইল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে দশমী মেলার কোনো অনুমোদন দেওয়া হয়নি। প্রতিমা বিসর্জনের পর আর মেলা থাকবে না।