সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৫৬ অপরাহ্ন

বাংলাদেশ নিয়ে পোস্ট দিয়ে বিপাকে কলকাতার গায়িকা, মুছলেন সব লেখা

বিনোদন ডেস্ক
  • প্রকাশের সময়ঃ সোমবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ৯ প্রদর্শন করেছেন

বাংলাদেশের অস্থির পরিস্থিতি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্ট করার পর থেকেই কটাক্ষের শিকার সঙ্গীতশিল্পী লগ্নজিতা চক্রবর্তী।  ফেসবুকে এই পোস্ট করতেই গায়িকাকে নিয়ে ট্রোল-সমালোচনা শুরু হয়ে যায়।  পরে মুছে ফেলেন সব পোস্ট। এ ঘটনায় তার মনের অবস্থা কী রকম? লিখলেন গায়িকা।

লগ্নজিতা বলেন, ‘ভেবে অবাক হচ্ছি, মানুষের মধ্যে কত ঘৃণা জমে রয়েছে! শনিবার রাতে ফেসবুকে ভারত এবং বাংলাদেশের সম্প্রীতি বিষয়ক একটি পোস্ট করার পর থেকেই দেখলাম, ‘ট্রোলিং’ শুরু হল। তারই জবাবে রোববার আরও কয়েকটা পোস্ট করেছিলাম। কিন্তু দেখলাম, আমি কোনো ভাবেই আলোচনা থামাতে পারব না। কারণ সব সময়েই মনে হয়েছে, এই কঠিন সময়ে মানুষ রেগে রয়েছেন। শেষ পর্যন্ত আমার পরিবার এবং ব্যান্ডের সদস্যদের অনুরোধে যাবতীয় পোস্ট মুছে দিলাম সমাজমাধ্যম থেকে।’

‘তবে এই পুরো ঘটনায় কয়েকটা বিষয় আমার কাছে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, আমরা অনেক সময়েই পরিস্থিতির তুলনায় নিজেদের অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। তাই মতামতের আদানপ্রদানও চলতে থাকে। আমার পোস্টে একের পর এক নেতিবাচক মন্তব্য দেখে আমি খুব রেগে গিয়েছিলাম। মনখারাপ হয়ে যাচ্ছে এই ভেবে যে, এখনও এক সম্প্রদায়ের মানুষ অন্যের প্রতি কতটা অসম্মান পুষে রাখেন মনের ভেতর। বার বার আমাকে বলা হল, আমি দক্ষিণ কলকাতার অভিজাত এলাকার বাসিন্দা। সেখান থেকে বেরিয়ে এসে নাকি সবটা বিচার করা উচিত। আমার প্রশ্ন, প্রত্যেক মানুষের বাস্তবতার একটা পরিপ্রেক্ষিত রয়েছে। এটা ঠিক, আমার জীবনের সত্যের থেকে হয়তো মুর্শিদাবাদের গ্রামের মানুষের বাস্তবতা আলাদা। হতেই পারে। কিন্তু আমি শুধু আমার সত্যকে সম্বল করে কিছু কথা বলেছিলাম। তাতে কারও সমস্যা হলে, আমার সত্যিই কিছু বলার নেই।’

‘কলকাতার যেকোনো বাঙালি শিল্পীর পোস্ট করা গানের নীচে মন্তব্য লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, অর্ধেক যদি এ পার বাংলার বাঙালিদের মন্তব্য আসে, তা হলে বাকিটা ও পারের। আমি এখনও বাংলাদেশে গিয়ে অনুষ্ঠান করার সুযোগ পাইনি। কয়েক বছর আগে ওপার বাংলার আইয়ুব বাচ্চু দমদমে অনুষ্ঠান করতে এসেছিলেন। তার আগে আমি অনুষ্ঠান করি। কিন্তু মনে আছে, তার শো শুরু হওয়ার পর আমি মাটিতে বসে পড়েছিলাম। পরমদা (অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়) সঞ্চালক ছিলেন। পরে তিনিই আমাকে একটা চেয়ারে বসার ব্যবস্থা করে দেন। আমি বলতে চাইছি, তখন আইয়ুব বাচ্চু আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন, কোথায় বসছি সেটা নয়।’

‘অনেকেই এখন বলেন, শিল্পীরা হলেন ‘সফট টার্গেট’। কোনো জিনিসের ভালো এবং খারাপ— দুই নিয়ে পথ চলায় আমি বিশ্বাসী। আমি নিজেকে সঙ্গীতশিল্পী বলে পরিচয় দিয়ে থাকি। কিন্তু কোনো দিনই নিজেকে তারকা মনে করি না। হয়তো কিছু মানুষ আমাকে চেনেন। শিল্পী হিসেবে মানুষ আমাকে ভালোবাসেন বলে জীবনে অনেক সুবিধাও আমি পাই। সুবিধা যদি হাসিমুখে মেনে নিই, তা হলে অসুবিধাও আমাকে মেনে নিতে হবে।’

‘একটা জিনিস স্পষ্ট করে দিই। এই সব কটাক্ষ কিন্তু আমাকে নাড়া দেয়নি। বরং মানুষের প্রতি মানুষের এই ঘৃণা দেখে আমি বিচলিত। কেউ বলতেই পারেন, তা হলে আমি কেন একের পর এক পোস্ট করলাম? আমি কাউকে জবাব দিতে চাইনি। আমার আশপাশের মানুষ যে এতটা অসহিষ্ণু, সেটা ভেবে কষ্ট পেয়েছি। তাই পোস্ট করেছি। ইতিহাস আমি অস্বীকার করছি না। কিন্তু আমার প্রশ্ন, আমরা কি এতটা তীব্র রাগ নিয়েই বেঁচে থাকব? আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকেও কি এই রাগের উত্তরাধিকার দিয়ে যাব?’

‘মানুষ এখন রেগে রয়েছেন। সেখানে দাঁড়িয়ে আমি তো তাদের আরও মারামারি করতে বলতে পারি না। আমি সেখানে সম্প্রীতির বার্তাই দিতে পারি। সেটাই করেছিলাম। আমি বিশ্বাস করি, ‘এক দিন পৃথিবী আবার শান্ত হবে’। তখন আবার ‘জেমস’ পশ্চিমবঙ্গে অনুষ্ঠান করতে আসবে। আবার এপার বাংলার শিল্পীরা ওপার বাংলায় অনুষ্ঠান করতে যাবেন। এখন সম্ভব না হলেও গত ন’বছরে আমি যত বাংলাদেশি শিল্পীর সঙ্গে কাজ করেছি, তারা নিশ্চয়ই আমাকে ভুলে যাবেন না। শান্তি ফিরে এলে, তাদের সঙ্গে কাজের সুযোগ হলে আমি নিশ্চয়ই আবার তাদের সঙ্গে কাজ করব। দুই বাংলা আবার একসঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করবে।’

তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও সংবাদ