সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:২৬ অপরাহ্ন

ঢালিউডে কেন উপেক্ষিত সিনিয়র শিল্পীরা!

বিনোদন ডেস্ক
  • প্রকাশের সময়ঃ বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ৮ প্রদর্শন করেছেন

আশি ও নব্বইয়ের দশকে ঢাকাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি দাপিয়ে বেড়িয়েছেন রাজ্জাক, শাবানা, ফারুক, ববিতা, সোহেল রানা, বুলবুল আহমেদ, অঞ্জনা, জসীম, আলমগীর, কবরী, উজ্জ্বল, ওয়াসীম, সুচরিতা, রোজিনা, অলিভিয়া, অঞ্জু ঘোষদের মতো তারকাশিল্পী। পরবর্তী সময়ে সিনেমায় আসেন জাফর ইকবাল, ইলিয়াস কাঞ্চন, রুবেল, দিতি, চম্পা। নব্বইয়ের দশকের পর মান্না, মৌসুমী, ওমর সানী, পপি, শাবনূর, পূর্ণিমা, নাঈম, শাবনাজ, সোনিয়া, শাকিল খান, ফেরদৌস, রিয়াজ, অমিত হাসান, আমিন খান, সালমান শাহর মতো অভিনয়শিল্পীরা রাজত্ব করেছেন।

আজ এসব শিল্পীর অনেকেই প্রয়াত, তবে যারা বেঁচে আছেন তারাও সিনেমায় উপেক্ষিত। তাদের কেন্দ্র করে তৈরি হয় না গল্প, নির্মিত হয় না সিনেমা। তবে তারা এখনো কাজ করতে আগ্রহী। কিন্তু সে ধরনের গল্প নেই বলে তারা আজও সেই সোনালি দিনের স্মৃতি রোমন্থন করেই সময় পার করছেন।

সিনিয়র শিল্পীদের কেন্দ্রীয় চরিত্রে কাস্ট করে এখনো সারা বিশ্বে অনেক সিনেমা নির্মিত হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ভারতে অমিতাভ বচ্চনকে মূল চরিত্রে রেখে গত কয়েক বছরে নির্মাণ হয়েছে একাধিক সিনেমা। এসব সিনেমা ব্যবসায়িক সাফল্যও পাচ্ছে। কলকাতায়ও সিনিয়রদের উপজীব্য করে প্রায়ই সিনেমা নির্মিত হতে দেখা যায়। কিন্তু বাংলাদেশে ব্যতিক্রম। শুধু নায়ক-নায়িকানির্ভর সিনেমাই তৈরি হয় এ ইন্ডাস্ট্রিতে।

অথচ এখানেও নব্বই দশকে নির্মিত হয় ‘বাবা কেন চাকর’ নামে একটি সিনেমা। যেখানে বাবা ছিল মুখ্য চরিত্র। এতে অভিনয় করেছিলেন নায়করাজ রাজ্জাক। সিনেমাটি এতটাই জনপ্রিয় হয় যে, পরবর্তী সময়ে কলকাতায় এর রিমেক করা হয়। সেখানেও সিনেমাটি সুপারহিট হয়। আড়াই দশক আগে কাজী হায়াৎ নির্মাণ করেন ‘আম্মাজান’ সিনেমা। এতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেন শবনম। এটিও ব্যাপক জনপ্রিয় হয়।

সিনেমার গল্প আসলে এগিয়ে যায় মুখ্য চরিত্রকে কেন্দ্র করেই। এখানে এ চরিত্রে কিশোর, তরুণ বা যুবক থাকতে হবে বিষয়টি এমন নয়। সিনিয়র শিল্পীদের মুখ্য চরিত্র করেও গল্প তৈরি করা সম্ভব। অথচ ঢাকাই সিনেমায় সিনিয়র শিল্পীদের নিয়ে কোনো নির্মাতাই ভাবছেন না। এসব শিল্পী জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত অভিনয়ের সঙ্গেই থাকতে চেয়েছেন। ক্যারিয়ারে এতটা বছর অভিনয়ের যে মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন, তাদের এ অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সিনেমা নির্মাণ করলে ফের প্রেক্ষাগৃহে দর্শক সমাগম বাড়বে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ প্রসঙ্গে দুঃখ প্রকাশ করে দর্শকনন্দিত অভিনেত্রী শাবানা এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘আমাদের এখানে সিনিয়রদের নিয়ে সিনেমা নির্মাণে কেউ ঝুঁকি নিতে চান না। এখন যারা নির্মাণে আসছেন তাদের মধ্যে গবেষণা বা বৈচিত্র্যের চিন্তাভাবনা তেমন নেই।’

বিষয়টি নিয়ে কিংবদন্তি অভিনেত্রী ববিতা বলেন, ‘নির্মাতারা নানা অজুহাত দেখিয়ে সিনিয়রদের নিয়ে কাজ করতে চান না। তারা বলেন, সিনেমার বাজার মন্দা। সিনিয়রদের মুখ্য চরিত্রে দিলে ব্যবসায়িক লোকসান হবে। কিন্তু এ কথাগুলো একদম ঠিক নয়। সিনেমা হচ্ছে গবেষণাধর্মী মাধ্যম। কিন্তু আমাদের দেশে গবেষণার কোনো বালাই নেই। এসব গতানুগতিক ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’

বিষয়টি নিয়ে সোহেল রানা বলেন, ‘কেন সিনেমা নির্মাণে সিনিয়রদের প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে না এটা নির্মাতারাই ভালো বলতে পারবেন। আমরা যখন কাজ করেছি, তখন নতুনত্ব খুঁজতাম। গল্পে ডাইমেনশন আনার চেষ্টা করতাম। কিন্তু এখন সেটা নেই। শিল্পীরা সিনেমা করতে আসতেন অর্থ ও সম্মান এ দুই কারণে। এখন এর কোনোটাই আর নেই। শিল্পীদের এখন কোথাও কোনো মূল্যায়ন তেমনভাবে করা হয় না। তাদের নিয়ে গল্পভাবনা নেই কারও মধ্যে। কীভাবে ব্যবসায়িক সাফল্য পাবে সেটাও গবেষণা করে না। এসব দেখে খুব কষ্ট হয়।’

সিনিয়ররা কেন উপেক্ষিত, এমন প্রশ্নে আলমগীর বলেন, ‘এখন মেধাসম্পন্ন লেখকের অভাব রয়েছে যারা সিনিয়রদের নিয়ে গল্প লিখবেন। এমন নির্মাতাও নেই যারা সিনিয়রদের নিয়ন্ত্রণ বা ডমিনেট করতে পারবেন। কারণ সিনিয়ররা তাদের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকে কোনো ভুল হলে তা শুদ্ধ করতে বলবেন। এ কারণে অনেকেই সাহস করতে পারেন না। তবে একে অন্যের প্রতি সম্মান দেখালে, এখনো সিনিয়রদের কাস্ট করে সিনেমা নির্মাণ করা সম্ভব।’

অভিনেতা উজ্জ্বল বলেন, ‘আমার ভেতরে যে শিল্পীসত্তা আছে, বা আমার যে ম্যাচিউরিটি সেখানে আমাকে উপস্থাপন করার মতো লোক নেই। আমাকে কেন্দ্র করে গল্প লিখবেন সে রকম গল্পকারও নেই, নির্মাতাও নেই। আমি তো চাই বলিউডের অমিতাভ বচ্চনের মতো গল্পের নায়ক হয়ে কাজ করি। কিন্তু কে বানাবে? আছে এমন কেউ? সেই অর্থে নেই বললেই চলে।’

অভিনেত্রী সুচন্দা বলেন, ‘গল্পে আসলে ডাইমেনশন খুব জরুরি। একটা সময় হলিউড-বলিউডের দর্শক যখন একই গল্পের সিনেমা দেখতে দেখতে বিরক্ত তখন শন কনারি, অমিতাভ বচ্চন, শ্রীদেবী, সৌমিত্রের মতো শিল্পীদের নিয়ে নতুন ডাইমেনশনে সিনেমা তৈরি শুরু হয়। নতুন কিছু পেয়ে দর্শক ফের নড়েচড়ে বসে। আমাদের দেশেও এ রকম কিছু একটা করা জরুরি। সিনিয়রদের কেন্দ্রীয় চরিত্র দিয়ে সিনেমা নির্মাণ করলে, আমার মনে হয় সিনেমার এ দুরবস্থার দ্রুত পরিবর্তন আসবে।’

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও সংবাদ