কৃষক লেকিন প্রামানিক ভালো ফলনের আশায় এবার আমন মৌসুমে প্রায় ২০ বিঘা জমিতে আতব ধান রোপণ করেছেন। কিন্তু তার সেই আশায় বাঁধ সাধে ব্লাস্ট রোগ। এই ব্লাস্ট রোগের কারণে ব্যাপকহারে ধানের শীষ মরে যাওয়ায় গত বছরের তুলনায় এবার আমন মৌসুমে তার চাষ করা ধানের জমিতে ফলন অর্ধেক হয়েছে।
নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার আনালিয়া খলিশাকুড়ি গ্রামের কৃষক লেকিন প্রামাণিকের মত এবার আমন মৌসুমে উপজেলার অনেক কৃষকদের আতব ধানে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণে ফলনে চরম বিপর্যয় ঘটেছে। যার ফলে গত বছরের তুলনায় এবার আতব ধানে ফলন অর্ধেকে নেমে এসেছে।
উপজেলা কৃষি বিভাগ বলছে, একই জাতের ধান বার বার চাষ (রোপণ) করলে ওই ধানের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। তাই ভালো ফলন পেতে হলে ধানের জাত পরিবর্তনের পরামর্শ দিয়েছেন কৃষকদের।
ভুক্তভোগী কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ধান রোপণের শুরুতে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধান গাছ বেশ ভালো হয়েছিল। কিন্তু ধানের শীষ বের হওয়ার পর থেকেই (ব্লাস্ট রোগ) শীষ মরা রোগ দেখা দেয়। শীষ মরা প্রতিরোধে বিভিন্ন কোম্পানির ওষুধ ছিটিয়েও কোনো ফল হয়নি।
তাদের ভাষ্যমতে- চাষকৃত আতব ধানের শীষ সব চাইতে বেশি মরেছে। তবে অন্যান্য জাতের ধানের শীষ তুলনামূলকভাবে কম মরেছে।
কৃষকরা বলছেন, যেখানে প্রতি বছর আতব ধান বিঘাপ্রতি ১২ থেকে ১৬ মন হারে ফলন হয়েছে, সেখানে এ বছর মাত্র ৮ থেকে ৯ মন ফলন হচ্ছে। ব্যাপক হারে ধানের শীষ মরে যাওয়ায় প্রতি বছরের গড় এবার ফলন অর্ধেক হচ্ছে। এতে করে চরমভাবে লোকসানে পরেছেন কৃষকরা।
উপজেলার আনালিয়া খলিশাকুড়ি গ্রামের কৃষক লেকিন প্রামানিক জানান, ফলন ও ভালো দাম পাওয়া যাবে আশা করে প্রায় ২০ বিঘা জমিতে আতব ধান রোপন করেছি। এরই মধ্যে প্রায় ১১ বিঘা জমির ধান কাটা হয়েছে। কিন্তু ব্লাস্ট রোগে ব্যাপক হারে শীষ মরে যাওয়ায় বিঘাপ্রতি ৮ থেকে ৯ মন হারে ধানের ফলন হচ্ছে।
কালীগ্রাম খন্দকারপাড়া গ্রামের কৃষক মো. জয়নাল খন্দকার জানান, এবার প্রায় ১১ বিঘা জমিতে আতব ধান রোপণ করেছেন। ব্লাস্ট রোগের আক্রমণে ধানের শীষ মরে গেছে। ওষুধ ছিটিয়েও কোন লাভ হয়নি। বিঘাপ্রতি হয়ত ৫ থেকে ৬ মন হারে ধানের ফলন হতে পারে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে গেছে, চলতি আমন মৌসুমে উপজেলা জুড়ে ১৮ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করেছেন কৃষকরা। এর মধ্যে ধানী গোল্ড, বিনা-১৭, ব্রি ধান-৪৯, ব্রি ধান-৯০, স্বর্ণা এবং আতব ও চিনি আতব ধান চাষ করেছেন।
কৃষি অফিসের তথ্যমতে, কৃষকরা ব্রি-৩৪ জাতের আতব ধান চাষ করেছেন প্রায় ৭ হাজার ৫৪০ হেক্টর এবং চিনি আতব ধান চাষ করেছেন ১৩৩ হেক্টর জমিতে।
রাণীনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারজানা হক বলেন, আতব ধান ছাড়া অন্যান্য ধানের তেমন কোন সমস্যা হয়নি। কিন্তু ব্রি-৩৪ জাতের আতব ধানের শীষ মরে যাওয়ায় ফলন অনেকটা কমে গেছে।
তিনি আরও বলেন, এই জাতের ধান কৃষকরা দীর্ঘ সময় ধরে চাষ করে আসছেন। একই জাতের ধান বার বার একই জমিতে চাষ করলে ওই ধানের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। তাই ভালো ফলন পেতে হলে ধানের জাত পরিবর্তনের জন্য কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছেন।