বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:২৭ পূর্বাহ্ন

উত্তর কোরিয়া ইস্যুতে দক্ষিণ কোরিয়াকে কঠোর সতর্কবার্তা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • প্রকাশের সময়ঃ বুধবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৪
  • ২৭ প্রদর্শন করেছেন

দক্ষিণ কোরিয়াকে তার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে গোয়েন্দা তথ্যের অপব্যবহার বা ইউক্রেন যুদ্ধে উত্তর কোরিয়ার কথিত জড়িত থাকার অভিযোগের ভিত্তিতে হঠাৎ প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নেওয়া থেকে সাবধান থাকা উচিত বলেই সতর্কবার্তা দিয়েছেন দেশটির বিশ্লেষকরা।

দক্ষিণ কোরিয়ান সমালোচক ও বিশ্লেষকদের থেকে এ ধরনের সতর্কবার্তা এমন সময়ে এলো, যখন সিউল ইউক্রেনে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের একটি দল পাঠানোর কথা বিবেচনা করছে।

দেশটির একজন শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেছেন, সিউল ইউক্রেনে প্রাণঘাতী অস্ত্র সরবরাহ করতে পারে, যদি উত্তর কোরিয়া রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের সহায়তায় জড়িত হয়।

এদিকে মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিন বুধবার বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার সেনারা রাশিয়ায় রয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে তারা সেখানে ঠিক কী করছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, ‘এটা প্রমাণিত যে পিয়ংইয়ংয়ের সেনারা রাশিয়ায় আছে, কিন্তু সেখানে তারা আসলে কি করছে, তা এখনো আমরা খুঁজে বের করতে পারিনি’।

উত্তর কোরিয়ার সেনা মোতায়েনের তথ্য

দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনআইএস বুধবার জানিয়েছে যে, উত্তর কোরিয়ার প্রায় ৩,০০০ সেনা ইতোমধ্যেই রাশিয়ায় পাঠানো হয়েছে এবং মোট ১০,০০০ সেনা ডিসেম্বরের মধ্যে মোতায়েন করা হতে পারে।

সম্প্রতি এই তথ্য দক্ষিণ কোরিয়ার সংসদে গোয়েন্দা কমিটির একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠকে প্রকাশ করা হয়।

দক্ষিণ কোরিয়ার এনআইএস আগেই জানিয়েছিল যে, উত্তর কোরিয়া তাদের সেনা রাশিয়ায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রথম ধাপে প্রায় ১,৫০০ সেনা অক্টোবরের ৮ থেকে ১৩ তারিখের মধ্যে রাশিয়ায় পৌঁছেছে বলে জানা যায়।

পার্ক সান-ওয়ান নামে দক্ষিণ কোরিয়ার ডেমোক্রেটিক পার্টির এক এমপি জানান, প্রথম ব্যাচের ১,৫০০ সৈন্যের রাশিয়ায় গমনের পরে আরও ১,৫০০ সৈন্য এখন পাঠানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এই সৈন্যরা বর্তমানে রাশিয়ান সামরিক স্থাপনায় অবস্থান করছে এবং তাদের নতুন পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিচ্ছে।

রুশ প্রশিক্ষকদের মতে, উত্তর কোরিয়ার সেনারা শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ হলেও আধুনিক যুদ্ধকৌশল, বিশেষত ড্রোন যুদ্ধের ক্ষেত্রে তারা দক্ষ নয়। এর ফলে এই বাহিনীর মধ্যে উচ্চ মৃত্যু হার হতে পারে বলে তারা পূর্বাভাস দিয়েছেন।

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিক্রিয়া 

এদিকে, দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার ইউক্রেনে গোয়েন্দা কর্মীদের পাঠানোর পরিকল্পনা করছে বলে খবর পাওয়া গেছে। তারা উত্তর কোরিয়ার সেনাদের রণকৌশল বিশ্লেষণ এবং যুদ্ধক্ষেত্রে বন্দি হলে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের দায়িত্বে থাকতে পারে।

এছাড়া দক্ষিণ কোরিয়ার উপ-জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা কিম তায়ে-হো বলেছেন যে, উত্তর কোরিয়া এবং রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান সামরিক সহযোগিতার কারণে দক্ষিণ কোরিয়া ‘ধাপে ধাপে পদক্ষেপ’ নেবে।

এই পদক্ষেপগুলোর মধ্যে ইউক্রেনকে প্রতিরক্ষামূলক অস্ত্র সরবরাহ করা এবং উত্তর কোরিয়ার যুদ্ধ সহযোগিতার ওপর নির্ভর করে প্রয়োজন হলে প্রাণঘাতী অস্ত্র সরবরাহও অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।

যদিও দক্ষিণ কোরিয়া ইউক্রেনে এখন পর্যন্ত কোনো সরাসরি অস্ত্র পাঠায়নি, তবে তারা অপ্রাণঘাতী সহায়তা যেমন গ্যাস মাস্ক, ফিল্ড রেশন এবং জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে।

খবর পাওয়া গেছে যে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে ইউক্রেনকে গোলাবারুদ সরবরাহ করেছে।

সামরিক বিশেষজ্ঞদের মতে, দক্ষিণ কোরিয়া ইউক্রেনকে চেওংগুং-২ (Cheongung-II) সারফেস-টু-এয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা সরবরাহ করতে পারে, যা তার নির্ভুলতার জন্য পরিচিত। এছাড়াও, দক্ষিণ কোরিয়া কে-নাইন (K9) সেলফ-প্রোপেলড হাউইটজার, কেটু (K2) প্রধান যুদ্ধ ট্যাঙ্ক এবং চুনমু (Chunmoo) মাল্টিপল রকেট লঞ্চার পাঠানোর বিষয়ে বিবেচনা করতে পারে।

সমালোচনার শিকার দক্ষিণ কোরিয়া

তবে দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়ে সতর্ক করেছেন দেশটির কিছু আইনপ্রণেতা এবং পর্যবেক্ষক।

বিরোধী দল রিকনস্ট্রাক্টিং কোরিয়া পার্টির (আরকেপি) কিম জুন-হিউং এবং ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (ডিপিকে) লি জায়ে-গ্যাং যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, ‘অপ্রমাণিত গোয়েন্দা তথ্য’র ভিত্তিতে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া বিপজ্জনক হতে পারে।

তারা সরকারকে প্রমাণ পেশ করার আহ্বান জানান এবং বলেন, উত্তর কোরিয়ার সেনারা যদি সত্যিই ইউক্রেন যুদ্ধে জড়িত থাকে, তবে প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নেওয়া একটি গুরুতর ভুল হবে।

অন্যদিকে, কিছু বিশ্লেষক সতর্ক করেছেন যে, দক্ষিণ কোরিয়া তাড়াহুড়ো করে উত্তর কোরিয়ার রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে জড়িত থাকার বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে।

ইনচিয়ন ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক লি জুন-হান বলেন, দক্ষিণ কোরিয়া এখন এমন পরিস্থিতিতে রয়েছে, যেখানে অতিরিক্ত ঝুঁকি নেওয়া ঠিক হবে না।

তিনি আরও বলেন, দেশে চলমান রাজনৈতিক উদ্বেগের কারণে দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণে হয়তো নিরপেক্ষতা ব্যাহত হতে পারে।

উত্তেজনা বাড়ছে

এদিকে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উনের বোন কিম ইয়ো-জং মঙ্গলবার দক্ষিণ কোরিয়া এবং ইউক্রেনকে ‘সামরিক উসকানি’ দেওয়ার জন্য অভিযুক্ত করেছেন।

কেসিএনএ সংবাদ সংস্থার এক প্রতিবেদনে তিনি দক্ষিণ কোরিয়া ও ইউক্রেনকে ‘যুক্তরাষ্ট্রের দ্বারা প্রশিক্ষিত নেড়ি কুকুর’ হিসেবে অভিহিত করেন এবং প্রতিশোধমূলক হুমকি দেন। সূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও সংবাদ