সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের সমর্থন করায় নানা সময় সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে তুরস্ককে। তবুও পিছপা হয়নি তুরস্ক। নানা প্রতিকূলতা সত্যেও সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদ সরকার বিরোধীদের সমর্থন দিয়ে গেছে দেশটি। অবশেষে সেই সাফল্যটাও পেয়েছে তারা। শেষ পর্যন্ত বিদ্রোহীদের চাপে ক্ষমতা ছেড়ে দেশত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন প্রেসিডেন্ট আসাদ।
স্বাভাবিকভাবেই তাই প্রশ্ন উঠেছে সিরিয়ায় আসদের পতনের পর তুরস্কের পরবর্তী ভূমিকা নিয়ে। তার আগে জেনে নেওয়া যাক কীভাবে মাত্র ১২ দিনের ব্যবধানে সিরিয়ায় প্রবল প্রতাপশালী বাশার আল আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে বিদ্রোহীরা।
এক্ষেত্রেও আছে তুরস্কের ভূমিকা। সমগ্র বিশ্ব যখন ইসরাইল-ফিলিস্তিন, ইসরাইল-হিজবুল্লাহ, ইরান, এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ নিয়ে ব্যতিব্যস্ত; সেই সময়টাকেই কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছে বিদ্রোহীরা। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রেও চলছে ক্ষমতার পালাবদল। যে কারণে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও সদ্য বিদায় নিতে চলা জো বাইডেন আছেন নিজের ক্ষমতা গুঁটিয়ে নেওয়ার পথে। আর এই সুযোগটাই লুফে নিয়েছে বিদ্রোহীরা।
একরকম অসম্ভব কাজকে সহজ করেছে মাত্র ১২ দিনের ব্যবধানে। বিদ্রোহীরা এত দ্রুত সাফল্য পাবে সেটা কল্পনা করতে পারেনি তুরস্কও। তুর্কি কর্মকর্তারা গত মাসে আসাদ ও ইরানি মিত্রদের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) এর সঙ্গে যুক্ত সিরিয়ার সশস্ত্র বিরোধী দলগুলোকে সীমিত অভিযানের অনুমতি দিলেও আকস্মিক আলেপ্পো দখলের কোনো পূর্বাভাস দিতে পারেনি।
আক্রমণের পর তুরস্ক বারবার সিরিয়ার সরকার এবং বিরোধী বাহিনীর মধ্যে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে। রাষ্ট্রের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছে। কিন্তু এইচটিএস নেতা আবু মোহাম্মদ আল জুলানি সরকার বিরোধী আন্দোলন চালিয়ে গেছেন। আর শেষ পর্যন্ত সফল হয়েছেন।
তবে সিরিয়ার বিপ্লবী ও বিরোধী বাহিনীর জাতীয় জোটের সাবেক সভাপতি খালেদ খোজা বিশ্বাস করেন, অভিযানের শুরু থেকেই তুরস্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তার মতে, ‘এটি একটি খুব নির্বীজ বিপ্লব ছিল। অপারেশনের সূচনা থেকে শুরু করে স্থানীয় অনুশীলন, প্রতিটি পদক্ষেপে তুরস্কের প্রভাব স্পষ্ট।’
অবশ্য এমন ইঙ্গিত তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান গত অক্টোবরেই দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, শিগগিরই একটি সুসংবাদ আসবে যা তুরস্কের দক্ষিণ সীমান্তের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।’
তবে বাশার আল আসাদকে সরালেও বিদ্রোহী নেতা জুলানির কাজটা যে কঠিন সেটা মনে করিয়ে দিয়েছেন খোজা। তার মতে, জুলানির অনেক কাজ – যেমন একটি ক্রান্তিকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা করা এবং জাতীয় শান্তি ও পুনর্মিলনকে উন্নীত করা।
এদিকে আঙ্কারা-ভিত্তিক SETA থিঙ্ক ট্যাঙ্কের আঞ্চলিক বিশেষজ্ঞ ক্যান একুন জোর দিয়েছেন সিরিয়া গঠনে তুরস্কের ভূমিকার ওপর। তার মতে, সিরিয়ায় আঙ্কারার দুটি প্রধান অগ্রাধিকার রয়েছে: ইদলিব থেকে দেইর ইজোর পর্যন্ত অঞ্চলজুড়ে পরিচালিত সিরিয়ার বিভিন্ন সশস্ত্র বিরোধী গোষ্ঠীর মধ্যে পুনর্মিলন সহজতর করা এবং একটি অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করা যা দেশের সব রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিত্ব করে।
সেই সঙ্গে একুন জানিয়েছেন, তুরস্ক ইতোমধ্যেই ইসলামিক স্টেট গ্রুপ এবং কুর্দি বাহিনীর বিরুদ্ধে তার অভিযানের পর উত্তর সিরিয়ায় একটি শাসন মডেল তৈরি করেছে। আর এই মডেলের মধ্যে রয়েছে সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকার, সিরিয়ান ন্যাশনাল আর্মি, অ্যাসেম্বলি ভিত্তিক স্থানীয় শাসন, এবং একটি সমন্বিত স্থানীয় অর্থনীতি। তবে তার মতে, তুরস্ক সিরিয়ায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনে সরাসরি ভূমিকা রাখবে।
সিরিয়ায় ক্রান্তিকালীন সরকারকে শক্তি সংস্থা, পানি সরবরাহ, কৃষিক্ষেত্রে সহায়তা, জ্বালানী সহায়তা, ৩ মিলিয়ন শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তন ও তাদের কর্মসংস্থান, বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানাগুলো পুনরায় চালু করা ও অর্থ সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতেও তুরস্ককে ভূমিকা রাখতে হবে।