ঢাকাই সিনেমায় নব্বই ও শূন্য দশকে দাপটের সঙ্গে অভিনয় করেছেন মান্না, ওমর সানী, সালমান শাহ, বাপ্পারাজ, আমিন খান, শাকিল খান, অমিত হাসানসহ অনেক নায়ক। বর্তমানে এদের কেউ মৃত, অনেকে রয়েছেন সিনেমা থেকে দূরে। পরবর্তীতে অনেক নায়কের জন্ম হলেও একমাত্র শাকিব খান ছাড়া অন্য কেউ শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পারেননি।
তবে গত কয়েকবছর ধরে তিনিও হয়ে গেছেন ঈদনির্ভর নায়ক। উৎসব ছাড়া এখন তিনিও ফ্লপ। অন্য যারা আছেন তাদের কেউ রাজনৈতিক কারণে ইন্ডাস্ট্রি থেকে দূরে, কারও কারও অবস্থান একেবারেই নেই। ঢালিউডে বর্তমানে নায়ক হিসাবে দীর্ঘদিন কাজ করলেও এখন তাদের ক্যারিয়ার মরচে ধরা।
এদের মধ্যে রয়েছেন বাপ্পি চৌধুরী, সাইমন সাদিক, জিয়াউল রোশান, মামনুন ইমন, নীরব, কাজী মারুফ, শরিফুল রাজ, সাইফ খান, কায়েস আরজু, ডি এ তায়েব, শিপন মিত্র, সাঞ্জুজন, আমান রেজাসহ অনেকেই। যাদের নিয়ে কোনো প্রযোজক এখন আর বাজি ধরতে সাহস পান না। অধিকাংশের হাতেই এখন নেই নতুন কোনো কাজ। অনেকেই আর্থিক সংকটে খুঁজছেন বিকল্প পথ।
ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই নিজের অবস্থান তৈরি করতে ব্যর্থ নায়ক বাপ্পি চৌধুরী। ২০১২ সালে অভিষেক। এরপর এক যুগের বেশি ক্যারিয়ারে ত্রিশের অধিক সিনেমা করলেও এখন রয়েছেন অস্তিত্ব সংকটে। কয়েক বছর ধরেই বেকার তিনি। ডাক পাচ্ছেন না কোনো কাজে। সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে টিকে থাকার লড়াইয়ে ব্যর্থ এ নায়কের ক্যারিয়ারে পুরোপুরি মরচে পড়ে গেছে।
২০১২ সালে অভিষেক ঘটে সাইমন সাদিকের। এক যুগের ক্যারিয়ারে প্রায় বিশের অধিক সিনেমা করেছেন। সবশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাগুলোর দিকে নজর দিলেই তার ক্যারিয়ারের দৈন্যদশার চিত্র দেখা যায়। এখন অনেকটা বেকার এ নায়ক। নতুন কোনো কাজের খবরেও নেই তিনি।
২০০৭ সালে অভিষেক হয় ইমনের। মডেলিং, নাটকের গণ্ডি পেরিয়ে সিনেমায় নাম লিখিয়েছেন। কিন্তু দীর্ঘদিন বড় পর্দায় কাজ করেও কোনো হিট সিনেমা দিতে পারেননি। তবুও বন্ধ নেই তার কাজ। ‘করে খাচ্ছি’ টাইপের নায়ক হয়ে এখনো ইন্ডাস্ট্রিতে টিকে আছেন তিনি।
২০০৯ সালে নিরবের সিনেমায় যাত্রা। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে দুই ডজনের অধিক সিনেমায় অভিনয় করলেও সেভাবে ‘হিট’ নামের সাফল্য এখনো ধরা দেয়নি তার ক্যারিয়ারে। তবে নায়ক হিসাবে এভারেজ ছিলেন তিনি।
২০১৬ সালে অভিষেক হয় জিয়াউল রোশানের। আট বছরের পথচলায় যেকটি সিনেমা করেছেন সেগুলো সেভাবে আলোচনায় না আসায় তার ক্যারিয়ারের অবস্থাও এখন নিভুনিভু।
‘ইতিহাস’ সিনেমা দিয়ে শুরুতেই বাজিমাত করেন নায়ক কাজী মারুফ। প্রথম সিনেমা দিয়েই অর্জন করেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। সম্ভাবনাময়ী নায়ক হিসাবে তাকে নিয়ে অনেকেই ভাবেন। কিন্তু এরপর আর হিট সিনেমা দিতে পারেননি। সর্বশেষ তার অভিনীত সিনেমাগুলো দর্শক টানতে না পারায় ছিটকে যান তিনি। বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী তিনি। সেখান থেকেই ‘গ্রীনকার্ড’ নামে একটি সিনেমায় অভিনয় করে ভাগ্য পরীক্ষায় নেমেছিলেন। কিন্তু ব্যর্থ।
২০১৪ সালে নায়ক হিসাবে যাত্রা শুরু করা শিপন মিত্রকে নিয়ে অনেকেই ছিলেন আশাবাদী। কিন্তু তিনিও পারলেন না। নিজের অবস্থান তৈরি করার মতো কোনো সিনেমাই নেই এ নায়কের। অভিনয় ক্যারিয়ার নিয়ে তার ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ।
ইন্ডাস্ট্রিতে ডিএ তায়েব নিজেকে নায়ক হিসাবে প্রমাণ করার বহু চেষ্টা করেছেন। কিন্তু নায়ক হিসাবে তাকে কখনোই দর্শকরা গ্রহণ করেননি। পতিত স্বৈরাচার হাসিনার সমর্থক ছিলেন তিনি। বর্তমানে ভোল পালটে ফেলেছেন।
কট্টর আওয়ামী সমর্থক সাইফ খান। দেড় দশকেরও বেশি সময়ের ক্যারিয়ার তার। কিন্তু এখনো নেই কোনো সাফল্য। ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা এ নায়কের ক্ষেত্রে ‘জিরো’, এটা অনেকেই বলেন।
এ ছাড়াও কায়েস আরজু, সাঞ্জুজন, আমান রেজাসহ আরও কয়েকজন নায়ক চেষ্টা করছিলেন ভালো কিছু করার। কিন্তু তাদের নিয়ে আর কোনো সম্ভাবনা নেই বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।