বিগত পাঁচ বছরে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) আয় বেড়েছে ৮১ শতাংশ। আয়ের বিপরীতে ব্যয় বেড়েছে ১৫৯ শতাংশ। আয় ও ব্যয়ের এ ঘাটতি মেটাতে বিদ্যুৎ খাতে সরকারের ভর্তুকিবাবদ ব্যয় বেড়েছে ৪১৫ শতাংশ।
সক্ষমতার তুলনায় গত কয়েক বছরে বিদ্যুতের উৎপাদন বেড়েছে মাত্র ৩৫ শতাংশ। অথচ উৎপাদন ব্যয় বেড়ে হয়েছে আড়াইগুণ। এ ব্যয় দ্রুত বাড়লেও সে তুলনায় কম হারে বেড়েছে বিদ্যুতের বিক্রয়মূল্য। ফলে পিডিবির আয়ে ও ব্যয়ে তৈরি হয়েছে অসামঞ্জস্য। ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রিতে পিডিবির লোকসান ছিল এক টাকা এক পয়সা। গত অর্থবছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে চার টাকা ১৪ পয়সা।
পিডিবির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ছিল ১৮ হাজার ৯৬৬ মেগাওয়াট। ওই অর্থবছরে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল (আমদানিসহ) ছয় হাজার ৯৪১ কোটি ১৫ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। এতে ব্যয় হয় ৪০ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা। এর সঙ্গে পরিচালন ও অন্যান্য ব্যয় যোগ করে ওই অর্থবছরে পিডিবির মোট ব্যয় দাঁড়ায় ৪২ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। বিদ্যুৎ বিক্রিসহ অন্যান্য খাত মিলিয়ে পিডিবির মোট আয় ছিল ৩৫ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা।
এ হিসাবে ২০১৯-২০ অর্থবছরে পিডিবির লোকসান দাঁড়ায় আট হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা। সেই ঘাটতি মেটাতে সরকার ভর্তুকি দেয় সাত হাজার ৪৩৯ কোটি টাকা। ওই অর্থবছরে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় ব্যয় পড়ে পাঁচ টাকা ৮৫ পয়সা। তবে, সেই বিদ্যুৎ বিক্রির পাইকারি (বাল্ক) মূল্যহার ছিল চার টাকা ৮৪ পয়সা। এতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রিতে পিডিবির লোকসান ছিল এক টাকা এক পয়সা। যদিও পরের অর্থবছরে সরকার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে দেয়। তবে, ব্যয় বৃদ্ধির হার ছিল তার চেয়েও বেশি। ফলে লোকসান আর কমেনি।
পরের অর্থবছরে (২০২০-২১) দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা বেড়ে দাঁড়ায় ২২ হাজার ৩১ মেগাওয়াট। ওই অর্থবছরে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল (আমদানিসহ) সাত হাজার ৮৫২ কোটি ৫৬ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। এতে পিডিবির মোট ব্যয় হয় ৪৯ হাজার ২৩৭ কোটি টাকা। এর সঙ্গে পরিচালন ও অন্যান্য ব্যয় যোগ করে ওই অর্থবছরে পিডিবির মোট ব্যয় দাঁড়ায় ৫৩ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা। আর বিদ্যুৎ বিক্রিসহ অন্যান্য খাত মিলিয়ে পিডিবির আয় ছিল ৪১ হাজার ৭৯৮ কোটি টাকা। এ হিসাবে ২০২০-২১ অর্থবছরে আয় বেড়েছে ছয় হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা বা ১৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। তবে, ব্যয় বেড়েছে ১০ হাজার ৬৪২ কোটি টাকা বা ২৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
ওই অর্থবছরে পিডিবির লোকসান দাঁড়ায় ১১ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা। তবে, ওই বছরে বেশি ভর্তুকি দেওয়া হয়, যার পরিমাণ ছিল ১১ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা। ওই সময় বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ছয় টাকা ২৭ পয়সা। তবে, সেই বিদ্যুৎ বিক্রির পাইকারি (বাল্ক) মূল্যহার ছিল পাঁচ টাকা ১৭ পয়সা। অর্থাৎ প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রিতে পিডিবির লোকসান ছিল এক টাকা ১০ পয়সা।