সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:০৬ অপরাহ্ন

‘নিষিদ্ধ যানবাহন’ থেকেই ওসির আয় ৩ কোটি

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশের সময়ঃ সোমবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৪
  • ২০ প্রদর্শন করেছেন

কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের মিরপুর হাইওয়ে ফাঁড়ির ওসি মনজুরুল আবছার গত এক বছরে নসিমন, করিমন, অটোরিকশাসহ মহাসড়কে চলাচলকারী ছোট ছোট নিষিদ্ধ যানবাহন থেকেই হাতিয়ে নেন অন্তত তিন কোটি টাকা। স্থানীয়ভাবে জোড়াতালি দিয়ে তৈরি নিষিদ্ধ এসব যানবাহন থেকে তিনি মাসিকভিত্তিতে টাকা আদায় করতেন। অনেকে টাকা দিতে দেরি করলে বা টাকা দিতে গড়িমসি করলে গাড়ি আটকে রাখতেন। এই ফাঁড়িতে কোনো ওসি সাধারণত ৩ মাসের বেশি টেকেন না কিন্তু অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ওসি মনজুরুল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ভাগ্নে পরিচয় দিয়ে তিনি ১ বছরের বেশি সময় ধরে এই পদে দাপটের সঙ্গে রয়েছেন। এই অঞ্চলটা চোরাকারবারিদের দাপটও অনেক। তাদের কাছ থেকেও নিয়মিত বিরতি দিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করতেন। এছাড়া নানা অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে যাওয়ায় তাকে নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরে এলাকায় জোর সমালোচনা চলছে। মাসোহারা আদায়ের হিসাব রাখার জন্য তিনি নিয়োগ দিয়েছেন বেশ কয়েকজন ক্যাশিয়ার।

ভিংলাবাড়ী এলাকার সিএনজিচালক আবু তাহের বলেন, ওসি মনজুরুল আবছার সিএনজি অটোরিকশা থেকে মাসে দুই হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করছেন। কসবা এলাকার শামীম, মিরপুর এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা তুহিন, শালঘর এলাকার জসিম, কোম্পানীগঞ্জ এলাকার আমির হোসেন, তৌহিদুর রহমান, দেলু মিয়া, শিদলাই এলাকার মান্নানসহ বেশ কিছু দালালের মাধ্যমে দুই থেকে আড়াই হাজার সিএনজি অটোরিকশা থেকে মাসোহারা আদায় করছেন। প্রতিটি সিএনজি এবং অটোরিকশা থেকে মাসে ২ হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করা হয়। যেসব সিএনজি মাসোহারার বাহিরে থাকত তাদের আটক করে মামলা দিত এবং প্রতি সিএনজি থেকে অতিরিক্ত ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা আদায় করা হচ্ছে।

ট্রাক্টর চালক হুমায়ুন কবির বলেন, ওসি মনজুরুল আবছার শাইটশালা এলাকার ইউসুফের মাধ্যমে প্রতি ট্রাক্টর ও হলুদ পিকআপ মাসে ১ হাজার টাকা করে, নসিমন থেকে ৫শ, ড্রামট্রাক থেকে ১০ হাজার, ভেকুসহ নানা হেভি ভেহিক্যাল থেকে চাঁদা আদায় করছেন। জানা গেছে, এসব যানবাহন থেকে মাসে কমপক্ষে ৩০ লাখ টাকা আদায় করা করা হচ্ছে।

এলাকার লোকজন জানায়, মিরপুর ফাঁড়ির সামনে দিয়ে দিনে ৪০-৫০টি পিকআপ এবং ১৫-২০টি কাভার্ডভ্যানে ভারতীয় চোরাই চিনি পাচার করা হচ্ছে। ভারত সীমান্ত থেকে এসব চিনি মুরাদনগর, দেবিদ্বার এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাচার হচ্ছে। চোরাই চিনির কারবারি বাঙ্গরা বাজারের শুক্কুর আলীর ছেলে জামাল হোসেন জানান, প্রতি পিকআপ থেকে ওসি মনজুরুল মাসে ত্রিশ হাজার এবং কাভার্ডভ্যান থেকে মাসে ৪০ হাজার টাকা তিনি মাসোহারা আদায় করেন। আমার একটি ছোট পিকআপ আছে এর জন্য আমি মাসে তাকে ১০ হাজার টাকা দেই। আমার সঙ্গে অনেক কাপজাপ করে। মাঝে মধ্যে আমার গাড়ি ফাঁড়িতে আটকে রাখেন।

কোম্পানীগঞ্জ এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন বলেন, ভারতীয়, কসমেটিক্স, শাড়ি, থ্রি-পিস, মসলাসহ নানা ধরনের অবৈধ পণ্য আনার জন্য মনজুরুল আবসারকে প্রত্যেক চোরাকারবারি মাসে ১০-১৫ হাজার টাকা করে করে দিতে হয়। কোম্পানীগঞ্জ বাজারেই এমন ৩০-৩৫ জন চোরাকারবারি রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কনস্টেবল জানান, ওসি মনজুরুল আবছার মাসোহারা হিসাবে যার কাছে যা পেতেন তাই নিয়ে নিতেন। মাসে এই চাঁদাবাজি থেকে তার আদায় হতো কমপক্ষে ৩০ লাখ টাকা। তবে গত এক বছরে তিনি তিন কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়েছেন। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ইন্সপেক্টর মনজুরুল আবছার বলেন, আমি কারও কাছে কোনো প্রকার মাসোহারা নেই না। এগুলো আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার। অবৈধ যানবাহন ধরে ধরে মামলা দেই। আমার নিযুক্ত কোনো ক্যাশিয়ার নেই।

হাইওয়ে পুলিশ কুমিল্লা রিজিয়নের পুলিশ সুপার খাইরুল আলম বলেন, মাসোহারা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেলে ওই ইনচার্জের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, ভুক্তভোগীদের আমার কাছে পাঠিয়ে দেন। আমি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও সংবাদ