ভারতের উত্তরপ্রদেশের ফতেহপুরে ১৮০ বছরের একটি পুরনো মসজিদের একাংশ বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে দেশটির স্থানীয় প্রশাসন।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) সকালে ফতেহপুর জেলার লালৌলি শহরের সদর বাজারে অবস্থিত নূরী জামে মসজিদের পিছনের অংশটি বুলডোজার দিয়ে ভেঙে ফেলা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) অবিনাশ ত্রিপাঠি এবং এএসপি বিজয়শঙ্কর মিশ্রের নেতৃত্বে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। অভিযানের সময় ভারী পুলিশ বাহিনী ও অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হয়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্ট ফতেহপুরের নূরী মসজিদ কমিটিকে একটি নোটিশ জারি করেছিল। নোটিশে বলা হয়, ড্রেন নির্মাণে মসজিদের পেছনের অংশ বাধা সৃষ্টি করেছে। মসজিদ কমিটি এ জন্য এক মাস সময় চেয়েছিল। কিন্তু সে সময় দেওয়া হয়নি।
মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি সৈয়দ নূরী বলেন, এলাহাবাদ হাইকোর্টে দায়ের করা রিটের শুনানি ১৩ ডিসেম্বর হলেও প্রশাসন তার আগেই ব্যবস্থা নিয়েছে ।
এদিকে, এএসপি বিজয়শঙ্কর মিশ্র বলেছেন, নিয়ম অনুযায়ী এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং শান্তি শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
আর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ত্রিপাঠি দাবি করেন, মসজিদ কমিটি উচ্চ আদালতে কিছু পিটিশন দাখিল করেছে কিন্তু এটি এখনও শুনানির জন্য তালিকাভুক্ত করা হয়নি। একাংশ ভেঙে ফেলা হলেও মসজিদের মূল ভবন অক্ষত রয়েছে।
ত্রিপাঠির মতে, পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্ট (পিডব্লিউডি) রাস্তার উপর দখল করে নির্মিত কাঠামোগুলো অপসারণের জন্য আগস্ট মাসে দোকানদার, বাড়ির মালিক এবং মসজিদ কমিটিসহ ১৩৯ জনকে নোটিশ জারি করেছিল। পিডব্লিউডি রাস্তা মজবুত ও ড্রেন নির্মাণের জন্য কাজ শুরু করার জন্য দখল অপসারণে এই উদ্যোগ নিয়েছে।
২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল বিজেপি সচেতনভাবে ধর্মীয় বিভেদ এবং মুসলিম ও ইসলাম বিদ্বেষী বিভিন্ন ন্যারেটিভ চালু করে সেগুলোকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করে চলেছে।
ভারতে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মুসলিম বাস করেন যে রাজ্যে, সেটি উত্তরপ্রদেশ। নরেন্দ্র মোদি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় থেকেই সেখানে মুসলিমবিদ্বেষের রাজনীতি প্রবলভাবে বাড়তে থাকে।
গত কয়েক বছর ধরে মুসলিমদের টার্গেট করেই বাড়িঘর বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দিয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ। এক হিসেবে বিজেপি উত্তর প্রদেশের মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।
এ অঞ্চলের মানুষ যাতে কোনরকম নাগরিক সুযোগ-সুবিধা না পায় তা নিশ্চিত করতে পৌর প্রশাসন ও পঞ্চায়েতকে চাপ দিয়ে আসছে রাষ্ট্রযন্ত্র। সেখানে ঘৃণার রাজনীতি আমদানি ঘটিয়ে সামাজিক বিভাজনের ভেতর দিয়ে মুসলিমদের একঘরে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে বিজেপি।